পাত পেড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
বর্ষাকালে চড়ুইভাতি! শুনে অবাক কালো মেঘের সামিয়ানার নীচে সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠে শালপাতায় পেটভরে খিচুড়ি খেলেন কয়েকশো মানুষ।
বৃহস্পতিবার এই বনভোজন হয়ে গেল ঝালদায়। শুধু ঝালদা পুরশহরেরই নয়, আশপাশের গাঁ থেকেও বহু বাসিন্দা এসেছিলেন বনভোজনে। বছরের পর বছর আষাঢ় মাসে উল্টোরথের পরে ত্রয়োদশী তিথিতে এমনই বনভোজনের সাক্ষী হয় ঝালদা।
এই অকাল চড়ুইভাতি আয়োজনের পিছনে একটি লোকগাথা ছড়িয়ে রয়েছে এলাকা জুড়ে। একদা পঞ্চকোট রাজবংশের রাজধানী ছিল ঝালদা। পরবর্তীকালে এই বংশের রাজধানী বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হলেও বংশধরদের অনেকেই রয়ে যান ঝালদায়। এই রাজবংশের বর্তমান উত্তরসূরী শিবাজী সিংহ দেও জানান, ঝালদা শহর থেকে কিছুটা দূরে নরহরা নামে একটি জঙ্গলে বহু বছর আগে এক তান্ত্রিক এক কালীমন্দিরে পুজোপাঠ করতেন। শোনা যায় তিনি বছরে একবার নরবলি দিতেন। কিন্তু ইংরেজ শাসকরা নরবলির খবর পেয়ে তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হন। বন্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ঝালদার রাজা উদ্ধবচন্দ্র সিংহ দেওকে। তিনি জঙ্গলে গিয়ে তান্ত্রিককে নরবলি বন্ধ করতে বলেন। তান্ত্রিক তা মেনে নেন। পাঁঠাবলি হবে বলে তিনি জানান। কিন্তু তিনি রাজার উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন। তান্ত্রিক জানান, রাজবংশের কেউই এখানে পুজোর সময় বলিদান দেখলে তাঁর অমঙ্গল হবে। পরে তা পরখ করতে গিয়ে তাঁধের বংশের একজন পাগল হয়ে যায়।
এখনও সেই আষাঢ় মাসের ত্রয়োদশীর দিনে পুজো হয়। এখনও পাঁঠা বলি হয়। মেয়েরা এখানে ব্রাত্য। তাঁরা এই পুজোয় যোগ দিতে পারেন না। এলাকায় এই দেবীর নানা মাহাত্ম্য ছড়িয়ে রয়েছে। প্রচুর মানুষজনও আসেন। এই মন্দিরে বলি দিয়ে সেই প্রসাদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায় না। এখানে বসেই খেতে হয়। তাই বলির পরে পাঁঠার মাংস তো হয়ই, এখানে খেতে হয় বলে আরও নানা পদ রান্না করে এখানেই বনভোজন সারা হয়। সময় বদালেও এই পুজোয় লোক সমাগম কমেনি। এ দিন বনভোজন উপলক্ষ্যে এই জঙ্গলে বহু মানুষ এসেছিলেন। ঝালদা ছাড়াও গোপালপুর, বাগবিন্ধ্যা, গুটিলোয়া, অর্জুনডি, মহকুদর-সহ আশপাশের গ্রামের লোকজন আসেন। দলে দলে ভাগ হয়ে দিনভর রান্না ও পুজোয় মেতে থাকলেন তাঁরা।
মহকুদরের যুধিষ্ঠির মাহাতো ও অর্জুনডির রাজেন মাহাতোরা বলেন, “অনেক দিনের প্রথা। আমরা পুজো দিলাম। এ বার সবাই মিলে রান্না করে খাওয়া দাওয়া করব।” দেখা হয়ে গেল ঝালদার প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমিও প্রতিবছর এখানে পাড়ার লোকজন নিয়ে আসি। আমাদের দলের মেনু ছিল খিচুড়ি ও মাংস।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy