Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
দুবরাজপুরে উদ্ধার বোমাও

ঘরে ঢুকে বেদম মার নেতাকে

অর্থ আত্মসাৎ এবং বাড়িতে বোমা মেলা নিয়ে নসিবউদ্দিন ও তাঁর পরিবাবের লোকজনের বক্তব্য, গোটাটাই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। পুলিশকর্মীরা গ্রামে থাকা সত্ত্বেও জনতার হাতে আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনাও করেছে আহত নেতার পরিবার।

আক্রোশ: শেখ নসিবউদ্দিনকে ঘিরে মার। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

আক্রোশ: শেখ নসিবউদ্দিনকে ঘিরে মার। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

রাস্তায় মোরাম ফেলার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তুলে এক তৃণমূল নেতাকে বাড়িতে ঢুকে পেটালেন গ্রামবাসীর একাংশ। ওই ঘটনা ঘটল পুলিশের উপস্থিতিতেই। অভিযুক্ত নেতার বাড়ি থেকেই পরে ১১টি বোমাও উদ্ধার হয়। তবে সেটা পুলিশের নজরে নিয়ে আসার কাজটা করে জনতাই।

শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে দুবরাজপুর থানার পাকুরিয়া গ্রামে। গ্রামবাসীদের অভিযোগের তালিকায় থাকা শাসকদলের আরও দুই স্থানীয় নেতা পালিয়ে বেঁচেছেন। জনরোষ থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন ওই সংসদের নির্বাচিত সিপিএম সদস্যও। মারের চোটে জখম শেখ নসিবউদ্দিন ওরফে পলাশ নামে ওই তৃণমূল নেতাকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে পাঠায়। অর্থ আত্মসাৎ এবং বাড়িতে বোমা মেলা নিয়ে নসিবউদ্দিন ও তাঁর পরিবাবের লোকজনের বক্তব্য, গোটাটাই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। পুলিশকর্মীরা গ্রামে থাকা সত্ত্বেও জনতার হাতে আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনাও করেছে আহত নেতার পরিবার।

দিন কয়েক ধরেই গ্রামে উত্তেজনা ছিল। গ্রামবাসী শেখ সফিউল, শেখ সুম্মান, শেখ তহিদদের অভিযোগ, তাঁরা সকলেই তৃণমূল করেন। কিন্তু, গ্রামের এনামুল হক, তাঁর খুড়তুতো ভাই নসিবউদ্দিন ও বন্ধু ডালিম— মূলত তিন জনেই গ্রামে দলের হয়ে মাতব্বরি করেন। নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের শেখ ইসমাইল হলেও তাঁকে পুতুল করে পুরো কাজ চালান এনামুলেরা। গ্রামবাসীদের দাবি, তালবেড়া থেকে ঘসবেড়া এবং সফেদ অলির বাড়ি থেকে কবরস্থান, এই রাস্তা দু’টিতে মোরাম ফেলার টাকা বরাদ্দ করেছিল গ্রাম পঞ্চায়েত। কিন্তু সেই কাজের এক ছটাক না করেই টাকা তুলে নিয়েছিলেন এনামুল, নসিবউদ্দিনেরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতর বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির অভিযোগ আগে থেকেই ছিল এলাকাবাসীর। মোরামের বিষয়টি কিছুদিন আগে জানার পর থেকেই গ্রামের সব মানুষ অভিযুক্ত চার জনের পরিবারের বিপক্ষে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, গ্রামে সকলের সামনে মীমাংসা করে রাস্তা দু’টিতে হয় মোরাম ফেলার বন্দোবস্ত করুন অথবা টাকা ফেরত দিন। সফিউল, তহিদরা বলেন, ‘‘সে পথে না হেঁটে উল্টো আমাদেরই দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল এনামুলরা। সেই কারণেই গণ বিক্ষোভ হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে উত্তেজনার খবর পেয়েই দুবরাজপুর থানার পুলিশ পাকুকিয়া গ্রামে পৌঁছায়। তার আগেই ক্ষুব্ধ মানুষজন চড়াও হন এনামুলের বাড়িতে। বেগতিক দেখে এনামুল কাকা ইদ্রিশের বাড়িতে চলে যান। ভাই নসিবউদ্দিনও সেখানে ছিলেন। গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলে শ’খানেক লোক। একটু তফাতে ছিল পুলিশ। দু’পক্ষের তর্কাতর্কির মধ্যেই এর মধ্যেই এনামুল পালিয়ে যান। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে পালান শেখ ডালিম ও সিপিএম সদস্য ইসমাইলও। হঠাৎই উত্তেজিত কিছু যুবক খবর দেন, বাড়ির এক কোণে উদ্ধার হয়েছে বোমা। এর পরেই নসিবউদ্দিনকে ধরে এলোপাথাড়ি কিল চড় ঘুষি চলতে থাকে। লাঠির ঘা-ও পড়ে। বাবা ইদ্রিশ কোনও ক্রমে ছেলেকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে ঘরের মধ্যে নিয়ে যান।

গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিনয় বাগদির সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, নসিবউদ্দিন মার খাওয়ার পিছনে দু’টি কারণ উঠে আসছে। প্রথমত, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এলাকায় তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী জনরোষে মদত দিয়ে থাকতে পারে বলে দলের একাংশ মনে করছে। দ্বিতীয়ত, পরিবারের লোক জানাচ্ছেন, নসিবউদ্দিন আগে রোজভ্যালি করতেন। তাঁকে বিশ্বাস করে অনেকের টাকা ডুবেছে। এ দিনের আক্রমণের পিছনে সেটাও কারণ হতে পারে। দুবরাজপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ভোলনাথ মিত্র বলেন, ‘‘ওখানে আদৌ উন্নয়নের টাকা নয়ছয় হয়েছে কিনা, সেটা জানা নেই। সেটা প্রশাসন ও পুলিশ দেখবে। আমাদের কেউ দোষী হলে শাস্তি হবে। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চলিয়েছে কিছু লোক। তারা দলের কেউ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE