Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পথে নেই বাস, দুর্ভোগের সেই চেনা ছবি

ভোগান্তি যে হবেই, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল দু’দিন আগে থেকেই। সোমবার ছবিটা আরও স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠল। শাসক দলের ‘শহিদ দিবস’ পালনের দিন বাঁকুড়া জেলা কার্যত রইল বাস-শূন্য। আর তার জেরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন বাইরে বেরিয়ে গাড়ি খুঁজতে নাজেহাল হতে হল সাধারণ মানুষকে। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের জন্য তৃণমূল বাস ও গাড়ি তুলে নেওয়ায় শনিবার থেকেই বাঁকুড়ার বিভিন্ন রুটে বেসরকারি বাস কম চলছে।

বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। বাঁকুড়া শহরে।

বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। বাঁকুড়া শহরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

ভোগান্তি যে হবেই, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল দু’দিন আগে থেকেই। সোমবার ছবিটা আরও স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠল। শাসক দলের ‘শহিদ দিবস’ পালনের দিন বাঁকুড়া জেলা কার্যত রইল বাস-শূন্য। আর তার জেরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন বাইরে বেরিয়ে গাড়ি খুঁজতে নাজেহাল হতে হল সাধারণ মানুষকে।

২১ জুলাইয়ের সমাবেশের জন্য তৃণমূল বাস ও গাড়ি তুলে নেওয়ায় শনিবার থেকেই বাঁকুড়ার বিভিন্ন রুটে বেসরকারি বাস কম চলছে। ওই দিন পাত্রসায়রের ফকিরডাঙা মোড়ে লাঠি হাতে বাস আটকে যাত্রীদের নামিয়ে জোর করে বাস দখল করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জেলার বাস মালিকদের একাংশ ওই ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন রবিবারও। যার জেরে পরিবহণ ব্যবস্থা সে দিন থেকেই ব্যাহত হতে শুরু করে। বাস না পেয়ে রবিবার দিনভর বাঁকুড়া, খাতড়া, বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে অনেকেই ট্রাক, ম্যাটাডর, ট্রেকার বা ছোট গাড়িতে মোটা অঙ্কের টাকা গুনে গন্তব্যস্থলে যেতে বাধ্য হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার কিছু বাস মালিক বলেন, “ব্লকে ব্লকে তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠীর একাধিক নেতারা বাস ‘বুক’ করেছেন। একটা সময় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, একটিই বাস, অথচ চার গোষ্ঠীর চার নেতা তাঁদের অনুগামীদের জন্য সেই বাসকে ‘বুক’ করেছেন।” কাকে ছেড়ে কাকে বাস দেবেন, ঠিক করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বাস চালানোই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বাস মালিকদের! কারণ, যে গোষ্ঠীর নেতাকে বাস দেওয়া হবে, অন্য গোষ্ঠীর তাতে গোসা হবে। ফলে, তৃণমূলের সভায় হয়তো অনেক বাস যায়নি। তবে, পথে না নেমে গ্যারাজ বন্দি হয়েই থেকেছে সেই সব বাস। শাসক দলকে চটিয়ে রাস্তায় বাস নামানোর ঝুঁকি নিতে চাননি বাস মালিকেরা। সমিতির জেলা সম্পাদক জগন্নাথ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “বেশির ভাগ বাসই চলেছে। কিছু বাস কলকাতায় বৈঠকে গিয়েছে। তবে মানুষের কথা ভেবে আমরা একই রুটে একাধিক বার বাস চালিয়েছি।”

জগন্নাথবাবু এই দাবি করলেও জেলা জুড়ে বিপর্যস্ত পরিবহণ ব্যবস্থার ছবি কিন্তু অন্য কথা বলছে। এ দিন বাঁকুড়ার জেলার বিভিন্ন রুটে বাস কার্যত চলেইনি। খাতড়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে এ দিনও বাসের অপেক্ষায় থেকে নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা। ভরসা করতে হয়েছে ছোট গাড়ির উপরেই। ছাদ খোলা মিনি ট্রাক বা ম্যাটাডরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বহু মানুষকে যাতায়াত করতে হয়েছে। আর হাতেগোনা যে ক’টি সরকারি বাস চলছে, তার প্রতিটিই ছিল ভিড়ে ঠাসা। ফলে, অনেকেই সেই বাসগুলিতে উঠতে পারেননি। বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা, জয়পুর ব্লকের একটি স্কুলের শিক্ষক বলেন, “শহিদ দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি তো আর নেই। তাই স্কুল ছিল খোলা। বাস না থাকায় এক বন্ধুর মোটরবাইকে চড়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের।”

হাতের পাঁচ সরকারি বাসে ওঠার জন্য তুমুল ভিড় বিষ্ণুপুরে।

বড়জোড়ার বাসিন্দা, একটি গৃহনির্মাণ ঋণদানকারী সংস্থার কর্মী শুভজিৎ ঘোষ বলেন, “মিটিং-মিছিলের দিনে এ ভাবে বাস তুলে নিলে সাধারণ মানুষের খুবই সমস্যা হয়। বহু মানুষ পরিবার নিয়ে বাস না পেয়ে রাস্তায় সমস্যায় পড়েছেন। ছোট গাড়িতে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে। সরকার যাত্রীদের কথা একটু ভাবলে ভাল হয়।”

বাঁকুড়ার জেলা শাসক বিজয় ভারতী বলেন, “এ দিন বেশি পরিমাণ সরকারি বাস চালানো হয়েছে। যাত্রীরা কোথাও সমস্যায় পড়েছে বলে আমার কাছে অভিযোগ আসেনি।” এ কথা শুনে এ দিনের দুর্ভোগের শিকার এক যাত্রীর কটাক্ষ, “সারা দিন যা নাকাল হয়েছি, তার পরে আবার অভিযোগ জানানোর ফুরসত কোথায়!”

বাঁকুড়ায় বাস পরিষেবা বিপর্যন্ত হলেও পুরুলিয়া জেলায় পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি। তবে, অন্য দিনের তুলনায় এখানেও বেসরকারি বাস অনেক কম চলেছে। এ দিন হুড়া থানার কুলবনা যাওয়ার জন্য পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন অজিত মাহাতো। তিনি বলেন, “সব বাস আমাদের গ্রামে দাঁড়ায় না। শুধু লোকাল বাস দাঁড়ায়। কিন্তু, তৃণমূলের সভার জন্য কিছু লোকাল বাস তুলে নেওয়ায় দীর্ঘক্ষণ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।”

একই ভাবে আড়শা থানার কাঁটাডি গ্রামে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে এসে সুধীর হাঁসদা, সীতারাম টুডুরা বলেন, “বাস অনেক কম চলছে। এক একটা বাসে ভিড়ের চাপে উঠতেই পারিনি।” পুরুলিয়া বাসমালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্তের দাবি, “আমাদের জেলায় প্রায় ৪০০ বেসরকারি বাস চলে। তার মধ্যে হাতেগোনা ২০টি বাস সভার জন্য নেওয়া হয়েছে। তাই খুব একটা প্রভাব জেলায় পড়েনি।”

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia 21st july martyr’s day over crowded buses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE