পুলিশ আছে। তাতেও ঠেকানো যাচ্ছে না হুমকি। এমনই অভিযোগ তুলে প্রতীকী প্রতিবাদ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের। —নিজস্ব চিত্র।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে অশান্তির ছায়া এ বার বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজেও!
বহিরাগতদের আনাগোনা, হুমকি ও মারধরের অভিযোগঅধুনা কলেজ ভোটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কার্যত অনিবার্য এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের চেনা ছবি দেখা গেল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির মূলত রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দিকেই। আগামী ৩ নভেম্বর এই কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তার জন্য মনোনয়নপত্র বিলি শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। আর প্রথম দিনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) ছেলেদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া এবং মারধর করার অভিযোগ তুললেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের ‘স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যেরা। লোকপুর ক্যাম্পাসের ঘটনা। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বিশাল পুলিশ বাহিনী এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, ন’য়ের দশক থেকেই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদে ক্ষমতায় আসে ‘স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ (এসএ)। এটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সেই সময় এই সংগঠনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল এসএফআই। ২০০৮ পর্যন্ত এসএ এবং এসএফআই প্রার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেন। ২০০৯ সালে কলেজকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে মেডিক্যাল কলেজের ইউনিট বন্ধ করে দেয় এসএফআই। ওই সংগঠনের সব সদস্যই স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন। যার ফলে ওই বছর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি বছরই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসছেন এসএ-র প্রার্থীরা।
কয়েক মাস আগে মেডিক্যাল কলেজে ইউনিট খুলেছে টিএমসিপি। এসএ-র অভিযোগ, তারা ইউনিট খোলার পর থেকেই কলেজে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। এসএ-র সদস্য ছাত্রছাত্রীদের জোর করে টিএমসিপি-তে যোগ দিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে এসএ-র ছাত্রদের সঙ্গে টিএমসিপি-র বিরোধ বাড়তে থাকে। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এসএ-র ইউনিট সভাপতি শুভাশিস নিয়োগীর দাবি, “কলেজে টিএমসিপি-র শক্তি বাড়াতে হাসপাতালের তৃণমূলপন্থী কিছু চিকিৎসক, মেডিক্যাল অফিসার, ইন্টার্ন ক্লাসে ক্লাসে প্রচারও চালাতে শুরু করেছেন।” তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সহকারী সম্পাদক জয়মাল্য ঘর বলেন, “এই অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। কলেজের কিছু ছেলে নিজেদের উদ্যোগে বাঁকুড়া মেডিক্যালে টিএমসিপি-র ইউনিট খুলেছে। বাইরে থেকে আমাদের সমর্থন রয়েছে তাঁদের প্রতি। কিন্তু, ছাত্র সংসদের ভোটে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। তাঁদের হয়ে আমরা প্রচারও চালাচ্ছি না।”
শুভাশিসের আরও অভিযোগ, ‘কলেজে বহিরাগতদের নিয়ে এসে ছাত্রদের উপরে হামলা চালাচ্ছে টিএমসিপি। এ সব আগে ছিল না। টিএমসিপি ইউনিট খোলার পর থেকেই কলেজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়েছি।” অন্য দিকে, কলেজের টিএমসিপি-র ইউনিটের নেতারা এসএ-র ছাত্রদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের সংগঠনের সদস্যদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। টিএমসিপি করার জন্য হস্টেলেও তাঁদের উপরে নানা নির্যাতন হচ্ছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেডিক্যাল কলেজ তপ্ত হচ্ছে বুঝেই কলেজ কর্তৃপক্ষ জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছিলেন। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থ প্রধান বলেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয়। সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” মনোনয়নপত্র বিলি করার আগের দিন অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার লোকপুর ক্যাম্পাস চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করেন বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার সকাল থেকেই লোকপুর ক্যাম্পাসে চাপা উত্তেজনা ছিল। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই বেশ কিছু ছেলের জটলা দেখা গিয়েছে। মনোনয়নপত্র বিলি করাকে ঘিরে সকাল থেকেই পুলিশের একটি ভ্যান উপস্থিত ছিল সেখানে। তার পরেও মনোনয়নপত্র তুলতে আসা এসএ-র সদস্যদের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সায়ন্তন মণ্ডল ও অনিকেত ঘোষ বলেন, “মনোনয়নপত্র তুলতে যাচ্ছিলাম। টিএমসিপি-র কিছু বহিরাগত ছেলে পথ আটকে আমাদের মারধর করে। হুমকিও দিয়েছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের দুই নেতা দাবি করছেন, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে এসএ। উল্টে ওরাই আমাদের মারধর করছে।” অন্য কোনও সংগঠন যাতে এই কলেজে জমি না পায়, তাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এসএ এই সব করছে বলেও টিএমসিপি-র অভিযোগ। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলেন, “কলেজে উত্তেজনা ছড়াতে পারে জেনেই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতির উপরে আমাদের নজর রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy