Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ই-মনোনয়নে ছবি কি বদলাবে, জল্পনা

সকাল থেকেই উদ্বেগে কেটেছে সময়। হাইকোর্টে কী নির্দেশ দেয়, তা নিয়ে আশায় দুলেছে নেতা-কর্মীদের মন। দুপুরে টিভিতে ‘ব্রেকিং নিউজ’-এ হাইকোর্ট ২৩ এপ্রিল দুপুর তিনটের মধ্যে জমা পড়া ‘ই-নমিনেশন’ বৈধ জানাতেই স্বস্তি নেমে আসে বাঁকুড়ায় সিপিএমের নেতা-প্রার্থীদের মনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০১:২১
Share: Save:

সকাল থেকেই উদ্বেগে কেটেছে সময়। হাইকোর্টে কী নির্দেশ দেয়, তা নিয়ে আশায় দুলেছে নেতা-কর্মীদের মন। দুপুরে টিভিতে ‘ব্রেকিং নিউজ’-এ হাইকোর্ট ২৩ এপ্রিল দুপুর তিনটের মধ্যে জমা পড়া ‘ই-নমিনেশন’ বৈধ জানাতেই স্বস্তি নেমে আসে বাঁকুড়ায় সিপিএমের নেতা-প্রার্থীদের মনে।

জেলা বামফ্রন্টের তরফে দাবি করা হচ্ছে, জেলা পরিষদের মোট ১৯টি আসনে প্রার্থীরা মহকুমা শাসকের দফতরে ঢুকতে বাধা পেয়ে সরাসরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে ই-মেল করে মনোনয়নপত্র জমা করেছিলেন। ওই ১৯টি আসন বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর মহকুমার মধ্যে রয়েছে। আর বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের দাবি, ‘‘মোট ছ’টি জেলা পরিষদ আসনের দলীয় প্রার্থীরা ই-মেলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের দফতরে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।’’ বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষ জানাচ্ছেন, জেলা পরিষদ স্তরে তাঁর এলাকার কোনও প্রার্থীই ই-মেল মারফত মনোনয়ন জমা করতে না পারলেও, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের বহু প্রার্থীই সরাসরি নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন পত্র পাঠিয়েছেন।

কোন কোন আসনে ই-মেলে মনোনয়ন জমা পড়েছে, সেই খবর নেই জেলা প্রশাসনের কাছেও। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “মনোনয়ন পর্ব চলাকালীন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ই-মেল মারফত কোনও মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে বলে আমাদের নজরে আসেনি।”

এ দিকে কেবল ই-মেলের মাধ্যমেই মনোনয়ন পত্র পাঠালেই হবে না, হাইকোর্টের নির্দেশ মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন দুপুর তিনটের মধ্যে যে মনোনয়নপত্র গুলি জমা পড়েছে, কেবল সেগুলিকেই বৈধ বলে ধরা হবে। সে ক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতগুলি মনোনয়ন দাখিল হয়েছে, তা নিয়ে বিরোধী দলগুলি এ দিন পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি। জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, “বেশ কয়েকটি মনোনয়ন জমা করতে করতে দুপুর তিনটে পার হয়ে গিয়েছিল।”

বাঁকুড়ার জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনে ৩১টিতেই বিরোধীরা মনোনয়ন না করায় এবং কিছু জায়গায় পরে তা প্রত্যাহার করায় জেলা পরিষদ দখলে রাখার রাস্তায় এগিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। জেলার ২২টির মধ্যে ১৩টি পঞ্চায়েত সমিতিও একই ভাবে দখলে রাখার পথে এগিয়েছিল শাসকদল। পঞ্চায়েত সমিতির ৫৩৫টি আসনের মধ্যে ৩৪১টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫০৫টি আসনের মধ্যে ১৫৯৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী বলে জানানো হয়েছিল। ২৮ এপ্রিল তিনটি স্তরেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বলে ওই প্রার্থীদের শংসাপত্র দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের রায়ে ওই প্রার্থীদের ক’জনকে ফের ভোটে লড়ার ময়দানে নামতে হয় তা নিয়েই জল্পনা এখন তুঙ্গে।

ভোটে লড়তে হচ্ছে না ভেবে এত দিন যাঁরা নিশ্চিন্তে ছিলেন, হাইকোর্টের এ দিনের রায়ের পরে তাঁদের অনেকের কপালেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানাচ্ছেন। বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল প্রার্থী বলেই ফেললেন, “ব্লকে কোথাও ভোট হচ্ছে না। আমরা সকলেই ভোটে জয়ী হওয়ার শংসাপত্রও পেয়ে গিয়েছি। তাই ফের নিজের পেশা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এ বার যে কী হবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।” সোনামুখী ব্লকের তৃণমূলের এক জেলা পরিষদ প্রার্থীও বলেন, “হাইকোর্টের রায় জানার পর থেকেই চার দিকে ফোন করে খবর নিচ্ছি, আমার আসনে কোনও বিরোধী প্রার্থী ই-মেলে মনোনয়ন জমা করেছে কি না। কিন্তু কেউ নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারছে না।’’

জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “রায় ঘোষণার পর থেকে বহু প্রার্থীই ঘন ঘন ফোন করছেন। সবাইকে উদ্বিগ্ন না হয়ে ধৈর্য রাখতে বলছি।”

তবে আদালতে মামলা চলাকালীন কী ভাবে ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বলে’ শাসকদলের প্রার্থীদের প্রশাসন শংসাপত্র তুলে দিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, ‘‘আদালতে মামলা চালাকালীন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বলে শংসাপত্র দেওয়াটা বিয়ের আগেই কনে দান করে দেওয়ার সামিল। আসলে প্রশাসন তৃণমূলকে জেতানোর ঠিকা নিয়ে রেখেছে। তাই দ্রুত কাজ সেরে ঘাড় থেকে বোঝা নামাতেই এমনটা করেছে।”

যদিও প্রশাসনের একাংশের দাবি, ভোট প্রক্রিয়ায় কোনও স্থগিতাদেশ ছিল না। তাই নিয়ম মেনেই শংসাপত্র বিলি করা হয়েছিল। জেলা তৃণমূল নেতা তথা বিদায়ী জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীও বলেন, “প্রশাসন নিয়ম মেনেই শংসাপত্র বিলি করেছে।”

হাইকোর্টের এই রায়ের পরে নির্বাচনে দলের নতুন কৌশল কী হবে, তা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খান। তিনি বলেন, “এ ব্যপারে রাজ্য নেতৃত্বই যা বলার বলবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Elections 2018 E-Nomination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE