Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বাগানের আনাজে চলে মিড-ডে মিল, কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়ালে আছে ভেষজ বাগানও

স্কুলের পরিবেশ পাল্টে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার

সোমবার সকালে ডাক যোগে তাঁর কাছে এসেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের চিঠি। চিঠিতে জানানো হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে শংসাপত্র-সহ ৫০ হাজার টাকার চেক তাঁর হাতে তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি।

সফল: শিক্ষকের সাফল্যে খুশি পড়ুয়ারাও। নিজস্ব চিত্র

সফল: শিক্ষকের সাফল্যে খুশি পড়ুয়ারাও। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

স্কুলের পরিবেশ মনে ধরেনি। তাই শুরু থেকেই চেষ্টা ছিল পাল্টানোর। লক্ষ্যে পৌঁছতে সেই ২০০০ সাল থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। সাহায্য পেয়েছেন সহকর্মী, পড়ুয়া এবং এলাকাবাসীর থেকেও। সফলও হয়েছেন। তারই স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল অ্যান্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ ভট্টাচার্য।

সোমবার সকালে ডাক যোগে তাঁর কাছে এসেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের চিঠি। চিঠিতে জানানো হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে শংসাপত্র-সহ ৫০ হাজার টাকার চেক তাঁর হাতে তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি। খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছেন তাঁর সহকর্মী, পড়ুয়া এবং এলাকাবাসী।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণবাবু সিউড়ি শহর লাগোয়া কড়িধ্যার স্কুলে যখন যোগ দেন তখন দুটি মূল সমস্যা ছিল। এক, স্কুলের পরিবেশ। সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্কুলের মধ্যে দিয়েই ছিল চলাচলের পথ। এবং নীচু জায়গাটি এলাকাবাসীর শৌচকর্ম করার জায়গা হিসাবেই চিহ্নিত ছিল। দ্বিতীয়ত, মফস্সলের ওই স্কুলে পড়ার চেয়ে সিউড়ি শহরের স্কুলে ভর্তি হওয়ার হিড়িক অনেক বেশি ছিল পড়ুয়াদের মধ্যে। বিজ্ঞানের শিক্ষক কল্যাণবাবু নিজের গবেষণার বিষয়কে সম্বল করেই কাজ শুরু করেন। ওঁর গবেষণার বিষয় ছিল কী করে লাল মাটির উর্বরতা বাড়ানো যায়। প্রথমেই তিনি স্কুলের মধ্যে বাগান তৈরির ভাবনা নেন। ভেষজ বাগান। একাঙ্গী, বৃহতী, চার রকমের তুলসি, মেরাশিঙ্গি, অনন্তমূল, লিপস্টিক ট্রি, ঘৃতকুমারী, বড় এলাচ, লবঙ্গ, পিপুল, দুধিয়াস, কলিয়া, বাসক আমলকি-হরিতকি, বহরা-র মতো ১০০টি ভেষজ গাছ নিয়ে তৈরি বাগানটি এখন স্কুলের সম্পদ।

বাগান তৈরির কাজে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে পড়ুয়ারা। জেলাশাসকও সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে শুধু ভেষজবাগান নয়। স্কুলে পড়ে থাকা সাত বিঘে জমিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে সব্জিবাগান। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে ছাই দূষণ ছড়ায়, সেটা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ভেষজ বাগান গড়তে প্রয়োজন ছিল সারের। সেই ভাবনা থেকে স্কুলেই কেঁচো সার তৈরি শুরু। ছাইয়ের চরিত্র বদলাতে সেই পদ্ধতিকে কাজে লাগান প্রধান শিক্ষক। এখন বাগানে উৎপাদিত আনাজ কাজে লাগে মিড-ডে মিলে। পুষ্টির উপাদান বাড়াতে স্কুলের মধ্যেই ঝিনুক, মাশরুমের চাষ শুরু হয়েছে বহু আগেই।

প্রধান শিক্ষককের এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জুড়তে পারে স্কুলের প্রতি দায়বদ্ধাতা, ভালবাসা তৈরি হতে থাকে পড়ুয়াদের। এগিয়ে আসে পঞ্চায়েত, সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতি, এলাকার মানুষও। বেসরকারি এবং সরকারি সাহায্যও মিলেছে প্রচুর। বর্তমানে পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা গড়ে গিয়েছে কলকাতার একটি স্বর্ণবিপণি। স্কুলে সৌরবিদ্যুৎ বসেছে।

শুধু পরিবেশ নয়, পঠনপাঠনেও এগিয়েছে স্কুল। গত বছর যুব সংসদ প্রতিযোগিতায় জেলার সেরা স্কুল এটিই। কলা উৎসবে ভাদু গানে জেলার সেরা কড়িধ্যা যদুরায়। প্রতিটি কাজের পিছনেই প্রধান শিক্ষক। পুরস্কার প্রাপ্তির খবর চাউর হতেই প্রধান শিক্ষককে সংবর্ধিত করেন সহ শিক্ষকেরা। ছুটে আসেন প্রাক্তনীরাও। দ্বাদশ শ্রেণির ওহিদা খাতুন, রাজীব পাল, দশম শ্রেণির সুপ্রীতি ভাণ্ডারী, জয়দেব পালরা বলছেন, ‘‘স্যারের জন্যই স্কুল এই উচ্চতায়। উনি জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন এর থেকে খুশির আর কিছু হতে পারে না।’’ সহ শিক্ষক তপন বিশ্বাস, শিক্ষিকা মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে আমরাও পুরস্কৃত হলাম।’’

পুরস্কারের অর্থ স্কুলের উন্নয়েনেই খরচ করবেন, জানিয়েছেন কল্যাণবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সিউড়ি শহরের স্কুলগুলোর সঙ্গে কোথাও একটা অসম লড়াই ছিল। স্কুলের পরিবেশ উন্নত হওয়ায় সেটা ব্যবধান কিছুটা হলেও ঘুচেছে। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে পড়ুয়া, সহকর্মীদের আত্মরিকতা ও সহযোগিতায়। পুরস্কারটাও সবারই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE