Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নির্দেশে তুড়ি, বেড়াতে গেলেন ৮ তৃণমূল সদস্য

জেলা পরিষদের ৩৮ জন সদস্যের মধ্যে শাসকদলেরই ৩১। আর তাঁদের মধ্যে ২০ জনই এক সঙ্গে চলে যাচ্ছিলেন আন্দামান বেড়াতে! সেই সফরের খরচের উৎস নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় এবং ২০ জন সদস্য জেলা পরিষদ ফেলে চলে গেলে নানা প্রশ্ন উঠবে, তা বুঝে শেষ মুহূর্তে ওই সফর বাতিল করতে বলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও শুক্রবার আন্দামানে গিয়েছেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি এবং একাধিক কর্মাধ্যক্ষ।

পুরুলিয়া জিলা পরিষদের সহকারী সভাপতি মীরা বাউরি গিয়েছেন আন্দামান। অফিসঘর তাই ফাঁকা। ছবি: সুজিত মাহাতো

পুরুলিয়া জিলা পরিষদের সহকারী সভাপতি মীরা বাউরি গিয়েছেন আন্দামান। অফিসঘর তাই ফাঁকা। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

জেলা পরিষদের ৩৮ জন সদস্যের মধ্যে শাসকদলেরই ৩১। আর তাঁদের মধ্যে ২০ জনই এক সঙ্গে চলে যাচ্ছিলেন আন্দামান বেড়াতে!

সেই সফরের খরচের উৎস নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় এবং ২০ জন সদস্য জেলা পরিষদ ফেলে চলে গেলে নানা প্রশ্ন উঠবে, তা বুঝে শেষ মুহূর্তে ওই সফর বাতিল করতে বলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও শুক্রবার আন্দামানে গিয়েছেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি এবং একাধিক কর্মাধ্যক্ষ। দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে ওই আট জন জেলা পরিষদ সদস্য কী ভাবে বেড়াতে চলে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলেই। ওই আট জনকে দলীয় তদন্তের মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো।

সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, সহ-সভাধিপতি মীরা বাউরি এবং কর্মাধ্যক্ষ মিলিয়ে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ২২ জন তৃণমূল সদস্যের আন্দামানে যাওয়ার কথা ছিল এ দিন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন আরও কয়েক জন, যাঁরা বিভিন্ন ভাবে সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি ও কর্মাধ্যক্ষদের ঘনিষ্ঠ বলে জানা যাচ্ছে। জেলা পরিষদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আন্দামানে প্রতিকূল প্রকৃতির মাঝে কী ভাবে সেখানকার জনজাতিরা লড়াই করে টিকে রয়েছে, তা সরেজমিন দেখে এসে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় বসবাস করা জনজাতিদের জন্য কিছু পরিকল্পনা করা যায় কি না, সেই লক্ষ্যেই এই সফর। তবে, এত জনের সফরের বিপুল খরচ কে জোগাচ্ছে, তা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে প্রশ্ন ছিল প্রথম থেকেই।

প্রশ্নের সদুত্তর না মেলায় জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সফর থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর বক্তব্য, “সরকারি অর্থে সফর হচ্ছে না। কিন্তু, সফরের খরচের উৎস কী, তা বহু বার জানতে চেয়েও ঠিকঠাক জবাব পাইনি। তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।” যাবেন না বলে ঠিক করেছিলেন সভাধিপতিও। তাঁর মন্তব্য, “আমার যাওয়ার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না! তা ছাড়া আমি তো জেলা পরিষদের নেতা।”

সহকারী সভাধিপতি-সহ জেলা পরিষদের ২০ জন সদস্য অবশ্য আন্দামান যাওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন। খবর পেয়ে দলের দুই শীর্ষ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলা নেতৃত্বের মাধ্যমে এই সফর বাতিল করার কথা জানিয়ে দেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, যে-হেতু শুক্রবার সকালেই আন্দামানের উড়ান, তাই জেলা পরিষদের ওই সদস্যদের বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার মধ্যে জেলা পরিষদ ভবনে পৌঁছতে বলা হয়। সল্টলেকে জেলা পরিষদের নিজস্ব ভবনে তাঁদের রাত্রিবাসেরও ব্যবস্থাও হয়ে যায়। জেলার তৃণমূল নেতা তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বৃহস্পতিবার সকালেই কলকাতা চলে যান। বাকি সদস্যেরা জেলা পরিষদে পৌঁছনোর পরেই সভাধপিতি তাঁদের জানিয়ে দেন, দলীয় নেতৃত্ব আন্দামান সফর বাতিল করেছেন। ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেলার পরে আচমকা সফর বাতিল হওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হলেও অধিকাংশ সদস্যই বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু, ৯ সদস্য সল্টলেকে চলে যান। তাঁরা জেলার রাজনীতিতে সভাধিপতি সৃষ্টিধরবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত।

সল্টলেকে পৌঁছেও বিতর্ক এড়াতে শেষমেশ আর বিমান ধরেননি জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয়বাবুও সফর বাতিল করেন। বাকি আট জন দলের নির্দেশ উপেক্ষা করেই আন্দামান চলে যান এ দিন সকালে। সুজয়বাবুর কথায়, “আমিও যেতাম, এটা সত্যি। কিন্তু, যাওয়ার আগে দলীয় নেতৃত্বের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন মনে করেছিলাম। সেটা না পেয়ে যাইনি।” এক সঙ্গে এত জন জেলা পরিষদ সদস্যের আন্দামান ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এর মধ্যে বিতর্কের কিছু দেখছেন না সভাধিপতি। তাঁর দাবি, “ঠিকঠাক ভাবে উন্নয়নের কাজে মনোনিবেশ করার লক্ষ্যে আমাদের সদস্যদের যদি কোথাও ভ্রমণে যেতে হয় তো যাবেন! এতে দোষ কী আছে?”

কিন্তু, সফরের খরচের উৎস? সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “জেলা পরিষদ এই সফরের খরচ বহন করছে না, এটা বলতে পারি।” আন্দামান পৌঁছে যাওয়া জেলা পরিষদের নারী ও শিশু কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ নিয়তি মাহাতোরও দাবি, “আমরা ব্যক্তিগত অর্থে যাচ্ছি। বিতর্কের কী আছে?”

জেলা পরিষদের অলিন্দে কিন্তু প্রশ্ন ঘুরছে, সফরের খরচ পুরোটাই কি ব্যক্তিগত? সে কারণেই জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বিষয়টি হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “এই সফর শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই বাতিল হয়েছিল। কয়েক জন তবু গিয়েছেন। ঘটনা যাই হোক, দলীয় স্তরে তদন্ত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prasanta pal tmc purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE