Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রচারের ফাঁকে দিনভর নজর টিভির পর্দাতেই

সোমবার সকালেই হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ এক দিনের জন্য বাড়িয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত করেছে। কিন্তু সেই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছিল তৃণমূল।

আদালত কী বলল, শুনছেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

আদালত কী বলল, শুনছেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছে তুমুল ব্যস্ততা। কর্মী বৈঠক থেকে প্রচারের কাজ— সবেতেই খানিকটা ঢিলেঢালা ভাব। সবার চোখ টিভির পর্দায়। সোমবার সকালেই হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ এক দিনের জন্য বাড়িয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত করেছে। কিন্তু সেই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছিল তৃণমূল। এ দিন বিকেলে ছিল সেই মামলার শুনানি। সেখানে কী হয়, জানতে মুখিয়ে ছিলেন সবাই। বিকেলে ডিভিশন বেঞ্চ মামলা সিঙ্গল বেঞ্চেই পাঠিয়ে দেয়।

দিনভর সবার চোখ ছিল আদালতের দিকেই। ফলে নির্বাচনের কাজে নজর দিতে পারেননি নেতারা। প্রচার, বৈঠকের ব্যস্ততার ফাঁকে জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বারবার চলে যাচ্ছিলেন টিভির সামনে। ঘনঘন কলকাতায় ফোন করেও খোঁজ নিচ্ছিলেন।

দিনের শেষে জট না কাটায় মন্ত্রী বললেন, ‘‘দেখি কাল কী হয়। আজকের দিনটা তো চলেই গেল।’’ ঘোষণা মতো যদি ১ মে ভোট হয়, তাহলে হাতে আর বেশি সময় নেই। তার মধ্যে সারতে হবে প্রচার। এই পরিস্থিতিতে একটা দিনের গুরুত্ব অনেক, বলছেন জেলা তৃণমূলের পোড় খাওয়া নেতারা। জানালেন, আদালত কী রায় দেয়, সেটা না জেনে পুরোদস্তুর প্রচারের পরিকল্পনাও করতে পারছেন নাত তাঁরা। জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোরও দিন কেটে গিয়েছে টিভির সামনে। বললেন, ‘‘প্রস্তুতি চলছে। তবে রায় নিয়ে তো কৌতুহল রয়েছেই।’’

কাল, বুধবার তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবাজারে কর্মিসভা করার কথা। তার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। মানবাজার মহকুমার বাসিন্দা দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বৈঠক হবে ধরেই সমস্ত প্রস্তুতি হয়েছে। মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে। কর্মীরা কী ভাবে সভায় পৌঁছবেন তার ব্যবস্থাও চলছে।’’ তবে শান্তিরামবাবু বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার শুনানিতে কী হয় তার উপরে সব নির্ভর করছে। সে ক্ষেত্রে সভা পিছোলেও পিছোতে পারে।’’

আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বিরোধীরাও।

দলের এক প্রার্থীর স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীকে ছুটতে হয়েছিল আনাড়ায়। তিনি বলেন, ‘‘ব্যস্ততার মাঝেও টিভিতে চোখ ছিল। এটা জেনে ভাল লাগছে যে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে তাহলে দেশে বিচার ব্যবস্থা অন্তত রয়েছে। নির্বাচনের ভবিষ্যত কী হবে জানি না। কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।’’

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘তৃণমূল নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করতে চাইছিল। আদালতের রায়ে সেটা ধাক্কা খেয়েছে। আমারা আশা করছি মানুষের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনে যোগ দিতে পারবেন।’’

দলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ও সারাদিন ছিলেন পার্টি অফিসের টিভির সামনে। সেখানেই কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন। কী রায় হতে পারে তা নিয়ে জমে উঠেছে আড্ডা। সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা ফিরিয়ে দেওয়ার রায় শুনে উত্তমবাবু বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে যা ইচ্ছে করা যায় না এটা অন্তত প্রমাণিত হল।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়কে জরুরি কাজে কলকাতায় ছুটতে হয়েছিল। ফেরার পথে কর্মীদের ঘনঘন ফোন করেছেন কী হল জানতে।

নেতাদের চিন্তা যখন আদালতের রায় নিয়ে, তৃণমূলের অনেক প্রার্থীর ভাবনা ছিল অন্য।

যে সমস্ত আসনে দলেরই একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাঁরা এ দিনও ফোনে পরিচিতদের কাছে জানতে চেয়েছেন টিকিট কে পাচ্ছে? আদালতের রায় ও টিকিট কার— এই দু’টি প্রশ্ন নিয়েই সোমবার জল্পনা ছিল শাসকদলের অন্দরমহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE