Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নজরদারিতে ফাঁক, সাফ হচ্ছে জঙ্গল

চৌকান বন সুরক্ষা কমিটির গা লাগোয়া শিরোমণিপুর, খড়িগাড় মানসা, কানগোড়, শিয়ালকোন্দা গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দিনে দুপুরে লুঠ হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের গাছ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ১২:৪০
Share: Save:

লালগড় প্রকৃতি উদ্যানের পাশেই বিষ্ণুপুর শহরের শেষ প্রান্তে শাল, পিয়াশাল, বহড়া, আকাশমণি, পটাশ, বেল, হরিতকির বিশাল এক জঙ্গল শেষ হয়ে যাচ্ছে কাঠ মাফিয়াদের তাণ্ডবে। কিন্তু বন দফতর ও পুলিশ-প্রশাসন কিছুই করছে না বলে অভিযোগ তুলে ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের মধ্যে।

এই এলাকাটি বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত ডিভিশনের বিষ্ণুপুর রেঞ্জের চৌকান বিটের অধীনে। ওই বিটের একজন বন আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৫০০ হেক্টর জঙ্গলের চৌকান বিটে শিরোমণিপুর, পানশিউলি, চৌকান, দক্ষিণ মগরা ও ক্ষুদিরাম পল্লি, বাসুদেবপুর ক্যাম্প (২) — এই পাঁচটি বন সুরক্ষা কমিটি আছে। এর মধ্যে একমাত্র চৌকান বন সুরক্ষা কমিটির অন্তঃকলহের জন্য শেষ হতে বসেছে তাদের অধীনে থাকা ৮০ হেক্টেরের মতো জঙ্গল।

চৌকান বন সুরক্ষা কমিটির গা লাগোয়া শিরোমণিপুর, খড়িগাড় মানসা, কানগোড়, শিয়ালকোন্দা গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দিনে দুপুরে লুঠ হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের গাছ। সকাল হলেই ১৫-২০ জনের দল কুড়ুল, কাটারি নিয়ে ছোট-বড় যা পাচ্ছে, সব গাছ সাফ করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে জঙ্গলের বহু পুরনো বড় বড় শালগাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। জঙ্গল লাগোয়া করাতকলে গাছ কেটে কাঠ চলে যাচ্ছে বাজারে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, চৌকান বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিজেদের দ্বন্দ্বে নজরদারির অভাবেই দুষ্কৃতীরা ওই এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যমণ্ডিত মন্দির ঘোরার ফাঁকে বহু পর্যটক জঙ্গল উপভোগ করতে আসেন লালগড় প্রকৃতি উদ্যানে। সেখানকার নজর মিনার থেকে চারপাশের সবুজ জঙ্গল দেখে তাঁরা মুগ্ধ হন। দমদম থেকে আসা শোভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখানে দিনে দুপুরে জঙ্গল সাফ হয়ে যাচ্ছে দেখছি। প্রশাসন কী করছে?’’

কয়েকদিন আগে ওই জঙ্গলে ঢুকে এক ব্যক্তিকে গাছ কাটতে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলে এখন নজরদারি কম। তাই কিছু গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছি। বিক্রি করে যা পাওয়া যায়, তাই লাভ।’’

চৌকান বন সুরক্ষা কমিটির কার্যকরী কমিটির সদস্য দুর্গা লোহার, সুশান্ত লোহার, স্বপন লোহারদের বক্তব্য, ‘‘গ্রামের ১৩৫ ঘরের লোকজন বন সুরক্ষা কমিটিতে থাকলেও তাঁদেরই কয়েকজন কমিটির বদনাম করতে জঙ্গল সাফ করছে। খবর পেয়ে বিষ্ণুপুর শহরের রাসতলা, শঙ্কটতলা, ছিন্নমস্তা এলাকার লোকও জঙ্গলে গাছ কাটতে আসছেন। আমরা বাধা দিলে শুনছে না। আবার বনকর্মীদের ডেকেও সময় মতো পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের কিছু খারাপ লোকের সাহায্যে বাইরের দুষ্কৃতীরা জঙ্গল কেটে নিয়ে যাচ্ছে।’’

ওই গ্রামেরই মিওন লোহার, পশুপতি লোহার, অনিমা লোহারদের পাল্টা দাবি, ‘‘বাম আমলে তৈরি বন সুরক্ষা কমিটির কার্যকারী কমিটিই এখনও রয়ে গিয়েছে। তাঁরা কোনও উন্নতি করেনি। তাঁরাই পদের অব্যবহার করে বড় বড় গাছ কেটে সাফ করে দিয়েছে। জঙ্গল বাঁচাতে নতুন কার্যকরী কমিটি দরকার।’’ তাঁরা জানান, ডিএফও-র কাছে দ্রুত বার্ষিক মিটিং ডাকতে বলবেন।

বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত ডিভিসনের ডিএফও নীলরতন পান্ডা বলেন, ‘‘ও সব অভিযোগ ঠিক নয়। কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসছি। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করতে পিছপা হব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wood mafias Wood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE