দলের গোষ্ঠী ‘পাল্টে’ও শেষরক্ষা হল না।
নিমতলা-কাণ্ডে তিন দলীয় কর্মী খুনের ঘটনার ছ’মাস পরে পুলিশ গ্রেফতার করল নানুরের তৃণমূল নেতা ভরত মাঝিকে। মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ বোলপুরের জাহানাবাদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ভরতবাবুকে। সোমবারই পুলিশ খুনে অভিযুক্ত দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষকে নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর এ দিন তিন দলীয় কর্মী খুনে অভিযুক্ত নানুর পঞ্চায়েত সমিতির ওই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ফের নির্বাচনের মুখে নানুরের তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল আরও এক বার বেআব্রু হয়ে পড়ল। ওই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে দলীয় নেতৃত্ব। পুলিশ জানায়, ধৃত তৃণমূল নেতা ভরত মাঝি দলের ব্লক আদিবাসী-তপসিলি সেলের সভাপতি তথা নানুর পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য। গত সেপ্টেম্বর মাসে বোলপুর এলাকায় তিন তৃণমূল কর্মী খুনের অভিযোগে, মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে থুপসড়া পঞ্চায়েত এলাকা তথা নানুরে তৃণমূলের সংগঠন বৃদ্ধির পিছনে প্রয়াত সোনা চৌধুরীর পাশাপাশি ভরত মাঝির অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। ২০১০ সালের স্থানীয় পালুন্দি মোড়ে খুন হন তৎকালীন ব্লক সাধারণ সম্পাদক সোনা চৌধুরী। ওই দিনই ভরত মাঝিকেও পালুন্দি গ্রামে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। সে সময়ে অবশ্য দলে গোষ্ঠী কোন্দল ছিল না। পরবর্তী কালে পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ, বালির ঘাটের দখল ও এলাকায় রাজনৈতিক ক্ষমতা কায়েমকে কেন্দ্র করে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের সঙ্গে কাজল-গদাধর অনুগামীদের সংঘাত শুরু হয়। ভরত সে সময়ে ছিলেন কাজল এবং গদাধরের দলে। পরবর্তী কালে গদাধর অনুব্রতের সঙ্গে ভিড়েন। ভরত থেকে যান কাজলের সঙ্গে। কিন্তু দু’পক্ষের সংঘাত থামে না। বরং গোলাগুলির লড়াই, খুন, খুনের চেষ্টায় একের পর এক ঘটনায় তেতে ওঠে নানুর এবং বোলপুরের বিভিন্ন এলাকা।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় কাজলকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে গদাধর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বোলপুরের বাহিরী নিমতলার কাছে নানুর- পালিতপুর রাস্তার ওপর তিন গদাধর অনুগামীকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে কাজল এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ দায়ের করেন নিহতদের মধ্যে এক জন কুরবান শেখের বাবা জিলাই শেখ। সেই সময়ে এফআইআর-এ ভরত মাঝির নাম ছিল না। কিন্তু ভরত কাজল ঘনিষ্ঠ হওয়ায় গদাধর হাজরার পরামর্শে পরবর্তী কালে ১৬৪ ধারায় জিলাই শেখের জবানবন্দীর ভিত্তিতে ভরত মাঝির নামও অভিযুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে দলেরই একাংশের দাবি।
ভোটের আগে অবশ্য গদাধরের সঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় কোন্দল ঘোচে ভরতের। গদাধরের হয়ে ভোটের কাজও শুরু করেন ভরত। কিন্তু খুনের অভিযোগের তালিকায় তাঁর নাম থাকায় এ দিন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে কাজল কোনও মন্তব্য না করলেও, তাঁর এক ঘনিষ্ঠ জানিয়েছেন ভোটের মুখে এই গ্রেফতার দলকে কিছুটা হলেও, বেকায়দায় ফেলে দিল। সে দিন গদাধর বোঝেননি ভরতকে তাঁর কাজে লাগবে। তাই তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভোটের স্বার্থে পুলিশকে ম্যানেজ করে এতদিন গ্রেফতারি এড়ানো গেলেও, নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় শেষ রক্ষা হল না। এতে আরও একবার দলের মুখ পুড়ল।
কী বলছেন গদাধর? তিনি বলেন, ‘‘ভরত আমাদেরই দলের কর্মী, ভোটের হয়ে কাজ করছিল। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে খবর পেলাম।’’
তাহলে কি ভরত মাঝি দলীয় কর্মী খুনে অভিযুক্ত? নাকি তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল?
জবাব এড়িয়ে যান গদাধর। জানান, মিটিং-এ ব্যস্ত আছি। পরে যোগাযোগ করুন। তার পরেই ফোন কেটে যায়। পুলিশ জানায়, খুনের অভিযোগে এ দিন ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত দিন গ্রেফতার করা হয়নি কেন? জবাব এড়িয়ে যান বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy