Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছ’দশক ধরে ধ্রুবলালের স্মৃতি আঁকড়ে দুই গ্রাম

অল্প বয়সে কোনও মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। হাজির ধ্রুবলাল। অভিভাবকদের বোঝালেন, নিজে ভাল করে লেখাপড়া না শিখলে সন্তানদের পড়াশোনার দিকে নজর দেবে কী ভাবে? 

প্রতিকৃতি নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ। —নিজস্ব চিত্র

প্রতিকৃতি নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

মাত্র ৩৭ বছরের জীবন তাঁর। কিন্তু মৃত্যুর ছ’দশক পার করেও দু’টি গ্রামের স্মৃতি আর আবেগ জুড়ে রয়ে গিয়েছেন ধ্রুবলাল। দেশ তখন স্বাধীনতার প্রায় দোরগোড়ায়। ধ্রুবলাল ছিলেন বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ থানার লছিপুরের বাসিন্দা। জায়গাটা পুরুলিয়ার সীমানায়, মানবাজার লাগোয়া। বাবার সঙ্গে হয়তো জমিতে কাজ করছে কোনও কিশোর। তাঁর চোখে পড়ল। বুঝিয়ে নিয়ে এলেন স্কুলে।

অল্প বয়সে কোনও মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। হাজির ধ্রুবলাল। অভিভাবকদের বোঝালেন, নিজে ভাল করে লেখাপড়া না শিখলে সন্তানদের পড়াশোনার দিকে নজর দেবে কী ভাবে?

সময়ের উপযোগী ভাবে সমাজকে গড়ে-পিটে আধুনিক করতে চেয়েছিলেন ধ্রুবলাল দেশমুখ। তৈরি করেছিলেন স্কুল। অবৈতনিক শিক্ষক হিসাবে পড়িয়েছে সেখানে। নিখরচায় পড়ুয়াদের খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। পরে সরকারি অনুমোদনও পায় সেই গোপালপুর হাইস্কুল। বর্তমানে পড়ুয়াদের কোলাহলে গমগম করে বাড়ি। আর লছিপুর, গোপালপুরে বেঁচে থাকেন ধ্রুবলাল।

মানবাজারের বাসিন্দা প্রাক্তন বিএমওএইচ গোপালচন্দ্র লায়েক ধ্রুবলালের জামাতা। তিনি জানান, পাঁচের দশকের মাঝামাঝি দুরারোগ্য অসুখে ধ্রুবলালের মৃত্যু হয়। পড়ুয়ারাই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। প্রকাশিত হয়েছিল কবিতার বই ‘কাঁটার ফুল’। এ ছাড়া রয়েছে অনেক পাণ্ডুলিপি। নিজে নাটক লিখেছেন। তাতে অভিনয়ও করেছেন।

প্রত্যেক বছরের মতো গত রবি এবং সোমবার ‘ধ্রুবলাল স্মৃতি রক্ষা কমিটি’-র পরিচালনায় তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠান হয়েছে। এটি ধ্রুবলালের জন্মের ৯৯তম বর্ষ।

কমিটির সদস্য প্রদীপ লায়েক, সঞ্জয় মল্লিক, নীলাঞ্জন লায়েক, রবীন্দ্রনাথ দেশমুখরা বলেন, ‘‘এই এলাকার শিক্ষাবিস্তারে ধ্রুবলালের অবদান ভোলার নয়। খাতড়া আর বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। শিক্ষক, কবি, অভিনেতা— সমস্ত পরিচয় ছাপিয়ে তিনি ছিলেন এক জন সমাজসংস্কারক। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর নিরন্তর লড়াই আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।’’

কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, উৎসবের খরচ তাঁরাই চাঁদা তুলে জোগাড় করেন। দু’দিন ধরে হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

এ বছরের অনুষ্ঠানে হয়েছে ধ্রুবলালের জীবন নিয়ে আলোচনা। প্রতিকৃতি নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয়। এ বারও ছিল যাত্রাপালা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এলাকায় শিক্ষার প্রসারের পথিকৃৎকে স্মরণ করতে অনুষ্ঠানে যোগ দেন দু’টি গ্রামের সমস্ত স্তরের বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE