বাবার সঙ্গে বাড়িতে রাশি।
ভাইফোঁটা। সকাল থেকেই গমগম করছিল বাড়ি। আমাদের পাঁচ বছরের মেয়ে সমাদ্রিতা। ডাকনাম রাশি। আনন্দে ফুটছিল ও। বায়না ধরেছিল, মেলায় নিয়ে যেতে হবে। বিকেলের দিকে সবাই যখন ফাঁকা হলাম, খুব ক্লান্ত লাগছিল। কিন্তু মেয়েটার আব্দার ফেলতে পারনি। আমার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা আর বেরোতে চাইছিলেন না। মেয়েকে নিয়ে একাই গেলাম মেলায়।
কিছুটা ঘোরাঘুরি করে মেয়ের চোখে পড়ল জাম্পিং প্যাড। মস্ত বড় মিকি মাউসের মতো দেখতে। বায়না ধরল, ওতে চড়বে। তা-ই সই। কিন্তু সেই আনন্দ যে এক লহমায় সমস্ত কিছু ওলটপালট করে দেবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। ওকে জাম্পিং প্যাডে তুলে আমি দাঁড়িয়েছিলাম পাশেই। হঠাৎ সেটা উল্টে জলে আছড়ে পড়ল।
দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে আমি ঝাঁপিয়ে পড়ি জলের মধ্যে। আশপাশের অনেকও নেমে পড়েন। জল আমার প্রায় বুক পর্যন্ত। প্রায় সমস্ত বাচ্চাই ডুবে গিয়েছিল। এক এক করে তাদের উঠিয়ে নিয়ে আসা শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশকর্মীরাও নেমে পড়েন নালায়।
ওই অন্ধকারে আমি অনেকগুলি শিশুকে উদ্ধার করলাম। কিন্তু রাশিকে পাচ্ছিলাম না। ওর নাম ধরে হাউহাউ করে কাঁদছি আর জলের মধ্যে ছুটে বেড়াচ্ছি। পকেটে ফোন ছিল। সেটাও ভিজে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত উঠে এসে এক জনের থেকে ফোন চেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। কথা বলতে পারিনি। কাঁদছিলাম।
তখন একজন বলেন, ‘‘সামনের একটা খাবারের দোকানে কয়েকটা বাচ্চাকে উদ্ধার করে রাখা হয়েছে। ওখানটায় গিয়ে দেখুন না একটিবার।’’ ছুটে যাই। রাশিকে দেখে ধড়ে প্রাণ ফিরে আসে।
প্রিয়াঙ্কাও হন্যে হয়ে আমাদের খুঁজছিল মেলায়। ওর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। রাশিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।
মেয়েটা আতঙ্কে ঘুমের মধ্যেই চিৎকার করে উঠছিল। সারাটা রাত আমরাও দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। একটা সময়ে নিজেকেই বোঝাচ্ছিলাম, সকাল হলে ঘুম ভেঙে দেখব পুরোটাই দুঃস্বপ্ন ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy