শহরের ভিতরের ফাঁকা জায়গায় মাথা তুলছে বাড়ি। শহরের সীমানাতেও বাড়ছে বসতি। গত এক দশকে পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দাও বেড়েছে অনেক। কিন্তু শহরের ভিতরের নতুন বসতি এলাকায় মিলছে না ন্যূনতম পরিষেবা। এ নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের শেষ নেই। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভায় ক্ষমতার বদল হয়, কিন্তু ওই সব এলাকার বেহাল অবস্থার পরিবর্তন হয় না।
পঞ্চকোট রাজাদের আমলে এই এলাকার রাজধানী ছিল প্রথমে ঝালদা। পরে গড় পঞ্চকোট, শেষে কাশীপুর। পরবর্তীকালে মানভূম জেলার সদর হয় মানবাজার। পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে জেলার সদর সরে আসে পুরুলিয়ায়। স্বাধীনতার পরে মানভূম জেলা জেলা বিহারের অন্তর্ভূক্ত হয়। এ রাজ্যে অন্তর্ভূক্তি ও বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার স্বীকৃতির দাবিতে পরে আন্দোশন শুরু হয়। শেষে ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর তাঁদের দাবি পূরণ হয়। তৈরি হয় এ রাজ্যের নতুন জেলা পুরুলিয়া। তখনও পুরুলিয়া ছিল ছোট জনপদ। ধীরে ধীরে শহরে বসতি বাড়তে থাকে। পুরুলিয়া পুরসভার বয়স অবশ্য কম নয়। স্থাপিত হয়েছিল ১৮৭৬ সালে। ধীরে ধীরে পুরএলাকায় নতুন নতুন পাড়া অন্তর্ভূক্ত হয়। শহরের সীমানা বাড়তে বাড়তে এখন ২২টি ওয়ার্ড তৈরি হয়েছে। কিন্তু গত এক দশকে গাঁ গঞ্জ থেকেও বহু বাসিন্দা শহরে উঠে আসায় পুরুলিয়া এখন চারদিক দিয়েই বেড়ে গিয়েছে। পুর-এলাকার বাইরে পঞ্চায়েত এলাকাতেও নিত্যনতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে।
(সঙ্গের ছবিটি ন’ডিহা রামকৃষ্ণপল্লির। রাস্তা বলে কিছু নেই। অল্প বৃষ্টিতেই দুর্বিষহ যাতায়াত।) ছবি: সুজিত মাহাতো।
জেলা সদর হাসপাতাল থেকে প্রচুর স্কুল, কলেজে এই শহরে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে মাল্টিসুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। তাই প্রান্তীয় এই জেলা সদরের গুরুত্বও ইদানীং অনেক বেড়ে গিয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েকবছর আগে জঙ্গলমহলে মাওবাদী উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তুলনামূলক অবস্থাপন্ন অনেকে ভিটে ছেড়ে শহরে এসে ঘর বেঁধেছেন। চাকরিজীবীরাও অনেকে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে উঠে এসেছেন। দেখতে দেখতে এ ভাবে পুরুলিয়া শহরে এখন বসত এলাকা অনেক বেড়ে গিয়েছে।
কিন্তু সে তুলনায় ওই সব নতুন বসতি এলাকায় পুরপরিষেবা এখনও ভালভাবে পৌঁছয়নি। ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই। তাঁদের কথায়, “আমরা কোন সমস্যার কথা বাদ দেব? পানীয় জল, রাস্তাঘাট নেই। নিকাশী না থাকায় কাঁচা রাস্তা সব সময় নোংরা জলে ভাসছে। তার উপরে অনেক এলাকায় রাতে রাস্তায় আলোর ব্যবস্থাটুকুও নেই।” শহরের চৌহদ্দি ঘিরে এমনই নানাবিধ অভিযোগ বাসিন্দাদের।
শহরের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থল আমডিহা এলাকার পিছনের দিকে গত চার-পাঁচ বছরে অনেক ঘরবাড়ি উঠেছে। একই ভাবে নতুন বসতি তৈরি হয়েছে ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে আশ্রম ও কেতিকা বাঁধ লাগোয়া এলাকায়। কয়েক বছর আগে সেখানে ফাঁকা জমি পড়ে থাকত। সেই এলাকাতেই এখন নতুন বাড়ি মাথা তুলেছে। এই শহরের ১, ১৬ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া এলাকাতেও একই ছবি। পুরুলিয়া-কোটশিলা রেললাইনের ওপারের ফাঁকা জমিতেও বসতি বেড়েছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া শ্মশানকালী মন্দির ও তেলকল পাড়া লাগোয়া এলাকা এবং ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া এলাকাতেও নতুন বসতি বেড়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহর বাড়ছে। তবে অপরিকল্পিত ভাবে। এ দিকে পুরসভার কাছ থেকে সামান্য পরিষেবা না পাওয়ায় বাস করা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কর্পূরবাগানের প্রদীপ বাউড়ি, কেতিকাবাঁধ এলাকার বাসিন্দা প্রবোধ মাহাতোর কথায়, “আমাদের পাড়ায় পানীয় জলের সংযোগ নেই। দূর থেকে জল আনতে হয়। এ ভাবে কত দিন চলবে?” আবার একই রকম সমস্যায় রয়েছেন পুরসভার ঠিক সীমানার বাইরে থাকা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাও।
মলয় রায়, চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থল বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা। তাঁরা বলেন, “বাড়ির দরজার বাইরেই পুরএলাকা। আমরা পঞ্চায়েত এলাকায় থাকি। ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ হয়ে রয়েছি। রাস্তা, জল, নিকাশী কিছুই নেই। পুরএলাকা বাড়বে বলে শুনছি, কিন্তু কবে হবে?” সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy