Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নীলনির্জনকে সাজাতে নীলনকশা বক্রেশ্বরে

বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হচ্ছে জানিয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নগরোন্নয়ন দফতর। তার পরই দুবরাজপুর ব্লক ও পুরসভা এলাকা মিলিয়ে মোট ৪৫টি মৌজা নিয়ে তৈরি হয় ‘বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ’।

ভাসমান: নীলনির্জন জলাধারে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। ফাইল চিত্র

ভাসমান: নীলনির্জন জলাধারে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৩
Share: Save:

বক্রেশ্বর জলাধার নীলনির্জনকে ঢেলে সাজতে নীলনকশা তৈরি করল বক্রেশ্বর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। একই সময়ে হাত পড়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে দুবরাজপুরের আলমবাবার মাজারের পাশ দিয়ে পণ্ডিতপুর পর্যন্ত ত কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজেও। উদ্দেশ্য দুবরাজপুর শহর এড়িয়ে বক্রেশ্বর যেতে পর্যটকদের যাতায়াত যেমন আরও মসৃণ করা।

বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের এগজিকিউটিভ অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীপ্তেন্দু বেরা বলেন, ‘‘নীলনকশা তৈরি।’’ সংস্থার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব ভাবে নীল নির্জনকে সাজিয়ে তুলতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের খরচ ১৫ কোটি টাকারও বেশি। ডিপিআর জমা পড়লেই নগরোন্নয়ন দফতর থেকে বরাদ্দ টাকা মিলবে।’’

বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হচ্ছে জানিয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নগরোন্নয়ন দফতর। তার পরই দুবরাজপুর ব্লক ও পুরসভা এলাকা মিলিয়ে মোট ৪৫টি মৌজা নিয়ে তৈরি হয় ‘বক্রেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদ’। পর্ষদের আওতায় রয়েছে দুবরাজপুর পুরএলাকা-সহ মোট ৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। পর্যটনকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই পর্ষদের মূল লক্ষ।

বক্রেশ্বর মূলত ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্র হলেও, মূল আকর্ষণ উষ্ণ প্রস্রবণ। পরিকল্পিত ভাবে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়ে পর্যটকদের কাছে জেলার অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র দিসেবে গড়ে তোলাই লক্ষ। সেই পরিকল্পনা মাফিক নানা কর্মকাণ্ড চলছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রাস্তাঘাট, গোটা বক্রেশ্বরধাম জুড়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা, বক্রেশ্বর শ্মশানে যাওয়ার পথ, বাসস্ট্যান্ডের পরিকাঠামো বাড়ানো, উষ্ণ প্রস্রবণ কুণ্ড থেকে নিকাশি নালা সংস্কারের মতো প্রাথমিক কাজগুলি শেষ। বর্তমানে উন্নয়ন পর্ষদের নিজস্ব ভবন তৈরি হচ্ছে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। আরও নানা খাতে ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার কাজ চলছে। কিন্তু বোর্ড সদস্যরা দেখেন, শুধু বক্রেশ্বর বা আশপাশের অংশ নয়। উন্নয়ন প্রয়োজন আরও বিস্তারিত ভাবে। বক্রেশ্বর নীলনির্জনকে ঘিরে ভাবনা সেই কারণেই।

উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর দুর্গাপুজোর পরই বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারকে সাজানোর সুযোগ আসে পর্যদের কাছে। সেই সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দফতরের সচিব ওঙ্কারনাথ মিনা বলেন, ‘‘পর্ষদ এলাকার উন্নয়নে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুক। ঢেলে সাজাক এলাকা। অনুমোদন পেতে বা প্রকল্প রূপায়নের জন্য বরাদ্দ টাকার জন্য কোনও সমস্যা হবে না।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, ঠিক কী কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা একটি অর্থবর্ষকে ত্রৈমাসিকে ভাগ করে কাজের ক্যালেন্ডার তৈরি করে পাঠাতে হবে। সেইমতোই বক্রেশ্বর নীলনির্জন জলাধারকে ঘিরে একটি পার্ক ও পর্যটকদের আকর্ষণের উপাদানে সাজিয়ে তোলার প্রস্তাব জমা দেয় পর্যদ। সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই শুরু হয়েছে পরের ধাপের কাজ। পর্যদ জানাচ্ছে, নীল নকশায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইকো-ট্যুরিজমকে।

নীলনির্জনকে বেছে নেওয়ার পিছনেও কারণ রয়েছে। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘একটি পর্যটনস্থল তখনই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। যদি সেখানে বিনোদনের ভরপুর উপাদান মজুত থাকে। সঙ্গে যাতায়াত ও থাকার সুব্যবস্থা থাকে।’’ তিনি জানান, দুবরাজপুর পুরএলাকায় পাহাড়েশ্বর এবং বিনোদন পার্ক রয়েছে। রয়েছে আলমবাবার মাজার এবং পরিযায়ী পাখিদের নিশ্চিত আনাগানার ক্ষেত্রে শান্ত, নির্জন জলাশয় নীলনির্জন। যে পর্যটক বক্রেশ্বর আসবেন, তিনি যেন দু’দিনের সময় কাটানোর রসদ এখানে পান। এমনিতেই বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার স্থানীয় মানুষের কাছে অন্যতম প্রিয় একটি পিকনিক-স্পট। কিন্তু সমস্যা ছিল বিনোদনের তেমন কিছু না থাকায়। অদূর ভবিষ্যেতে সেই আক্ষেপ দূর হতে চলেছে।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর মিলেছে, তিন কোটি টাকা খরচে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে আলমবাবার মাজারের পাশ দিয়ে পণ্ডিতপুর হয়ে রাস্তার কাজ সেই লক্ষে বড় পদক্ষেপ। এই সড়ক দিয়ে বক্রেশ্বরই নয়, আলমবাবার মাজার ও নীলনির্জন জলাধারের রাস্তাও নাগালের মধ্যে পড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE