Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
দিলেন মোবাইল নম্বরও

হোমওয়ার্ক করেই প্রশ্ন অভিষেকের

দলের নিচু তলার কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে অভিষেক নিজের মোবাইল নম্বর সবাইকে দিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, সরাসরি তাঁকে যে কোনও অভিযোগ জানাতে পারেন কর্মীরা।

n নেতার হাতে: বুধবার শহরের একটি বেসরকারি হোটেলে বৈঠক শেষ করে বাঁকুড়ার সতীঘাট বাইপাসে তৃণমূলের নির্মীয়মান জেলা কর্যালের উদ্বোধন করেন অভিষেক। তার পরে দুর্গাপুরে রওনা দেন। আজ, বৃহস্পতিবার ছাতনা, কোতুলপুর, রাইপুর বিধানসভার আওতায় থাকা ব্লকের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

n নেতার হাতে: বুধবার শহরের একটি বেসরকারি হোটেলে বৈঠক শেষ করে বাঁকুড়ার সতীঘাট বাইপাসে তৃণমূলের নির্মীয়মান জেলা কর্যালের উদ্বোধন করেন অভিষেক। তার পরে দুর্গাপুরে রওনা দেন। আজ, বৃহস্পতিবার ছাতনা, কোতুলপুর, রাইপুর বিধানসভার আওতায় থাকা ব্লকের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:২১
Share: Save:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে যে তিনি কড়া ধমক দেবেন, সেটা আগে থেকেই ধরে রেখেছিলেন দলের কর্মীরা। তবে পর্যবেক্ষক যে রীতিমতো তৃণমূল স্তরে হোমওয়ার্ক করে সমস্ত নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তালিকা বানিয়ে আনবেন, সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। বুধবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দক্ষ সংগঠককের সেই রূপ দেখে চমকে গিয়েছেন বাঁকুড়া তৃণমূলের অনেক পোড় খাওয়া নেতাও।

দলের নিচু তলার কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে অভিষেক নিজের মোবাইল নম্বর সবাইকে দিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, সরাসরি তাঁকে যে কোনও অভিযোগ জানাতে পারেন কর্মীরা। ফোনে না পাওয়া গেলে মেসেজ করলেও উত্তর দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তেমনই বড়জোড়া, পাত্রসায়র, ইন্দাসের মতো জেলার ব্লকগুলিতে চলতে থাকা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওঠা বিভিন্ন নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে গিয়েছেন মন দিয়ে। নেতানেত্রীদের কথা বলার সুযোগও দিয়েছেন। বৈঠক শেষে পাত্রসায়র ব্লকের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘দলের কিছু নেতার কর্মকাণ্ডের জেরে যে ক্ষোভ আমাদের মধ্যে জমেছিল তা এত দিন কাউকেই এ ভাবে বলতে পারিনি। এ দিন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বললাম।’’ বড়জোড়া ব্লকের এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক জন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনতে পারলাম আজ। আমরা ভাবতেই পারিনি উনি এতটা খোঁজ খবর নিয়ে জেলায় আসবেন।’’

পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় সংগঠনের হাল হকিকত খতিয়ে দেখতে দু’দিনের জেলা সফরে বাঁকুড়ায় এসেছেন অভিষেক। বুধবার সকাল থেকেই দিনভর বাঁকুড়া শহর এবং বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়ক জুড়ে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। অভিষেকের পথে যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য এ দিন বাঁকুড়া শহর এবং ওই রাজ্য সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কড়া হাতে। এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ শহরের চাঁদমারি়ডাঙার একটি হোটেলে আসেন অভিষেক। সেখানে দফায় দফায় সোনামুখী, ইন্দাস ও বড়জোড়া বিধানসভা এলাকায় থাকা ব্লকগুলির নেতাকর্মী ও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের বাছাই করা কয়েক জন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক জনসভায় যে ভাবে প্রচুর তথ্য নিয়ে আসেন, উপস্থিত আমলাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন, প্রশ্ন করেন, নির্দেশ দেন— তারই ছায়া এ দিন অভিষেকের মধ্যে দেখা গিয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন।

গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের হাওয়ায় বিরোধীরা কার্যত উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাঁকুড়ায় দেখা গিয়েছিল উল্টো ছবি। এই জেলায় শাসকদলের হাতে থাকা ৫টি বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেস জোটের প্রার্থীরা জিতে যান। তার পরেই জেলায় নজর দেয় রাজ্য নেতৃত্ব। গত বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদলের এই পরিণতির জন্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই যে দায়ী সে কথা আগে অনেক বার স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে যাতে কোনও ভাবেই সেই দ্বন্দ্ব ছাপ না ফেলতে পারে এ দিন কার্যত সেই বার্তাই দিয়ে গিয়েছেন অভিষেক।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাত্রসায়র ব্লক বিরোধীশূন্য হয়েছিল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অভিষেক বলেছেন, এখন ওই ব্লকের অবস্থা সব থেকে খারাপ। স্থানীয় নেতারা কে কার থেকে বড় সেটা ঠিক করতেই ব্যস্ত। এই ঘটনা যে তিনি বরদাস্ত করবেন না সেটা জানিয়ে দিয়েছেন। দরকার পড়লে স্থানীয় নেতাদের বাদ দিয়ে জেলা নেতাদের দিয়ে ওই ব্লকে ভোট করানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক। পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূলের একাংশ এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য অভিষেকের কাছে জেলা নেতৃত্বকে দায়ী করে নালিশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, জেলার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই ব্লকে ঝামেলা ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অভিষেক।

অন্য দিকে, বড়জোড়াতেও গত বিধানসভা নির্বাচনে হার হয়েছে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তীর। এ দিন ওই ব্লকের পঞ্চায়েত স্তরের সাংগঠনিক স্তরের অবস্থা কী, তা জানতে চান অভিষেক। ব্লকের তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, বড়জো়ড়ায় কল কারখানাগুলিতে প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে দলে ঝামেলা বাড়ছে। এ ছাড়া ওই ব্লকে গড়ে দেওয়া কোর কমিটির বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। অভিষেক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বড়জোড়া বিধানসভায় দলের পর্যবেক্ষক সমীর চক্রবর্তীকে সমস্যাগুলি দেখতে বলেছেন তিনি।

ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটের বিরুদ্ধেও তাঁর বিরোধীরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ তোলেন। ইন্দাস ব্লকে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিষেক আগেও অভিযোগ পেয়েছেন সেগুলি এ দিন তিনি কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। এ দিনের বৈঠকে অভিষেকের সামনেই গঙ্গাজলঘাটির দুই নেতার মধ্যে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেটিও সামলেছেন তিনিই।

এ দিন তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই দাবি করেন, তৃণমূল স্তরে সংগঠনে যে কোনও শূন্যতা তৈরি হয়নি, সেই কথাই বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলার পর্যবেক্ষক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE