নিহত তিন ছেলের মা জারিনা বিবি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
এফআইআর এবং জবানবন্দি একই ব্যক্তির। অথচ মূল অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে তিনি যাঁর নাম করেছেন, গোপন জবানবন্দিতে তাঁর আদৌ কোনও উল্লেখ নেই। কী ভাবে এটা সম্ভব হতে পারে? একই সঙ্গে প্রশ্ন ও বিস্ময় প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট।
মামলাটি বীরভূমের লাভপুরের। তিন ভাই খুনের মামলায় এফআইআর করেছিলেন বেঁচে যাওয়া চতুর্থ ভাই সানোয়ার শেখ। সেই এফআইআরে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের নাম আছে। অথচ সানোয়ার পরে আদালতে যে-গোপন জবানবন্দি দেন, তাতে মনিরুলের উল্লেখই নেই!
এফআইআরে নাম লিখলেও সানোয়ার তাঁর জবানবন্দিতে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কের নাম বাদ দিলেন কেন, সেই বিষয়ে সোমবার লাভপুর থানার আইসি-র রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। কী ভাবে এটা হল, ৫ মে-র মধ্যে হাইকোর্টে তা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইসি-কে। সেই রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান বিচারপতি দত্ত।
এ বিষয়ে আইনজীবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচারপতি জানতে চান, আবেদনকারীর এফআইআরের সঙ্গে জবানবন্দির এমন অসঙ্গতি থাকতে পারে কী ভাবে? আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, পুলিশ যে-এফআইআরের ভিত্তিতে ওই বিধায়ককে গ্রেফতার করে, সেটি করেছিলেন সানোয়ারই। তাতে মূল অভিযুক্ত হিসেবে মনিরুলেরই নাম ছিল। কিন্তু জবানবন্দি দিতে যাওয়ার আগে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে সুব্রতবাবু অভিযোগ করেন।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সুব্রতবাবু আদালতে বলেন, “জবানবন্দি দিতে যাওয়ার আগে সানোয়ারকে বলে দেওয়া হয়েছিল, কোন কোন নাম জবানবন্দিতে বলা যাবে না। যাঁর তিন দাদাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, সেই ঘটনার পর থেকে যিনি এখনও নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারেন না, তিনি কোন সাহসে জবানবন্দিতে মনিরুলের নাম বলবেন!” ২০১০-এর ৪ জুন রাতে লাভপুরের নবগ্রামে সানোয়ারের তিন দাদা খুন হন। রক্ষা পান সানোয়ার।
আবেদনকারীর কৌঁসুলির বক্তব্য শোনার পরেই বিচারপতি দত্ত লাভপুরের আইসি-র কাছে এই ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করেন। তিনি সরকার পক্ষের কাছে জানতে চান, একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় চার বছরেও চার্জশিট দেওয়া হল না। এটা কী করে সম্ভব? তদন্ত কী ভাবে চলছে? দেরি হচ্ছে কেন? লাভপুর থানার আইসি এখনও পর্যন্ত এ-সব প্রশ্নের কোনও যথাযথ জবাব দিতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। তাঁর নির্দেশ, আইসি-কে ৫ মে-র রিপোর্টে এই সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আইসি-র রিপোর্ট পাওয়ার পরে ১৪ মে-র মধ্যে আবেদনকারীর পক্ষ থেকে তার উত্তর দিতে হবে। জুনের প্রথম সপ্তাহে আবার এই মামলার শুনানি হবে।
খুনের মামলায় হাইকোর্টে রেহাই মেলেনি। তবে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য মনিরুলের বিরুদ্ধে আপাতত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। কারণ, শনিবার ভোট নিয়ে তিনি যে-মন্তব্য করেছিলেন, তার জন্য এ দিন কমিশনের কাছে ক্ষমা চান ওই বিধায়ক। শনিবার সাঁইথিয়ার হরিসড়া পঞ্চায়েতে রুদ্রনগরের কর্মিসভায় মনিরুল বলেছিলেন, “একটাও ভোট সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি-কে দিতে দেবেন না। বিজেপি-র একটি লোককেও ভোট দিতে দেবেন না, এই প্রতিশ্রুতি দিন। এই দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।” এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন রবিবারেই মনিরুলের কাছে ‘শো-কজ’ বা কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উত্তর দিয়েছেন মনিরুল।” কমিশন সূত্রের খবর, শো-কজের জবাবে মনিরুল তাঁর ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। মনিরুলের শনিবারের মন্তব্য নিয়ে দল যে কিছুটা অপ্রস্তুত, বোলপুরের বিধায়ক ও মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের মন্তব্যে তা স্পষ্ট। মৎস্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “বিধায়ক (মনিরুল) আসলে ওই ভাবে বলতে চাননি। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে বুঝিয়ে বলতে, যাতে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি কাউকে ভুল বুঝিয়ে ভোট পেয়ে না-যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy