Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মনোবলকে সঙ্গী করে সাফল্য মেঘা-অনন্যার

মেঘার প্রাপ্ত নম্বর ৪৩৩ (গণিত ৮৮, পদার্থবিদ্যা ৭১, রসায়ন বিদ্যা ৭১, প্রাণী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান ৯৩, বাংলা ৯০ এবং ইংরাজি বিষয়ে ৯১ পেয়েছে)। বোলপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজী রোড রথতলার বাসিন্দা মেঘা বর্তমান প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হতে চায়

মেঘা ও অনন্যা। —নিজস্ব চিত্র।

মেঘা ও অনন্যা। —নিজস্ব চিত্র।

মহেন্দ্র জেনা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ০১:৩৮
Share: Save:

বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, বছর খানেক আগে। ছোট ভাই এ বার মাধ্যমিকে উঠেছে। অভাব অনটনের সংসার কিন্তু তাকে বিরত করেনি পড়া থেকে। ছোট বেলা থেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার জেদ। নিজের অদম্য চেষ্টার পাশাপাশি স্কুলের এবং পাশের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় সাধুর সহায়তায় উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। নিত্য অভাবকে সঙ্গী করেও, বোলপুর শৈলবালা গার্লস স্কুলের ছাত্রী মেঘা দাস কবিরাজ সাফল্য পেয়েছে এ বার উচ্চমাধ্যমিকে।

মেঘার প্রাপ্ত নম্বর ৪৩৩ (গণিত ৮৮, পদার্থবিদ্যা ৭১, রসায়ন বিদ্যা ৭১, প্রাণী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান ৯৩, বাংলা ৯০ এবং ইংরাজি বিষয়ে ৯১ পেয়েছে)। বোলপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজী রোড রথতলার বাসিন্দা মেঘা বর্তমান প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হতে চায়। তবে অভাবের কারণে আদৌ পড়া চালানো সম্ভব হবে কি না বুঝতে পারছে না। বছর দু’য়েক আগে, মাধ্যমিকে ৬৪৩ নম্বর নিয়ে অভাবী দাস কবিরাজ পরিবারের মা রুমা দেবীর পাশাপাশি বাবা প্রশান্তবাবুর চিন্তা বেড়েছিল। এইবার উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করেছে। তাই স্নাতকস্তরের পড়া কেমন চালিয়ে যাবে, সে নিয়েই চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার।

অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিন কয়েক আগেই বাবাকে হারিয়ে শোকের মধ্যেই পরীক্ষা দিয়েছিল বোলপুর গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী অনন্যা। কলাবিভাগে ৮৮.৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে এ বার সে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৪৩। বোলপুরের বাসিন্দা তথা পুলিশ ইন্সপেক্টর সিদ্ধার্থ ঘোষাল চাইতেন মেয়ে ভাল করে পাঠ শেষে করে প্রতিযোগিতামূলক প্রশাসনিক পরীক্ষায় সাফল্য পাক। বাবার সেই ইচ্ছেকে সম্মান দিতে, তাই জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হয়নি অনন্যা। পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের প্রফেসার কলোনির বাসিন্দা তথা বোলপুর গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী অনন্যা এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছে এলাকার মানুষ। ছোট বোন নবম শ্রেণির পড়ুয়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষিকা মা অম্বিকা দেবীকেও সাহস জুগিয়েছে অনন্যা। অনন্যা জানিয়েছে, ইংরাজি অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করবে এবং প্রশাসনিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসবে।

সে বলে, ‘‘বাবার ইচ্ছেকে সম্মান দিতেই, মনোবল শক্ত করে পরীক্ষা দিয়েছি এবং সামনের দিনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE