Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসা শুরু হল অপুষ্টিতে ভোগা ২৬ শিশুর

মে মাসের শেষ সপ্তাহে মালপাড়ায় কিছু দিন আগে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অপুষ্টিতে ভুগেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ১৩:৫৫
Share: Save:

কোনও তুকতাক নয়, অপুষ্টিই শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী— এই কথা গ্রামবাসীকে বোঝাতে গোঁসাইডাঙার মালপাড়ায় স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির করল প্রশাসন। শনিবার সকালে গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ওই শিবির হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, ২৬ জন শিশু অপুষ্টির শিকার। তাদের মধ্যে ছ’জনকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের নবজাতক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মে মাসের শেষ সপ্তাহে মালপাড়ায় কিছু দিন আগে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অপুষ্টিতে ভুগেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকায় গিয়ে প্রশাসন দেখেছে, সেখানে অনেক শিশুই অপুষ্টির শিকার। কিন্তু সেই ব্যাপারে সচেতন নন স্থানীয় বাসিন্দারা। কুসংস্কারের বশে সেখানে এক বৃদ্ধাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে ওই শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী করে হেনস্থা করা হয়। সেই জল অনেক দূর গড়িয়েছে। ওই ঘটনার পরে গ্রামে গিয়ে কুসংস্কারের ব্যাপারে সচেতনতা প্রচার করেছিল প্রশাসন। রঘুনাথপুর মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় এবং সুসংসহত শিশু বিকাশ দফতরের আধিকারিকরাও গিয়েছিলেন। সব দেখেশুনে প্রশাসনের মনে হয়েছিল, অপুষ্টিজনিত সমস্যায় শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে, আর তাতে রঙ চড়িয়ে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করছে স্থানীয় ওঝারা। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, গ্রামে স্বাস্থ্য শিবির করা হবে।

এ দিন গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিবিরের আয়োজন করে ব্লক সুসংহত শিশুবিকাশ দফতর, জেলা পুষ্টি পুর্নবাসন কেন্দ্র ও আড়রা পঞ্চায়েত। গ্রামের মালপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ওই শিবিরে প্রসূতিদের থেকে চিকিৎসকেরা তাঁদের খাওয়ার রুটিন ও খাবারের ধরন সম্পর্কে জানতে চান। পঞ্চায়েত প্রধান মধুসূদন দাস বলেন, ‘‘বেশ কয়েকজন মহিলা জানিয়েছেন, গর্ভস্থ ভ্রুণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা ডিম খান না। পুষ্টি জনিত অজ্ঞতার জন্যই অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর শিশু মৃত্যু হলে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’’

গর্ভবতী ও প্রসূতিদের কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত তা বোঝান পুষ্টি পুনর্বসান কেন্দ্রের ডায়েটিশিয়ান ও রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। সিডিপিও (রঘুনাথপুর ১) অরুণাভ মাইতি বলেন, ‘‘গোঁসাইডাঙার ওই পাড়ায় ভ্রান্ত ধারণার জন্য অনেকে সুষম খাবার খান না। তার প্রভাব পড়ে শিশুদের উপরে।”

যে সমস্ত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে, তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পঞ্চায়েত প্রধান। শিশুরা এক মাস পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকলে তার পরিবার মাসে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পাবে। এক বছর পর্যন্ত ওই পরিবারকে রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে প্রতি মাসে পাঁচ কেজি চাল, আড়াই কেজি গম, এক কেজি মুসুর ডাল ও এক কেজি করে ছোলা দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE