ওয়েলকাম টু ঢোলকপুর আদ্রার এনসিসি ক্লাবের পুজো মণ্ডপ। ছবিটি তুলেছেন পৌলমী চক্রবর্তী।
থিম এখন আর দুর্গাপুজোয় আটকে নেই। রেলশহর আদ্রার কালীপুজোতেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাগছে থিমের ছোঁয়া। পুজোর দিন, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে এটাই চোখে পড়েছে।
এই রেলশহরে উত্সবের সুরটা বাঁধা হয়ে যায় বিশ্বকর্মা পুজোর সময় থেকেই। বিভিন্ন থিমে বড় মাপেই বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করেন রেলকর্মীরাই। সেই শুরু। দুর্গাপুজোর পরে আলোর উত্সবেও এ বার থিম নিয়ে এসেছেন বেশ কিছু কালীপুজোর উদ্যেক্তারা। এক দিন নয়, আদ্রায় শ্যামার আরাধনা চলে তিন-চার দিন ধরে। পুজোর দিনগুলিতে দর্শক টানতে তাই কোথাও বাচ্চাদের জনপ্রিয় কার্টুন ছোটা ভীমের সঙ্গে মণ্ডপে হাজির কালিয়া, জগ্গুরা। আবার কোথাও থিম ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’। কোথাও বা প্রদীপদানের উপরে প্রদীপের ধাঁচে মণ্ডপ। সব মিলিয়ে থিমের কালীপুজোয় জমজমাট রেলশহর। কিছু পুজোর উদ্যোক্তাদের কথায়, “সাবেকি ধাঁচের পুজোর স্বাদ পরিবর্তন করতে আর দর্শকদের বাড়তি আনন্দ দিতে থিমের বিকল্প হয় না। আর থিমপুজো এখন শুধু কলকাতা নয় মফস্সলেও জনপ্রিয়। তাই আমরা থিম পুজোতেই জোর দিচ্ছি।”
আদ্রার মুক্তদল স্যোশাল ওয়েলফেয়ার সত্কার সমিতির পুজোর থিম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষিত ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’। এই পুজোর উদ্যোক্তারা মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরেছেন, আদ্রার স্টেশন ও পাশে রেলের টিকিট কাউন্টারকে। মণ্ডপ চত্বরে স্টেশনের চারটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। মডেলের সাহায্যে দেখানো হয়েছে, স্টেশনকে পরিষ্কার রাখতে ঝাঁটা, ঝুড়ি হাতে কাজে নেমেছেন রেলকর্মীরা। সেখানে উপস্থিত ট্রেনের গার্ড-সহ রেলের আধিকারিকেরা। তৈরি করা হয়েছে টাটা-আদ্রা মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেনও। বস্তুত, কেন্দ্রীয় সরকার ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ কর্মসূচি ঘোষণার পরেই রেলের আধিকারিকেরা আদ্রা স্টেশনের সার্বিক পরিচ্ছন্নতার উপরে জোর দিয়েছেন। পুজোর থিম হিসাবে সেটাকেই বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেছে মুক্তদল।
এবং ঘটনা হল, কেবল থিমের মধ্যেই পুজোকে সীমাবদ্ধ না রেখে বৃহস্পতিবার সকালে মণ্ডপ লাগোয়া এলাকায় ঝাঁটা, ঝুড়ি হাতে সাফাই অভিযানে নেমে পড়েছিলেন ক্লাবের সদস্যেরাই। ক্লাবের সম্পাদক ভানুদেও কারোয়া বলেন, “আমাদের প্রিয় এই রেলশহরকে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সকলেরই। তাই এ বার আমরা থিম হিসাবে স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে বেছে নিয়েছি। পুজোর তিন দিন ধরেই আমরা মণ্ডপ লাগয়ো এলাকা পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে শিল্পী এসে নয়, মণ্ডপ গড়েছেন ক্লাবেরই সদস্য অলোক উপাধ্যায়। অলোকবাবুর কথায় “সীমিত সাধ্যের মধ্যেই আদ্রা স্টেশন-সহ লাগোয়া এলাকা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।”
অন্য দিকে, পুজোয় বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে এনসিসি ক্লাব পুজোয় থিম করেছে ‘ওয়েলকাম টু ঢোলকপুর’। কচিকাঁচাদের অত্যন্ত প্রিয় কার্টুন চরিত্র ছোটা ভীম এবং তার বন্ধু রাজু, কালিয়া, ছুটকি, জগ্গু, ঢোলু ভোলু সকলেই থাকে ঢোলকপুর রাজ্যে। তারা তো বটেই মণ্ডপে রয়েছে ঢোলকপুরের রাজা ইন্দ্রদেব বর্মা ও রাজকন্যা ইন্দুমতিও। এমনকী, লাড্ডুর পসরা সাজিয়ে হাজির টুনটুন মাসিও। মণ্ডপ গড়া হয়েছে ঢোলকপুরেরই রাজবাড়ির ধাঁচে। তাঁদের থিমের পুজো শহরের শিশুদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠবে বলে দাবি করছেন উদ্যোক্তার। এনসিসি ক্লাবের কর্মকর্তা ধনঞ্জয় চৌবের কথায়, “কালীপুজো শুধু বড়দের জন্য নয়, এই উত্সবে মাতে খুদেরাও। তাই টিভির পর্দায় দেখা তাদের প্রিয় কার্টুনের চরিত্রগুলিকে পুজো মণ্ডপেও দেখতে পেয়ে যাতে তারা আনন্দ পায়, সেই লক্ষ্যেই আমরা থিম করেছি ‘ওয়েলকাম টু ঢোলকপুর’।”
পাশাপাশি জনকল্যাণ সমিতি মণ্ডপ গড়েছে প্রদীপদানের উপরে প্রদীপের ধাঁচে। আস্ত একটি ঘণ্টাকে মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরেছে কল্পতরু। পুরোদস্তুর থানা হিসাবে ঘোষণার পরে এ বারই প্রথম কালীপুজো হচ্ছে আদ্রা থানায়। ছিমছাম মণ্ডপ গড়ে পুজো করছেন থানার পুলিশকর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy