Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
তিনশো ছাত্রের শিক্ষক তিন জন

পড়তে চেয়ে রাস্তা অবরোধে পড়ুয়ারা

এমন প্রতিবাদ দেখে কিছুটা হলেও টনক নড়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের। প্রতিশ্রুতি মিলেছে ওই স্কুলে শিক্ষক দেওয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, ‘‘সিউড়ি সদর সেন্ট্রাল সার্কেলে বহু স্কুলে পড়ুয়াদের অনুপাতে শিক্ষক বেশি। তেমন স্কুল থেকে শিক্ষক তুলে ওই স্কুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। সেটা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই।’’

আর্জি: সিউড়ির বড় ডাকঘর মোড়ে নিয়মিত ক্লাসের দাবিতে বিক্ষোভ। বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

আর্জি: সিউড়ির বড় ডাকঘর মোড়ে নিয়মিত ক্লাসের দাবিতে বিক্ষোভ। বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০০:১৯
Share: Save:

তিনশোরও বেশি পড়ুয়ার জন্য শিক্ষিকা রয়েছেন তিন জন। পড়ুয়া-শিক্ষিকার এমন অসম অনুপাতে এমনিতেই পঠন-পাঠন ব্যহত হয়। অসুস্থতা কিংবা ব্যক্তিগত কাজে শিক্ষিকাদের কেউ ছুটি নিলে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়। কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের নয়, এ ছবি জেলা সদর সিউড়ির। সিউড়ি পি অ্যান্ড চন্দ্রগতি মুস্তাফি মেমোরিয়াল হাইস্কুল চত্বরে চলা সিউড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দীর্ঘ দিনের অচলাবস্থা কাটাতে বুধবার পথে নামলেন অভিভাবক ও পড়ুয়ারা।

এ দিন সিউড়ি বড় পোস্টঅফিস মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন অভিভাবকরা। পড়তে চেয়ে মা-বাবা, দাদুদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে সামিল হয় খুদে পড়ুয়ারাও। অভিভাবকদের ক্ষোভ, মাস কয়েক আগে রাজ্যে এত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হল। তাঁদের কাউকে কেন এখানে দেওয়া হল না? এ ভাবে কী স্কুল চলে?

এমন প্রতিবাদ দেখে কিছুটা হলেও টনক নড়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের। প্রতিশ্রুতি মিলেছে ওই স্কুলে শিক্ষক দেওয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, ‘‘সিউড়ি সদর সেন্ট্রাল সার্কেলে বহু স্কুলে পড়ুয়াদের অনুপাতে শিক্ষক বেশি। তেমন স্কুল থেকে শিক্ষক তুলে ওই স্কুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। সেটা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই।’’

স্কুল ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শতাব্দী প্রাচীন সিউড়ি পি অ্যান্ড চন্দ্রগতি মুস্তাফি মেমোরিয়াল হাইস্কুল চত্বরে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে। একটি স্কুলের নিজস্ব ভবন রয়েছে। অন্যটির অর্থাৎ সিউড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নেই। তাই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের খান চারেক ঘরে সকালেই চলে স্কুল। সময় সকাল ৬টা থেকে সাড়ে দশটা। শুধু নিজস্ব ভবন না থাকাই নয়, ৩০২ জন পড়ুয়ার ওই সরকারি প্রাথমিক
স্কুলের মূল সমস্যা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব। নিয়ম অনুসারে, প্রতি ৩৫টি শিশুর জন্য এক জন করে শিক্ষক ধরলে দশ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন। অথচ স্কুলে রয়েছেন মাত্র তিন শিক্ষিকা। এমনিতেই অসুবিধা হয়।

বুধবার গিয়ে দেখা গেল, স্কুলে একা রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুজাতা বাদ্যকর। বাকি দুই শিক্ষিকার এক জন দিন কয়েক আগে থেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ছুটি নিয়েছেন। অন্য জন তাঁর সন্তানের অসুস্থতার কারণে এ দিন স্কুলে আসতে পারেননি। ফলে শিক্ষকের অভাবই যে মূল সমস্যা, সেটা মেনেছেন টিআইসি সুজাতাদেবীও। তিনি বলছেন, ‘‘কেউ ছুটিতে তো থাকতেই পারে। কিন্তু, একার পক্ষে চারটি ক্লাসের এত ছেলেমেয়ের পঠনপাঠন চালানো খুবই কষ্টকর। বিষয়টি নিয়ে বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু, শিক্ষক পাইনি।’’

অভিভাবক অসীম রায়চৌধুরী, অনিমা দাস, অজিত মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই এমন অচলাবস্থা চলছে। এত কম শিক্ষক দিয়ে কী স্কুল চালানো যায়? ছেলেমেয়েরাই বা কী শিখবে?’’ অনেক দিন এমনও হয়েছে, শিক্ষিকার অভাবে বাধ্য হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই পড়ুয়াদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকেরা এসে দেখেছেন স্কুলের বাইরে চুপচাপ বসে রয়েছে বাচ্চারা। অথচ, একই স্কুল চত্বরে থাকা অন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই সমস্যা নেই। ওই স্কুলে রয়েছেন ৯ জন শিক্ষিক-শিক্ষিকা। সেখানকার অতিরিক্ত শিক্ষক এই স্কুলে দিতে অসুবিধে কোথায়, প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকেরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ অবশ্য আজ, বৃহস্পতিবারই স্কুলে শিক্ষক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিন্তু অভিভাবক, পড়ুয়ার পথে নামার আগে কেন সেই সমস্যার সমাধান করা হল না, সেই প্রশ্নের কোনও
উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Class
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE