Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পাড়ুইয়ে বিক্ষুব্ধদের উপরে হামলা চলছেই, অভিযুক্ত অনুব্রত-ঘনিষ্ঠরা

দলের এক বিক্ষুব্ধ কর্মীর উপরে বোমা নিয়ে হামলা হয়েছিল মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবার হামলা হল আরও কিছু বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে। দু’টি ঘটনাতেই অভিযোগের তির বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের দিকে।

এই মহিলার বাড়িতেই পুলিশ তল্লাশির নামে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ। তার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভেড়ামারি গ্রামের এই বাসিন্দা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

এই মহিলার বাড়িতেই পুলিশ তল্লাশির নামে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ। তার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভেড়ামারি গ্রামের এই বাসিন্দা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০২:২৯
Share: Save:

দলের এক বিক্ষুব্ধ কর্মীর উপরে বোমা নিয়ে হামলা হয়েছিল মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবার হামলা হল আরও কিছু বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে। দু’টি ঘটনাতেই অভিযোগের তির বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের দিকে।

পঞ্চায়েত ভোটের আগের মতোই নতুন করে তেতে উঠছে বীরভূমের পাড়ুই। মঙ্গলবার রাতে পাড়ুইয়ের সাত্তোর পঞ্চায়েতের ভেড়ামারি গ্রামে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় বাবু শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীর পা গুরুতর জখম হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনায় অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ, সাত্তোর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ মুস্তফা-সহ ২১ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভেড়ামারি গ্রামেই দফায় দফায় বোমাবাজি হয়। লুঠপাট চলে একাধিক ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে। ওই ঘটনাতেও অভিযুক্ত শেখ মুস্তফা। সন্ধ্যা অবধি অবশ্য এ নিয়ে থানায় অভিযোগ হয়নি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পঞ্চায়েত ভোট ও লোকসভা ভোটে এই জেলায় বিপুল সাফল্য পাওয়ার পরেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামছে না। জেলায় শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি-ও। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১০ জুলাই বীরভূমে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জেলা সফরের কথা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী।

এ দিন সকালে ভেড়ামারি গ্রামে প্রথম হামলা হয় পশ্চিমপাড়ার ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল কর্মী লালচাঁদ শেখের বাড়িতে। লালচাঁদ ও তাঁর ভাই মহসিন শেখের বাড়িতে বোমা মারতে মারতে দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ে। লালচাঁদের স্ত্রী মোমিনা বিবির অভিযোগ, “মুস্তফা আর তার সঙ্গী শেখ দুলালের লোকজন দরজার তালা বোমা মেরে ভাঙে। কোনও মতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে পালাই।” তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীদের হাতে লাঠি, রড, টাঙ্গি, আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। তারা আসবাবপত্র, চাল-ডাল ও সোনাদানা লুঠ করেছে। ঘটনার সময় পাঁচ বছরের ছেলে আর সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন মহসিনের স্ত্রী তাঞ্জিলা বিবিও। তাঁর অভিযোগ, গয়না, টাকা লুঠ হয়েছে। হামলা হয় পূর্বপাড়ার জিয়াউদ্দিন শেখের বাড়িতেও। তাঁর স্ত্রী তাজমা বিবি বলেন, “দুলালদের লোকজন পশ্চিমপাড়ার হামলা করেছে, খবর পেয়েই বুঝেছিলাম, এ বার আমাদের পালা! পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওরা এখানেও হামলা চালায়।” গ্রামে থাকা সমীচীন নয় বুঝে লালচাঁদ, মহসিন ও জিয়াউদ্দিন গা ঢাকা দেন।

এ দিন সকালে ভেড়ামারিতে গিয়ে দেখা গেল গ্রাম পুরষ-শূন্য। পশ্চিমপাড়ায় লালচাঁদ ও মহসিনের টিনের বাড়িতে হামলার চিহ্ন স্পষ্ট। এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদবের নেতৃত্বে বোলপুর, ইলামবাজার ও পাড়ুই থানার পুলিশ গ্রামে তল্লাশি শুরু করেছেন। আহমেদ হোসেন নামে এক বাসিন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে তল্লাশির নামে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশ অবশ্য তা মানেনি।

পূর্বপাড়ায় দেখা মিলল মঙ্গলবার হামলায় আহত বাবু শেখের স্ত্রী রোশেনা বিবির। তিনি বললেন, “সকাল থেকেই মুস্তফা আর দুলালের বাহিনী নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। কোনও নিরাপত্তা নেই।” ওই ঘটনাতেও পুলিশ কাউকে ধরেনি। পাড়ুইয়ের ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল নেতা নিমাই দাস অভিযোগ করেন, “অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বারবার আমাদের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর চাপেই পুলিশ পদক্ষেপ করছে না।” এ দিনই পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামে শেখ মুস্তফার দল অস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়ির সামনে হুমকি দিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ পঞ্চায়েত ভোটের আগে গুলিতে নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষের। তিনি বলেন, “দিনভর আতঙ্কে কাটিয়েছি। শুক্রবার পুলিশে অভিযোগ করব।”

বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার দাবি, “পুলিশ যথেষ্টই তৎপর। এ দিনের ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে।” মঙ্গলবারের ঘটনায় অভিযুক্তদের কেন ধরা হয়নি, তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। ঘটনাচক্রে বুধবার রাতেই বদলির চিঠি পেয়েছেন পাড়ুই থানার ওসি নীলোৎপল মিশ্র। দু-এক দিনের মধ্যে তাঁর মহম্মদবাজার থানায় যোগ দেওয়ার কথা।

হামলায় শেখ মুস্তফার জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর দাবি, “ভেড়ামারির ঘটনা তারকাটা নিয়ে সমাজবিরোধীদের নিজেদের ব্যাপার। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।” একই দাবি মুস্তফারও। তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে নিজের মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui anubrata mondal attack on tmc supporters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE