Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
জয়পুর-হত্যাকাণ্ড

প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে খুন, দাবি অনিতার

প্রেমিকের সাহায্যে নিজের জা ও তাঁর শিশুকন্যাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে ছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করলেন বাঁকুড়ার জয়পুর-হত্যাকাণ্ডে ধৃত মহিলা। শুক্রবার বিষ্ণুপুর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের কাছেও অনিতা চট্টোপাধ্যায় নামে ওই মহিলা একই দাবি করেছেন। তবে পুলিশ তাতে আমল দিচ্ছে না। পুলিশের দাবি, স্বামীকে বাঁচাতে এখন অনিতা গল্প ফেঁদেছেন।

আদালতের পথে। মা ও শিশুকন্যা খুনে অভিযুক্ত অনিতা চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর স্বামী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার।  —নিজস্ব চিত্র।

আদালতের পথে। মা ও শিশুকন্যা খুনে অভিযুক্ত অনিতা চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর স্বামী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

প্রেমিকের সাহায্যে নিজের জা ও তাঁর শিশুকন্যাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে ছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করলেন বাঁকুড়ার জয়পুর-হত্যাকাণ্ডে ধৃত মহিলা। শুক্রবার বিষ্ণুপুর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের কাছেও অনিতা চট্টোপাধ্যায় নামে ওই মহিলা একই দাবি করেছেন। তবে পুলিশ তাতে আমল দিচ্ছে না। পুলিশের দাবি, স্বামীকে বাঁচাতে এখন অনিতা গল্প ফেঁদেছেন। এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পবিত্র সেনের এজলাসে ধৃত অনিতা ও তার স্বামী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়কে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

বাঁকুড়ার জয়পুর থানার গেলিয়া অঞ্চলের মাধবপুর গ্রামের মমতা চট্টোপাধ্যায় (২৩) ও তাঁর দেড় বছরের মেয়ে অনন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার আনতে গিয়েছিলেন অনিতা। তারপর থেকে বাড়িতে ফেরেননি মমতা ও তাঁর মেয়ে। বৃহস্পতিবার অনিতার বাড়ির উঠোনে লেবু গাছের তলায় মাটির স্তূপ দেখে সন্দেহ হওয়ায় বাসিন্দারা গিয়ে দেখেন গর্ত রয়েছে। এলাকার ছেলেরা মাটি খোঁড়া শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই পচা গন্ধ। তারও পরে বেরিয়ে আসে জুতো। খোঁড়া বন্ধ করে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে গর্ত খুঁড়ে মমতা ও তাঁর মেয়ের দেহ উদ্ধার করে। ধরা হয় অনিতা ও তার স্বামী প্রদীপকে। সে দিনই পুলিশ দাবি করেছিল, জেরায় ধৃত দম্পতি খুনের কথা স্বীকার করেছে।

কিন্তু শুক্রবার বিষ্ণুপুর আদালত থেকে বের হওয়ায় সময় অনিতা দাবি করেন, “আমার স্বামী একটা মুরগিই কাটতে পারে না। তার উপরে ভাইঝিকে ও সত্যিই ভালবাসে। সে এ সব পারবে না জেনেই আমি প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে দু’জনকেই খুন করেছি।” তিনি ওই প্রেমিক বলে এলাকার এক যুবকের নামও করেছেন। তাঁর দাবি, “আমার স্বামীকে শ্বশুর-শাশুড়ি সম্পত্তির কিছুই দেয়নি। সব দিয়েছে তাঁদের ছোট ছেলেকে (মমতার স্বামী সন্দীপ)। এই নিয়ে বিয়ের পর থেকেই আমার রাগ ছিল।” এরপরেই সে জানায়, বুধবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে মমতা ও তাঁর মেয়েকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরে। সেখানে তার প্রেমিক যুবকটি ছিল। অনিতার কথায়, “প্রথমে মমতার মাথায় রডের বাড়ি মেরে এবং পরে তার মেয়েকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। সবই করেছে আমার প্রেমিক। আমি তাকে সাহায্য করেছি। পরে মাটি খুঁড়ে প্রেমিককে নিয়েই দেহগুলো পুঁতে ফেলা হয়।” অনিতা যখন আদালত চত্বরে সংবাদমাধ্যমের কাছে এই দাবি করছেন, তখন পাশেই ছিল তার স্বামী প্রদীপ। কিন্তু সে এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চায়নি। ন’মাসের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সে পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়ে।

বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী ও মেয়েকে খুনের জন্য দাদা-বৌদিকে দায়ি করে জয়পুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত মমতার স্বামী সন্দীপ। তিনিও দাবি করেন, “বৌদির কাছে অনেক দুষ্টু লোকের আনাগোনা ছিল। অনেকদিন ধরেই পরিকল্পনা করে আমার বউ-মেয়েকে মারল ওরা। পুলিশ সবাইকে ধরে কঠিন শাস্তি দিক। দাদা-বৌদির যেন ফাঁসি হয়।” তবে ওই তত্ত্ব মানতে চাইছে না পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক দাবি করেন, “অনিতা তাদের কাছেও জেরায় প্রেমিককে নিয়ে খুন করার কথা দাবি করেছে। কিন্তু সেই প্রেমিকের পরিচয় জানাতে গিয়ে একেক বার একেক জনের নাম জানিয়েছে। তার বক্তব্যও অসঙ্গতিপূর্ণ। তদন্তে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য সে পরিকল্পনা মাফিক এ সব বলছে।”

এ দিকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালের মর্গে এ দিন মা ও মেয়ের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মা ও মেয়ের দু’জনের মাথায় বাঁ দিকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মেয়েটির মাথায় আঘাতের ছোট চিহ্ন ছিল। তবে মায়ের আঘাত বেশ গুরুতর ছিল। এ ক্ষেত্রে হাতুড়ি বা ভারী রড দিয়ে মারা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে শিশুটিকে শ্বাসরোধ করার কোনও লক্ষ্মণ বোঝা যায়নি।

মৃত বধূর কাকা নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারই পাশের সিন্দরাপট গ্রাম থেকে ভাইঝি ও নাতনির হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ছুটে আশেন। শুক্রবার তিনি বলেন, “ভাইঝি ও নাতনির খুনের খবর পেয়ে দাদাকে সামলানো যাচ্ছে না। এমন ঘটনা যারা ঘটাতে পারে, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।” এ দিন ছুটির দিন থাকলেও ওই নৃশংস খুনের ঘটনায় ধৃত দম্পতিকে দেখতে বিষ্ণুপুর আদালত চত্বরে ভিড় জমান বহু মানুষ। তাঁরাও এই ঘটনায় দোষিদের কড়া শাস্তির দাবি তোলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jaipur murder case bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE