Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মা নেই, বুঝছে না শিশু হৃষিকেশ

বাবা থানার লকআপে বন্দি। থানার চাতালে নিথর পড়ে মায়ের দেহ। আর থানার সামনে গাছতলায় আত্মীয়দের কোলে হাত পা ছুঁড়ে খেলে চলেছে ন’মাসের হৃষিকেশ।বৃহস্পতিবার রাতে রাজগ্রামের শ্বশুরবাড়িতে রূপালি লোহর ঝুলন্ত দেহ দেখা যায়।

স্নেহ: নিহতের শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছেন এক পড়শি। নিজস্ব চিত্র

স্নেহ: নিহতের শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছেন এক পড়শি। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৩
Share: Save:

বাবা থানার লকআপে বন্দি। থানার চাতালে নিথর পড়ে মায়ের দেহ। আর থানার সামনে গাছতলায় আত্মীয়দের কোলে হাত পা ছুঁড়ে খেলে চলেছে ন’মাসের হৃষিকেশ।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজগ্রামের শ্বশুরবাড়িতে রূপালি লোহর ঝুলন্ত দেহ দেখা যায়। বধূর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, তাঁকে পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে। থানায় কাগজে কলমে সেই অভিযোগই দায়ের করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল রূপালির শিশুপুত্র হৃষিকেশ।

চোখের জল মুছতে মুছতে রূপালির মা চন্দনা দাস বলেন, “বিয়ের পরে প্রথম সন্তান তিন মাসের মধ্যেই মারা গিয়েছিল। দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পরে মেয়েটার মুখে হাসি ফুটেছিল। ছেলেটিকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসত। সেই আদরের ছেলেটাই আজ অসহায় হয়ে গেল।”

চাঁপা বলেন, “দিদির কাছে নিজের ছেলের আগে কিছু ছিল না। ওকে একা ফেলে রেখে দিদি আত্মহত্যা করবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। ওকে পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে।” হৃষিকেশকে নিজেদের দায়িত্বেই রেখেছে রূপালির বাপের বাড়ির লোকজন।

এ দিন শ্যামডাঙার অলিতে গলিতে আলোচনা চলেছে লোহ পরিবার নিয়েই। এলাকার বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে রাজগ্রামের নাপিতপাড়ায় ছোট্ট একটি ঘরে টানাটানির মধ্যেই থাকতেন বিদ্যুৎরা। সেই সময়েই বিদ্যুতের দাদা নরহরির স্ত্রীর অপমৃত্যু হয়। বছর তিনেক আগে শ্যামডাঙায় জায়গা কিনে বিরাট বাড়ি বানান।

কী ভাবে অবস্থার এই পরিবর্তন হল তা নিয়েও শোনা গিয়েছে নানা জল্পনা। এখন রাজগ্রাম বাজারে লোহ পরিবারের একটি সোনা-রুপোর গয়নার দোকান আর একটি জুতো ও কাপড়ের দোকানও রয়েছে। এলাকার অনেকেই এ দিন বলেন, ‘‘ওই পরিবারে বধূহত্যা রুটিন হয়ে যাচ্ছে। ওদের কড়া শাস্তি হওয়া দরকার।’’

বধূর মৃত্যু নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। স্বামী-সহ চার জনকে আটকও করা হয়েছে। কিন্তু অন্য একটি বিষয়ে দায় এড়াতেও শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি— এ দিন রূপালির শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর চালালো কারা? স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এলাকার কেউ ভাঙচুর চালায়নি। ছাতনা থেকে রূপালির বাপের বাড়ির লোকজন নাকি গাড়ি বোঝাই করে কয়েকশো লোক এনেছিলেন। তাঁরাই যা করার করেছে।

তবে সেই কথা মানতে চাননি রূপালির বাপের বাড়ির লোকজন। তাঁরা জানান, পরিবারের সদস্যরাই শুধু খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে এসেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Child Death Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE