Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ বার স্কুলপাঠ্যে আন্দোলন-কথা যুক্ত করার দাবি

কয়েকদিন আগে দুর্গাপুজোর এক মণ্ডপে ক্যুইজ হচ্ছিল। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, পুরুলিয়ার জেলার জন্মদিন কবে? মানভূম জেলার সদর দফতর প্রথমে কোথায় ছিল? জেলার ভাষা আন্দোলন কত বছর ধরে চলেছিল? বলাবাহুল্য একটি প্রশ্নেরও সঠিক জবাব মেলেনি। অথচ উত্তরদাতাদের মধ্যে কয়েকজন কলেজপড়ুয়াও ছিলেন। জেলার ইতিহাস সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের এই অনাগ্রহ বা অজ্ঞতার কথা শুনে ব্যাথিত স্বাধীনতা সেনানি ও ভাষা আন্দোলনের কর্মীরা।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪৫
Share: Save:

কয়েকদিন আগে দুর্গাপুজোর এক মণ্ডপে ক্যুইজ হচ্ছিল। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, পুরুলিয়ার জেলার জন্মদিন কবে? মানভূম জেলার সদর দফতর প্রথমে কোথায় ছিল? জেলার ভাষা আন্দোলন কত বছর ধরে চলেছিল?

বলাবাহুল্য একটি প্রশ্নেরও সঠিক জবাব মেলেনি। অথচ উত্তরদাতাদের মধ্যে কয়েকজন কলেজপড়ুয়াও ছিলেন। জেলার ইতিহাস সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের এই অনাগ্রহ বা অজ্ঞতার কথা শুনে ব্যাথিত স্বাধীনতা সেনানি ও ভাষা আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁদের মতে, যারা নিজেদের ইতিহাস জানে না, তারা সংস্কৃতির শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

মানবাজার থানা এলাকার দুই প্রবীণ স্বাধীনতা সেনানী চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত ও বিজয়কুমার দত্তের কথায়, “দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে মানভূম জেলা ভেঙে ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুরুলিয়া জেলা পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল। এই ইতিহাস জানানোর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এই বিষয়কে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করা দরকার।” তাঁদের মতে, আগের বামফ্রন্ট সরকার এই ইতিহাসকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান তৃণমূল সরকারও সেই ধারাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পঠনপাঠনে এই ইতিহাস না থাকলেও পুরুলিয়ার সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত সমস্ত কলেজে ইতিহাস বিভাগে পাশকোর্স ও অনার্সে মানভূমের স্বাধীনতা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে একটি আলাদা পেপারও রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক তথা ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মণ্ডল জানান, মানভূম জেলার ভাষা আন্দোলন ভারতবর্ষে অন্যতম প্রাচীন ভাষা আন্দোলন। ১৮৩৩ সালে জঙ্গলমহল জেলা ভেঙে ব্রিটিশরা মানভূম জেলা গঠন করেন। ১৮৩৮ সাল অবধি মানবাজারে তার সদর কার্যালয় ছিল। এই মানভূম জেলা অখণ্ড বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গ ভঙ্গের জেরে মানভূম জেলাকে বিহার-ওড়িশার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে আন্দোলনের জেরে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও মানভূম জেলাকে বাংলায় আর ফিরিয়ে আনা হয়নি। বাংলায় অন্তর্ভূক্তির দাবিতে, ১৯১২ সাল থেকে আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু জাতীয় নেতারা জানিয়েছিলেন, আগে দেশের স্বাধীনতা অর্জন, তারপর ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠন করা হবে।

১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলেও মানভূম জেলা বিহারেই থেকে যায়। দেশ নায়কদের সাথে মত পার্থক্যের জেরে মানভূম জেলার কংগ্রেস নেতাদের অধিকাংশ দল ত্যাগ করে লোকসেবক সঙ্ঘের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন। টুসু, সত্যাগ্রহ, হাল জোয়াল সত্যাগ্রহ, হাজার পদযাত্রীর কলকাতা অভিযান প্রভৃতির মাধ্যমে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানো হয়। সেই সময় বিহার সরকার আন্দোলনকারীদের প্রতি দমনপীড়ন নীতি নিয়েছিলেন। মানভূমের ভাষা আন্দোলনে মারা না গেলেও অনেকেই চাকরি খুইয়েছিলেন। মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিল অনেককে।

লোকসেবক সঙ্ঘের পুরুলিয়ায় এক সময় দু’জন সাংসদ, ১১ জন বিধায়ক ছিলেন। পরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে তারা সরে আসে। লোকসেবক সঙ্ঘের বর্তমান সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, “১ নভেম্বর পুরুলিয়ার জন্মদিন অনেকেই জানেন না। সরকারি ভাবে জেলার জন্মদিন পালন করা হয় না। এটা দুর্ভাগ্য। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শুষেন মাঝি বলেন, “আমাদের জেলায় ভাষা আন্দোলনের একটা গৌরবজনক ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যে স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর আশ্বাস, “জেলার ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাব রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE