Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আহত নবদম্পতি হাসপাতালে

বিয়ে সেরে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত ৪

সোমবার বালসা গ্রামের টুটুল লেটের ছেলে পিন্টুর বিয়ে হয় মল্লারপুর থানার প্রচন্দপুর গ্রামের লাল্টু লেটের মেয়ে মল্লিকার সঙ্গে। বিয়ে শেষে রাত বারোটা নাগাদ বর-কনে সহ দশ জন মাড়গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়।

বিপর্যয়: দুর্ঘটনার পর। নিজস্ব চিত্র

বিপর্যয়: দুর্ঘটনার পর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২১
Share: Save:

অসুস্থ ঠাকুমাকে নাতবৌ দেখাতে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে গভীর রাতেই বাড়ির পথ ধরেছিলেন মাড়গ্রামের পিন্টু লেট। পথে রামপুরহাটের কাছে ট্রাকের সঙ্গে বরের গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কায় বরযাত্রীদের চার জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল। গুরুতর জখম সদ্য বিবাহিত দম্পতিও। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি পিন্টু। আর নববধূ মল্লিকা হাতে, ঘাড়ে আঘাত নিয়ে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ রানিগঞ্জ–মোড়গ্রাম জাতীয় সড়কের রামপুরহাট থানার খরুণ মোড় এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন লেট পরিবারের জামাই বিপ্লব লেট (২৮), বরের খুড়তুতো ভাই প্রহ্লাদ লেট (২১), গাড়ি চালক বসন্ত হাজরা (২৫) এবং স্থানীয় বাসিন্দা লাবণ্যময় প্রামাণিক (৫৮)। প্রত্যেকেরই বাড়ি মাড়গ্রামের বালসায়। জখমদের মধ্যে বর-সহ তিন জন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে এবং নববধূ-সহ চার জন রামপুরহাটে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার পর থেকে ট্রাকের চালক এবং খালাসি বেপাত্তা। পুলিশ জানায়, দীর্ঘ সময় চালু থাকার জন্য ট্রাকটিতে আগুন ধরে যায়। দমকলের একটি ইঞ্জিন আগুন নেভায়।

স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার বালসা গ্রামের টুটুল লেটের ছেলে পিন্টুর বিয়ে হয় মল্লারপুর থানার প্রচন্দপুর গ্রামের লাল্টু লেটের মেয়ে মল্লিকার সঙ্গে। বিয়ে শেষে রাত বারোটা নাগাদ বর-কনে সহ দশ জন মাড়গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। পিছনের ছিল বরযাত্রীর গাড়ি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে থাকা কিশোর লেট বলেন, ‘‘বর আর কনে গাড়ির সামনে চালকের পাশে বসেছিল। আমরা আট জন গাড়ির পিছনে। গাড়ি ভালই চলছিল। চোখে ঘুমও লেগেছিল। মনসুবা মোড় ঢোকার হঠাৎ মুখে কানফাটানো শব্দ! ততক্ষণে ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে গিয়েছে গাড়ি।’’ রামপুরহাটে চিকিৎসাধীন উৎপল লেট যোগ করছেন, ‘‘চারপাশে রক্ত আর চালকের মৃতদেহ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’’

চালকের ঠিক পাশের আসনে বসেছিলেন মল্লিকা। তাঁর কথায়, ‘‘সম্বিত ফিরতে দেখি, পাশে বসা স্বামীর মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। ডান দিকের চালক মৃত। পিছনের আসনে বসে থাকা শ্বশুরবাড়ির লোকজন কাতরাচ্ছেন। এর মধ্যেও গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়ি থামাতে যাই। কিন্তু, কেউ কথা শোনেনি। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই বরযাত্রীর অন্য গাড়িটি এসে পড়ে।’’ ওই গাড়ির লোকজনই গোটা ঘটনা পুলিশকে জানায়। দ্রুত পুলিশ এসে জখমদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

গভীর রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বালসা এবং প্রচন্দ্রপুর থেকে রামপুরহাট হাসপাতালে পৌঁছন বাসিন্দারা। নববধূর মা সবিতা লেট বলছেন, ‘‘কত আনন্দ হল! বিয়ের পর সুস্থ ভাবে মেয়েজামাইকে বাড়ি গাড়িতে তুলে দিলাম। পথে কী ভাবে কী যে ঘটে গেল।’’ কাঁদতে কাঁদতে যোগ করছেন, ‘‘মেয়ের অল্প চোট। কিন্তু, জামাই যে গুরুতর অসুস্থ। কী যে হবে ভাবতেই পারছি না।’’

বালসা গ্রামের বাসিন্দা মৃত লাবণ্যময় প্রামাণিকের জমি চাষ করে সংসার চালাতেন পিন্টুর বাবা টুটুল লেট। জামাই বিপ্লব থেকে খুড়তুতো ভাই প্রহ্লাদ— সকলেই একই গ্রামের। বৌ-ভাতের প্রস্তুতিও ছিল পুরোদমে। এমন আনন্দের দিনে শোকের ছায়ায় মুড়েছে গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নাতির বৌ দেখবেন বলেই যেন দিন গুনছিলেন পিন্টুর ঠাকুমা। তাই তাড়াহুড়ো ছিল। কিন্তু, তার জন্য এমন পরিণতি অপেক্ষা করছিল কে জানত! ঘরের লোক এখন ভালয় ভালয় ফিরলেই হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident Deaths marriage ceremony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE