Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাইক-বক্স রুখে পিঠ চাপড়ানি পেল পুলিশ

বাঁকুড়া শহরের পোদ্দারপাড়া থেকে যুগীপাড়া যাওয়ার রাস্তাটা কয়েকশো মিটার। কিন্তু ওই রাস্তার উপরেই প্রায় ১৫টি কালীপুজো হচ্ছে। মাইকের দৌরাত্ম্যে এলাকায় টেকা দায় হয় বলে প্রতি বছর অভিযোগ করতেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। সেই এলাকাবাসীই জানাচ্ছেন এ বার মাইক বাজেনি। তার বদলে বেজেছে ঢাকের বাদ্যি। এতেই পুজোর পরিবেশ আমূল বদলে গিয়েছে। খুশি সাধারণ মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

বাঁকুড়া শহরের পোদ্দারপাড়া থেকে যুগীপাড়া যাওয়ার রাস্তাটা কয়েকশো মিটার। কিন্তু ওই রাস্তার উপরেই প্রায় ১৫টি কালীপুজো হচ্ছে। মাইকের দৌরাত্ম্যে এলাকায় টেকা দায় হয় বলে প্রতি বছর অভিযোগ করতেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। সেই এলাকাবাসীই জানাচ্ছেন এ বার মাইক বাজেনি। তার বদলে বেজেছে ঢাকের বাদ্যি। এতেই পুজোর পরিবেশ আমূল বদলে গিয়েছে। খুশি সাধারণ মানুষ।

কমবেশি একই চিত্র গোটা বাঁকুড়া শহর জুড়ে। পুলিশের কড়াকড়িতেই হোক কিংবা শব্দদানবের ভক্তদের শুভবুদ্ধির উন্মেষই হোক, বাঁকুড়াবাসী এ বার কালীপুজোর রাতে মাইকের দাপাদাপি তেমনটা ছিল না। বাসিন্দারা শান্তিতে ঘুমোতে পেরেছেন। এমনটাই জানাচ্ছেন শান্তিপ্রিয় বাসিন্দারা।

প্রতি বছর মনসাপুজো, কালীপুজোর মতো উৎসবে মাইক ও সাউন্ডবক্সের দাপটে নাজেহাল দশা হয় শহরের মানুষের। কালীপুজোয় এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা শব্দবাজি। গত মনসা পুজোতেও মাইকের দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ হয়েছিলেন বাঁকুড়াবাসী। তখনও পুলিশকে হাত গুটিয়ে থাকতেই দেখেছে সাধারণ মানুষ। উল্টো চিত্র দেখা গেল এর কয়েক সপ্তাহ পরেই, শহরের লালবাজার এলাকার একটি সন্তোষী পুজোর ভাসানে। তীব্র স্বরে চলতে থাকা মাইক বন্ধ করতে গিয়ে ঝামেলা বাধে পুলিশের সঙ্গে জনতার। খোদ বাঁকুড়া সদর থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহা নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ভাসানে উপস্থিত জনতা তাঁকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বদলি করে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেয়। কিন্তু এতেও দমে না গিয়ে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে মাইক বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।

বাঁকুড়া পুরবাসীর অভিমত, ওই ঘটনার পর থেকেই শব্দ দূষণের দাপট কমতে শুরু করেছে বাঁকুড়ায়। ফি বছর এই ধরনেই উৎসবের পরে শব্দ-দূষণ নিয়ে অভিযোগ তুলতেন বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা। তিনিও এ বার মানছেন, “কালীপুজোয় বাজির শব্দে বা মাইকের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়নি। উল্টে ঢাকের বাদ্যি, ঝাঁঝ-ঘণ্টার আওয়াজ শোনা গিয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। লালবাজারে শব্দ দূষণ রুখতে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছিল। সেই ঘটনায় সচেতন হয়েছেন পুজো কমিটির কর্তারা।” যুগীপাড়ার প্রবীন বাসিন্দা কামাক্ষ্যাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “অন্যান্য বছর বাজি ও মাইকের আওয়াজে পুজোর পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যেত। বাড়িতে যে সব আত্মীয়রা আসতেন সকলেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়তেন। আমরাও অস্বস্তিতে থাকতাম। এ বার পুলিশের কড়াকড়িতেই চিত্রটা বদলে গিয়েছে।” একই বক্তব্য বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্তেরও। লালবাজারের ঘটনাটিকে তুলে ধরে তিনি বলেন, “পুলিশ একটু সক্রিয় হলেই সমাজ বদলাতে পারে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল।”

বাঁকুড়া শহরকে শব্দদূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে এ বার বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষ একাধিকবার পুজো কমিটির কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি নিজে পুজো মণ্ডপে গিয়েও মানুষকে সচেতন করেছেন। দুর্গাপুজোর আগে থেকেই বাজারগুলিতে নিষিদ্ধ শব্দ বাজি রুখতে একাধিকবার তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। বাঁকুড়া সদর থানার আইসি নিজে এই সব অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন। প্রায় ৬ লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ বাজিও উদ্ধার করা হয়।

কাটজুড়িডাঙা এলাকার এক বাজি ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “পুলিশ যে ভাবে এ বার ধর পাকড় শুরু করেছে, তাতে প্রকাশ্যে শব্দ বাজি বিক্রি করাটাই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। যেটুকু এনেছিলাম লুকিয়ে বিক্রি করেছি।” বাজি ব্যবসায়ীদের মতে, এ বার পুলিশ একেবারেই নমনীয় ব্যবহার করেনি। আর এই কড়া দাওয়াইয়েই ঘটে গিয়েছে পরিবর্তন। বাঁকুড়ার ধীবরপাড়া কালীময়ী সঙ্ঘ পুজো কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ ধীবর বলেন, “পুলিশের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। যেমন নির্দেশ পেয়েছিলাম, তেমন কাজ করেছি।” ধীবর পাড়ার পুজোয় অন্য বার বড়-বড় স্পিকারের সাউন্ড বক্স তীব্র স্বরে বাজাতে দেখা যেত। এ বার ছোট স্পিকারের বক্স বাজতে দেখা গিয়েছে। সাউন্ডের তীব্রতাও ছিল যথেষ্ট কম।

যদিও জেলার বাকি দুই মহকুমা শহর বিষ্ণুপুর ও খাতড়ায় বাজির দাপট কমেনি। বিষ্ণুপুর শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে মাঝ রাতেও মাইকের দাপাদাপি শোনা গিয়েছে। সঙ্গে শব্দ বাজির রমরমাও ছিল ব্যাপক। অন্য দিকে, খাতড়া মহকুমা শহরের চিত্রটাও এক। খাতড়ার আইনজীবী চঞ্চল রায় বলেন, “শব্দবাজি অন্য বছরের মতোই ফেটেছে। যদিও আগে যেমন অত্যাধিক পরিমাণে ফাটত, এ বার তাতে কিছুটা লাগাম পড়েছে।”

বাঁকুড়ার পুলশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, “শব্দ দূষণ রুখতে জেলার সবকটি থানাকেই তৎপর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে সচেতন হতে বলা হয়েছিল। জেলার কোনও প্রান্ত থেকেই পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।” পুলিশ সুপারের হুঁশিয়ারী, আগামী দিনে শব্দ দূষণ রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mike noise speaker kali pujo bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE