Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বধূকে খুনের অভিযোগ বিষ্ণুপুরে

খবর পেয়ে সেখানে স্থানীয় কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় যান। তিনি বলেন, ‘‘বধূর বাপের বাড়ির লোকের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পরে তাঁরা থানায় অভিযোগ করতে যান।’’

ঘটনাস্থল: ঘরের ভিতরে তখনও পড়ে মিঠুর (ইনসেট) দেহ। তাঁর স্বামী সুকান্তকে জেরা করছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থল: ঘরের ভিতরে তখনও পড়ে মিঠুর (ইনসেট) দেহ। তাঁর স্বামী সুকান্তকে জেরা করছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:১৭
Share: Save:

এক বধূকে খুন করার অভিযোগ ঘিরে হইচই বাধল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বুধবার সকালে বিষ্ণুপুর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওস্তাদগলির ঘটনা। মৃত বধূর নাম মিঠু দে (২৮)। বেলায় তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করার পরে পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে, দেহটির ময়নাতদন্ত করানো হয়। এই ঘটনায় ওই বধূর দাদা হিড়বাঁধ থানার গোবরদা গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ দত্ত মিঠুর স্বামী সুকান্ত দে, শ্বশুর সঞ্জয় দে, খুড়শ্বশুর রাজা দে ও খুড়শাশুড়ি মুনমুন দে-র বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও অভিযুক্তদের দাবি, খুন করা হয়নি। অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয়েছে মিঠুর। পুলিশ অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। মৃত বধূর আড়াই বছরের একটি সন্তান রয়েছে।

পেশায় গয়নার কারিগর সন্দীপ জানান, বছর চারেক আগে জামা-কাপড়ের ব্যবসায়ী সুকান্ত দে-র সঙ্গে তাঁর বোনের বিয়ে হয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাবার মৃত্যুর চার দিনের মধ্যেই বোনের বিয়ে দিতে হয়। ওই পরিস্থিতিতে লাখখানেক টাকা খরচ করে, বরপণ দিয়ে বোনের বিয়ে দিই। কিন্তু বিয়ের এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বোনের উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়।’’ তাঁর দাবি, মাঝে মধ্যেই অশান্তি লেগে থাকত। তাঁর বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে মিটমাট করতে বলেছেন। কিন্তু অত্যাচার বন্ধ হয়নি। মিঠুও সংসার বাঁচানোর আশায় বাপের বাড়ি আসতে চাননি।

সন্দীপের জামাইবাবু জয়দেব দত্ত-র অভিযোগ, ‘‘বুধবার সকালে মিঠুর স্বামী ফোন করে প্রথমে জানায় সে অসুস্থ। আমি হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলতেই তখন জানায় মিঠু মারা গিয়েছে! শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে সুকান্তর বাড়ি গিয়ে দেখি, মেঝেতে মিঠু শুয়ে আছে। ঠোঁটের কোণ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে আছে।’’

সেই সময়েই তাঁরা মিঠুর শ্বশুরবাড়ির সামনে ক্ষোভ দেখান। তাঁরা দাবি তোলেন, মোটেই অসুস্থ হয়ে মিঠু মারা যাননি। মিঠুর দাদা সন্দীপ দত্ত দাবি করেন, ‘‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বোনকে খুন করা হয়েছে। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’ খবর পেয়ে সেখানে স্থানীয় কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় যান। তিনি বলেন, ‘‘বধূর বাপের বাড়ির লোকের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পরে তাঁরা থানায় অভিযোগ করতে যান।’’

স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত দে, দীপক দে বলেন,‘‘মিঠু খুবই হাসিখুশি মেয়ে ছিল। শনিবারও এক পড়শির বিয়েতে সবার সাথে আনন্দ করে। কোনও দিন ওই পরিবারে অশান্তি দেখিনি।’’ মিঠুর স্বামী সুকান্ত দাবি করেন, ‘‘কয়েক মাস ধরে মিঠু গলায় একটা টিউমার নিয়ে ভুগছিল। ডাক্তার দেখাচ্ছিলাম। শীঘ্রই বাঁকুড়ায় অস্ত্রোপচার করানোর কথা ছিল। কয়েকদিন ধরে ওর কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছিল। গলার স্বরও বসে গিয়েছিল। বুধবার ভোরে ডাকতে গিয়ে দেখি সাড়া নেই। স্থানীয় এক ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায়, মারা গিয়েছে। কী ভাবে এমনটা হল বুঝতে পারছি না।’’ সুকান্তর বাবা, কাকা বলেন, ‘‘হাসপাতলে নিয়ে গেলে দাহ করতে দেরি হবে বলে নিয়ে যাইনি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যু কারণ জানা যাবে। তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wife Man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE