Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দামোদরের জল ঢুকল বহু গ্রামে

বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, জেলায় ২০ হাজার ত্রিপল ও ১৫০ টন চাল মজুত রয়েছে। তিনি বলেন, “বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে গ্রাম পঞ্চায়েত ও জেলা প্রশাসন যৌথ ভাবে ত্রাণ কার্য চালাচ্ছে।’’

দুর্গত: বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে রতনপুরের বিড়াই নদীর সেতু মেরামতি।  নিজস্ব চিত্র

দুর্গত: বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে রতনপুরের বিড়াই নদীর সেতু মেরামতি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনামুখী ও বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

দামোদরে জল বাড়ছে শুনে দুঃশ্চিন্তা নিয়েই ওঁরা ঘুমাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার ভোরে দামোদরের ভয়ঙ্কর রূপ দেখেই বুঝে ছিলেন গ্রামে জল ঢুকতে আর দেরি নেই। সেটাই হল। বেলা গড়়াতেই পাড় ছাপিয়ে দামোদরের জল লাগোয়া বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন গ্রামে হু হু করে ঢুকতে শুরু করে। জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোথাও কোথাও ত্রাণ শিবিরে সরানোতে গড়িমসি করা থেকে নানা রকমের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন বন্যার্তেরা।

বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, জেলায় ২০ হাজার ত্রিপল ও ১৫০ টন চাল মজুত রয়েছে। তিনি বলেন, “বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে গ্রাম পঞ্চায়েত ও জেলা প্রশাসন যৌথ ভাবে ত্রাণ কার্য চালাচ্ছে।’’ মঙ্গলবার চালু করা ১৮টি ত্রাণ শিবিরের মধ্যে এ দিন ছ’টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে, দামোদর লাগোয়া সোনামুখী, পাত্রসায়র, বড়জোড়া ও মেজিয়া ব্লকে নতুন ১১টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।

সোনামুখী

সোনামুখী ব্লকের রাধামোহনপুর পঞ্চায়েতের নিত্যানন্দপুর, পান্ডে পাড়া, মানা সমিতি, কেনেটি মানা, রাঙামাটি মানা প্রভৃতি গ্রামে এ দিন বেলার দিকে গিয়ে দেখা গিয়েছে বাড়ির উঠোনে জল বইছে। পরিস্থিতি খারাপ হয় নিত্যানন্দপুরের পান্ডে পাড়া এবং মানা সমিতি মহল্লায়। জলবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ১২০টি পরিবার। পাণ্ডে পাড়ার প্রভা তালুকদার, প্রতিমা দাস, শুক্লা মল্লিকরা বলেন, ‘‘খুব দ্রুত জল বাড়ছে। বাচ্চা নিয়ে কোনও রকমে খাটের উপরে উঠে বসে রয়েছি। গ্রামে একটাও পাকা বাড়ি নেই যে সেখানে আশ্রয় নেব।’’ মানা সমিতির বাসিন্দা সমর মণ্ডল, মন্টু মণ্ডল, সন্ধ্যা শিকদার, সবিতা মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘২০০ গজ দূরে দামোদর রাত থেকেই ফুঁসছে। ভোর থেকে বালতি-বালতি জল ঘরের ভিতর থেকে বার করেছি। আর পারলাম না।’’প্রশাসনের নৌকার অপেক্ষায় কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। প্রবীণ বাসিন্দা গৌরাঙ্গ চৌধুরী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘আসা তো দূরে থাক, ফোনেও প্রশাসনের কেউ খবর নেয়নি।’’

রাধামোহনপুর পঞ্চায়েত প্রধান পীযুষ ঘোষ সব শুনে দাবি করেন, ‘‘ব্যাপক বৃষ্টিতে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। আমি নিজে নৌকা নিয়ে নিত্যানন্দপুরে পান্ডে পাড়ায় যাচ্ছি।’’ তিনি জানান, বেলুয়া প্রাইমারি স্কুলে ত্রাণ শিবির হয়েছে। সোনামুখীর বিডিও রিজওয়ান আহমেদ দাবি করেন, ‘‘অনেক বোঝানোর পরেও পান্ডে পাড়া এবং মানা সমিতির বাসিন্দাররা কিছুতেই আসতে চাইছেন না। জোর করে বার করে আনার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার পাঠানো হয়েছে।’’ যদিও বিকেলে গ্রামবাসী দাবি করেন, প্রশাসনের নৌকোর ভরসা না করে অনেকেই স্থানীয় ভাবে নৌকা নিয়ে ত্রাণ শিবিরে উঠে গিয়েছেন। লালবাবার চর ও উত্তরচর মানার বেশ কিছু গ্রামও জলমগ্ন হয়েছে।

বড়জোড়া

দুর্গাপুর ব্যারাজের প্রচুর জল ছাড়ার খবরে বুধবার সকাল থেকেই মানাচরগুলির বাসিন্দারা তল্পিতল্পা গুছিয়ে ত্রাণ শিবিরে রওনা দেন। প্রশাসন জানিয়েছে, বড়জোড়ার পখন্না মানা এলাকার ভৈরবপুর, চকবাজার, বরিশাল পাড়া এলাকায় জল বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের ভৈরবপুর ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে আনা হয়। বড়জোড়া মানার রামকৃষ্ণপল্লি, পল্লিশি এলাকাও জলমগ্ন হয়। ঘুটগোড়িয়া মানার সীতারামপুর কলোনির কিছু বাড়িতে জল ঢুকে পড়লেও বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে না সরানোয় ক্ষোভ ছড়ায়। সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির আহ্বায়ক সুজয় চৌধুরী বলেন, “সীতারামপুরের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ত্রাণ শিবির খোলার দাবি তুলেছি আমরা।”

বিডিও (বড়জোড়া) পঙ্কজকুমার আচার্য ও বড়জোড়া পঞ্চায়েতের প্রধান অর্চিতা বিদ জানান, এ দিন দুপুর পর্যন্ত বড়জোড়ার ভৈরবপুরে তিনটি ত্রাণ শিবিরে প্রায় তিনশো মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। স্পিড বোট নামিয়ে ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের মাধ্যমে ত্রাণ করা হচ্ছে।

মেজিয়ার বিডিও অজয় সান্নাওয়াত জানান, দামোদর নদ সংলগ্ন বানজোড়া এলাকার সাত-আটটি পরিবারকে স্থানীয় একটি স্কুলে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

পাত্রসায়র

বেলুট-রসুলপুর, নারায়ণপুর, হামিরপুর ও জামকুড়ি মানাচরের কিছু গ্রাম দামোদরের জলে প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ব্লকের দামোদরের উপরের কজওয়েগুলিতে যান চলাচলও নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। বিডিও (পাত্রসায়র) অজয় সাহা জানান, সেখানে চারটি ত্রাণ শিবির চালু করে ৫২টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

ইন্দাস

দামোদর ও দ্বারকেশ্বর দুই নদী ভরে ওঠায় দুঃশ্চিন্তা ইন্দাসে। বিডিও (ইন্দাস) সুচেতনা দাস জানান, তাঁরা দু’টি ত্রাণ শিবির খুলে ৫৪টি পরিবারের আশ্রয় দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE