লাভপুরের বামনি বোমা-কাণ্ডের ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত নইমুদ্দিন শেখ ওরফে মনুকে বুধবার বোলপুরের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার ধরা পড়েছে শেখ ইসমাইলও। শেখ ইসমাইলের বাড়ির পিছনে বোমা বাঁধা হচ্ছিল।
সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, “লাভপুরের বামনি গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই থানার দরবারপুরের পশ্চিমপাড়া থেকে মঙ্গলবার নইমুদ্দিন শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসিজেএম পীযূষ ঘোষ ধৃতের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসারের আর্জি মতো আহত নহিমুদ্দিনের প্রয়োজনীয় চিকিত্সা যাতে বোলপুরের সংশোধনাগারে হয়, তার জন্য ওই সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আগামী ৭ মে অভিযুক্তকে ফের আদালতে তোলা হবে।” তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সুস্থ ও স্বাভাবিক হলে এই মামলার তদন্তের জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আর্জি জানাবেন মামলার তদন্তকারী অফিসার।
প্রসঙ্গত, সোমবার লাভপুর থানার বামনি গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ির পিছনে বোমা বাঁধার সময়ে বিস্ফোরণে শেখ বরজাহান ও হাসেম শেখ নামে দুই দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়। অভিযোগ, ওই দেহ দু’টি লোপাটের চেষ্টা করা হচ্ছিল। ওই দিন দুপুরে বামনি গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, ইসমাইলের বাড়ির পিছনে বিস্ফোরণের চিহ্ন। ওখানেই বোমা বাঁধার কাজ হচ্ছিল বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছিলেন। ঘটনার পরে দেওয়ালে ছিটকে আসা রক্তের দাগ যে গোবর জল দিয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, তা-ও স্পষ্ট। ইসমাইলের বাড়ি থেকে প্রায় একশো ফুট দূরে একটি পুকুর থেকে পুলিশ ও জওয়ানেরা দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া টিন, মোটরবাইক উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা সম্ভবত মোটরবাইকে করে এসেছিল। সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যেই তা পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ আসছে দেখে দেহ ফেলে বাকি দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়।
কিছু পুলিশকর্মী জানিয়েছিলেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন দরবারপুরের বাসিন্দা নিহত বরজাহান তখনও বেঁচেছিলেন। তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে বরজাহান দাবি করে, তাকে এবং কাজিপাড়ার হাসেম শেখ-সহ বেশ কয়েক জনকে বোমা বাঁধার জন্য ভাড়া করে এনেছিল ইসমাইলেরই আত্মীয় লালন শেখ। ইসমাইল, লালনও এলাকার তৃণমূল নেতা আব্দুল মান্নানের অনুগামী হিসাবে পরিচিত।
ওই ঘটনায় মঙ্গলবার এক জন ধরা পড়লেও বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃত নইমুদ্দিন দরবারপুরের সৈয়দ শেখের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। সৈয়দ শেখ আবার ২০১০ সালে লাভপুরের নবগ্রামে সিপিএম সমর্থক তিন ভাই খুনে অভিযুক্ত এবং মনিরুল ইসলামের সঙ্গে তিন মাস জেলও খেটেছেন। এক সময় সৈয়দ ও নইমুদ্দিন ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মী ছিল। তার পরে তারা মনিরুলের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেয়। এখন তারা তৃণমূল কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। নইমুদ্দিনের বিরুদ্ধে বালির ঘাট সংক্রান্ত ঝামেলা পাকানোর অভিযোগ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন রিপোর্ট দিয়েছে কমিশনকে। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায় অবশ্য বলেন, “লাভপুরে বিস্ফোরণের ঘটনায় চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে যার বাড়ির পিছনে বোমা বাধা হচ্ছিল সেই শেখ ইসমাইল-সহ দু’জন ধরা পড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy