জল নেওয়ার জন্য ভিড়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরিজনপল্লিতে।
সাত সকালেই লাইন পড়েছে বালতির। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গলি পথ ঘুরে লম্বা সে লাইন ঠেকেছে সটান কলের মুখে। রোজের মতো জল এসে, চলেও গিয়েছে। কিন্তু জল নিয়ে বেলা গড়িয়ে চলছে জোর জটলা। এ দৃশ্য নিহারিপট্টির দুর্গা মন্দিরের সামনে। এক দিন নয়, প্রতিদিনের জল-যন্ত্রণার চেনা এই ছবিই ভাবাচ্ছে জেলার বাণিজ্য শহর সাঁইথিয়াকে।
এ শহরের জল-যন্ত্রণা কোনও নতুন খবর নয়। একদা জলা-ভূমির শহরই এখন জল সঙ্কটে ভোগে সারা বছর। দুর্ভোগ সাঁইথিয়ার সর্বত্র। তা সে, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিলগাবা জলাশয়ের পুবপাড় এলাকা হোক অথবা, নিহারিপট্টি, সূর্যসেন পল্লি, মনসাপল্লি, টিবিগড়ে পাড়া। জল আসে যেমন দেরিতে, এই সমস্ত এলাকায়, জল চলেও যায় তাড়াতাড়ি। সমস্যা নিয়ে তাই অভিযোগ- পাল্টা অভিযোগের শেষ নেই বাসিন্দাদের। কোনও সদুত্তর নেই প্রশাসনের কাছেও।
সাঁইথিয়ায় প্রথম জলাধার নির্মাণ হয় একাত্তরে। জলাধারটি ছিল দু’ লক্ষ বাহাত্তর হাজার চারশো লিটারের। সে সময় সাঁইথিয়া শহরের জনসংখ্যা ছিল ২৫ হাজার। শহর বাড়লে দ্বিতীয় জলাধার নির্মাণ হয় সাতাশিতে। যার জলধারণ ক্ষমতা ৪.৫৪ লক্ষ লিটার। এছাড়া সাঁইথিয়ায় গত কয়েক বছরে ১১৫০টি টিউবওয়েল ও ৭২টি সাব-মার্সিবল পাম্প বসেছে। পুরসভার দাবি, “গড়ে প্রতিদিন ৩০ লক্ষ লিটার জল দেওয়া হয় শহরে।” পুরসভার পরিসংখ্যানই বলছে, যে পরিমান জলের প্রয়োজন, তার তুলনায় অর্ধেক এখন দেওয়া হয়। শহরে দরকার আরও ৩০ লক্ষ ৮৪০ লিটার জলের।
নজরুল পল্লির জটলাতেই জলকষ্টের কথা বলছিলেন রেজিনা বিবি, শেখ আজিমরা। “আমাদের এলাকা উঁচু হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই দু’চার মিনিট পরে কলে জল আসে। চলেও যায় তাড়াতাড়ি। মাঝে মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েও জল পায় না।”
২০০৫ সালে পিএইচইর কাছ থেকে পুরসভা জলের দায়িত্ব নিয়েছিল। দুটি জলাধার থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ৩০ কিলোমিটার জলের ডিস্ট্রিবিউশন পাইপে জল দেওয়া হয়। ৫৫০টি স্ট্যান্ড পোস্ট ও ৪৩৮ টি হাউস কানেকশন রয়েছে সেই পরিষেবায়। কিন্তু শহরে দিনে দু’বার জল দেওয়া হলেও, চাহিদার তুলনায় তা কম। বাসিন্দাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ সে নিয়েই।
সংস্কারের অভাবে চাঁই ভেঙে পড়ছে বিবেকানন্দ পল্লির জলাধার থেকে।
যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
সাঁইথিয়ায় মাটির নীচে পাথর ও খড়ি মাটি থাকায় জলের লেয়ার এতটাই নীচে যে টিউবওয়েলও বসানো যায় না। পুরসভার দেওয়া জলের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় বাসিন্দাদের। শহরে হাতেগোনা যে কয়েকটি জলাশয় রয়েছে, গরমে শুকিয়ে যায় তাও। কুয়োগুলিরও একই অবস্থা। সাঁইথিয়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রমপল্লীর বাসিন্দা দিলীপ ধারা বা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মালবেড়িয়ার মঙ্গলময় চৌধুরী, মুরাডিহির তাপস বাগদিরা জানান, পুরসভা বলছে জলের নতুন প্রকল্প হয়ে গেলে আর জলের সমস্যা থাকবে না। কিন্তু সেটা কতটা সে নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, শহর বেড়েছে আগের থেকে।
একই ওয়ার্ডের সূর্যসেন পল্লীর বাসিন্দা সুশীল বসাকের দাবি, “এ পাড়ায় খুব জলকষ্ট। কাছাকাছি অভেদানন্দ পল্লীর গভীর নলকূপটিও দীর্ঘদিন থেকে খারাপ। এতে জল সমস্যা আরও বেড়ে গেছে।” জানা গেল, বিভিন্ন এলাকায় জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে বচসা ও বচসা থেকে হাতাহাতির হয় প্রায়ই। এমনকি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে।
বিদায়ী পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত বলেন, “সরকারি অনুমোদনের টাকায় দুটি ওভার হেড ও দুটি আন্ডার গ্রাউন্ড জলাধার, তিনটি ডিপ-টিউবওয়েল, তিনটি পাম্প ও আরও কিছু জল প্রকল্পের সরঞ্জাম কেনা হবে। ইতিমধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবপুরে জলাধারের কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুটি জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা যথাক্রমে ৫.৬৭ লক্ষ ৫০০ লিটার ও ১.৩৫ লক্ষ লিটার। অন্যদিকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি জলাধারের কাজও প্রায় শেষের দিকে। এগুলি হলে সমস্যা মিটে যাবে।” উপ-পুরপ্রধান শান্তুনু রায় বলেন, “সাঁইথিয়ার জল সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এখন আর আগের মত সমস্যা নাই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে উঁচু এলাকার কোথাও কোথাও জল নিয়ে এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে। সেও আর বেশি দিন থাকবে না।”
ছবি: অনির্বাণ সেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy