Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রের প্রাণ বাঁচিয়ে ডুবে মৃত্যু শিক্ষকের

এ দিন তাঁর বাড়িতেই পড়ছিল শ্যামপুর হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাগর হালদার ও শ্রীদীপ চট্টোপাধ্যায়। মনোজিতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই ছাত্র মনোজিৎ-এর কাছে দামোদরে মাছ ধরতে যাওয়ার আবদার করে। মনোজিৎ তাদের নিয়ে নদে যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০৭:১০
Share: Save:

ছাত্রদের আবদারে দামোদর নদে তাদের নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন গৃহশিক্ষক। জলে নেমেই ঘটল বিপদ। পা হড়কে এক ছাত্র হাবুডুবু খেতে থাকে নদের গর্তে। কোনও মতে ছাত্রটিকে টেনে সেই গর্ত থেকে তুলতে পারলেও সেই শিক্ষক নিজে তলিয়ে গেলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বহু চেষ্টায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো গেল না।

বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় শোকের ছায়া পড়েছে বড়জোড়ার মানাচরে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ওই গৃহশিক্ষক মনোজিৎ মিস্ত্রি (২৮) বড়জোড়ার মাঝের মানা এলাকার পল্লিশ্রী কলোনির বাসিন্দা। নিজের বাড়িতেই স্থানীয় ছেলেদের পড়াতেন তিনি।

এ দিন তাঁর বাড়িতেই পড়ছিল শ্যামপুর হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাগর হালদার ও শ্রীদীপ চট্টোপাধ্যায়। মনোজিতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই ছাত্র মনোজিৎ-এর কাছে দামোদরে মাছ ধরতে যাওয়ার আবদার করে। মনোজিৎ তাদের নিয়ে নদে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঠিক যেখানে মনোজিৎ তাঁর ছাত্রদের নিয়ে মাছ ধরতে নেমেছিলেন, সেখানে হাঁটু জল হলেও ওই এলাকায় একটি বড় গর্ত রয়েছে। মাছ ধরতে নেমে প্রথমে বেসামাল হয়ে শ্রীদীপ সেই গর্তে পড়ে যায়। মনোজিৎ তাকে হাত ধরে টেনে তুলে উদ্ধার করে। তার পরে কোনও ভাবে মনোজিৎ নিজেই ওই গর্তে পা হড়কে পড়ে যান। মনোজিৎ সাঁতার জানতেন না। জলের বেগও ছিল। মুহূর্তের মধ্যে তিনি জলে তলিয়ে যান।

ভয় পেয়ে শ্রীদীপ ও সাগর চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে। তাদের কান্না শুনে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তাঁরা জলে নেমে মনোজিৎকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টার পরে মনোজিৎকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন দুর্গাপুরের বিধাননগর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মনোজিতের মৃত্যু হয়েছে।

এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। ছেলেকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন মনজিতের বাবা মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও মা আরতিদেবী।

মনোরঞ্জনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘ছেলে নেই এটা ভাবতেই পারছি না। তবে আমার ছেলে নিজে মরেও যে একটি ছাত্রটিকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল, সেই গর্বটুকুই সম্বল।’’

সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, ‘‘মনোজিৎ এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ছেলে ছিল। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতো। ওঁর এই পরিণতি মানা যাচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE