বৃষ্টির অপেক্ষায় ধানের জমি। পুরুলিয়ার চাকোলতোড়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বর্ষার খামখেয়ালিপনায় এ বার পুরুলিয়া-বাঁকুড়া দুই জেলায় আমন চাষ মার খেয়েছে। দুই জেলাতেই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম ধান চাষ হয়েছে। এই অবস্থায় পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার কৃষির বর্তমান হাল সরজমিন দেখতে এসে দুই জেলায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।
শুক্রবার তিনি পুরুলিয়ায় জানান, দু’দিন ধরে দুই জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বত্র এক নয়। আমন চাষ যে সব এলাকায় কম হয়েছে, সেই সব এলাকায় চাষিদের সাহায্য করবে কৃষি দফতর। তিনি বলেন, “আমরা আপাতত মৌজা ভিত্তিক সরকারি সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। বিকল্প চাষের মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।” বৃহস্পতিবার মন্ত্রী ছাতনা ও কাশীপুরের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন। শুক্রবার তিনি বাঘমুণ্ডিতে যান। ফিরে এসে পুরুলিয়ার সার্কিট হাউসে দুই জেলার আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে ক্ষতিপূরণে বিকল্প চাষের উৎসাহ দেন।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বাঁকুড়ায় এ বার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩,৮৬,০০০ হেক্টর। চাষ করা গিয়েছে ২,৯৮,৩৮৮ হেক্টর। পুরুলিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,৭২,০২২ হেক্টর, চাষ হয়েছে ১,৭৮,০৮৪ হেক্টর জমিতে। বাঁকুড়ায় বৃষ্টির ঘাটতি ২১ শতাংশ এবং পুরুলিয়ায় বৃষ্টির ঘাটতি ২২ শতাংশ। খেয়ালি বৃষ্টিপাতের দরুণ চলতি বছরে মার খেয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার আমন চাষ। এই ধান দুই জেলার বাসিন্দাদের কাছেই প্রধান অর্থকরী ফসল। ফলে অগস্টের শেষ সপ্তাহ অবধি দুই জেলার চাষ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি না পৌঁছনোয় দুর্ভাবনায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, একলপ্তে যে পরিমাণ বৃষ্টি হলে চাষটা হতে পারত অনেক জায়গাতেই তা হয়নি। যেটুকুও বা চাষ হয়েছে আগামীদিনে বৃষ্টি না হলে তাও কতটুকু টিঁকবে তা নিয়ে সন্দিহান চাষিরা। সংশয়ে রয়েছেন দফতরের আধিকারিকরাও।
চলতি বছরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন দফতরের অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “সাধারণত এই দুই জেলায় গড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ বার অন্তত ৭৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই আমরা সতর্ক হচ্ছি।” প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা থেকে ঠেকে শিখছে কৃষি দফতর। কৃষি অধিকর্তা বলেন, “আগে বৃষ্টি ভাল হলে ফসল ভাল হত। বৃষ্টি ভাল না হলে ফসল হত না। এই চিত্রের খুব একটা হেরফের হয়নি আজও। এ কথা মাথায় রেখেই এ বার কৃষি নিয়ে নতুন প্রকল্প নিচ্ছে রাজ্য সরকার।” খাদ্য সুরক্ষায় বাস্তবসম্মত চাষের উপর জোর দিতে ‘সুসংহত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’ (কম্প্রিহেনসিভ ডেভেলপমেন্ট এগ্রিকালচারাল প্ল্যান বা সিড্যাপ) গ্রহণ করছে কৃষি দফতর।
প্রকল্পের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন কৃষি দফতরের সচিব সুব্রত বিশ্বাস। তিনি জানান, রাজ্যের পাহাড় থেকে উপকূলবর্তী এলাকা জুড়ে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মাটি ও আবহাওয়া অনুযায়ী এলাকা ভিত্তিক চাষে উৎসাহ দেবে সরকার। তিনি বলেন, “আগামী পাঁচ বছর ধরে এই প্রকল্প নেওয়ার কথা চলছে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে জেলা ভিত্তিক পৃথক পৃথক পরিকল্পনা করা হবে।” রাজ্যের কৃষি দফতরের পরিষদীয় সচিব শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “আগে সরকারি প্রকল্পে সমস্ত এলাকার জন্য একই রকমের চাষ করতে বলা হত। তা অনেক সময় বাস্তবসম্মত ছিল না। তাই যে এলাকায় যে বিকল্প চাষ সম্ভব, শুধু সেই চাষেই আমরা উৎসাহ দেব।” সচিব জানান, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পে মৎস্য, পশুপালন, কৃষি, কৃষি সমবায়, বাজার, বেসরকারি বিনিয়োগ-সহ বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “প্রকল্পের খসড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই রাজ্য মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy