Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ইতিমধ্যে চালু জেলার তিন কলেজে

সময় চুরি ঠেকাতে জোর যন্ত্র-হাজিরায়

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করতে হবে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা এখনও নির্দেশের আকারে স্কুল–কলেজে পৌঁছয়নি।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৫
Share: Save:

কলেজে প্রবেশ ১১টা ৩০ মিনিটে। প্রস্থান ১টা ১০ মিনিটে। অথচ, পরের দিন কলেজে এসে হাজিরা খাতায় ওই শিক্ষক কলম দিয়ে একের (ওয়ানের) পাশে একটা খোঁচা যোগ করলেন। আর তাতেই আগের দিন কলেজ থেকে ওঁর যাওয়ার সময় পিছিয়ে হয়ে গেল বিকেল চারটে ১০। সম্প্রতি জেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষের অভিজ্ঞতা হয়েছে এমনই।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করতে হবে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা এখনও নির্দেশের আকারে স্কুল–কলেজে পৌঁছয়নি। তবে, সময় চুরির এমন বিদ্যায় ‘পটু’ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়মে বাঁধতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা আনতে জেলার তিনটি কলেজে শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি। শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের হাজিরা এবং নির্দিষ্ট সময়ে কলেজে আসার ব্যাপারে কড়াকড়ির জন্যই ওই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের মত, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশে শিক্ষকদের পাঁচ ঘণ্টা কলেজে থাকার কথা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজে শুরু হয়েছে ‘চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’। তখন আরও বেশি সময় কলেজে থাকতে হবে শিক্ষকদের। অথচ, শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে যুক্তদের অনেকের মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে বলে মত অনেকের। হাজিরার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারে কারচুপি বা সময় চুরি, কেউ চাইলে করতেই পারেন। এবং করছেনও। এক্ষেত্রে অভিযোগের তির শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সকলের দিকেই।

উল্টো দিকে, যন্ত্রে হাজিরা নিশ্চিত করা হলে অনেক বেশি স্বচ্ছতা আসাও সম্ভব। অহেতুক ভুল বোঝাবুঝির জায়গাটাও এড়ানো যায়। যে কলেজগুলিতে যন্ত্র নির্ভর হাজিরা চালু হয়েছে। সেই সব কলেজের অধ্যক্ষদের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনটাই। জেলার কয়েক’টি কলেজ আগামী দিনে এই পদ্ধতি চালু করবে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু কলেজে টিচার্স কাউন্সিল এবং পরিচালন সমিতি এই বিষয়ে একমত না হওয়ায় ঝুলে রয়েছে সিদ্ধান্ত। বিতর্ক এড়াতে কোনও কোনও অধ্যক্ষ চাইছেন সরকারি নির্দেশিকা হাতে পেলে তবেই এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার কথা।

বায়োমেট্রিক টার্মিনালগুলির কাজ হল, ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের চিহ্নিত করা। সেটা সেই কর্মী বা আধিকারিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, হাতের আকৃতি, চোখের মণি বা আইরিস অথবা মুখের আকৃতি নিশ্চিত করে তাঁর পরিচয়। জেলার কলেজগুলিতে যে পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা অবশ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ বা হাতের আঙুলের ছাপ।

জুলাইয়ে জেলায় প্রথম বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হয়েছে রামপুরহাট কলেজে। শুধু রামপুরহাট নয়। জেলার প্রাচীনতম হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ এবং এক নবীন কলেজ ‘মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লপসা হেমব্রম মহাবিদ্যালয়’এ সাফল্যের সঙ্গে চালু হয়েছে

যন্ত্রনির্ভর হাজিরা পদ্ধতি। অথচ, ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়া সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে এ ব্যাপারে সহমতে পৌঁছানো যায়নি। এমন তথ্যই জানিয়েছেন অধ্যক্ষ তপনকুমার পরিচ্ছা। যন্ত্রপাতি লাগানোর পরেও পরিচালন সমিতির অনুমোদনের অপেক্ষায় সাঁইথিয়া অভেদানন্দ মহবিদ্যালয়।

হেতমপুর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘উনবিংশ শতাব্দীর কলেজকে একবিংশ শতাব্দীর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রকে। বায়োমেট্রিক হাজিরা তার অন্যতম। সকলের সহমতের ভিত্তিতেই এটা করা হয়েছে। তবে যন্ত্র নির্ভর হাজিরা পদ্ধতি চালু হয়েছে হওয়ার পরে স্বচ্ছতা এসেছে উপস্থিতিতে।’’ প্রায় একই সুর টুরকু হাঁসদা কলেজের অধ্যক্ষ অমিতকুমার চক্রবর্তীর গলায়। এমন অনেকেই ছিলেন যাঁরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে দেরিতে আসতেন বা আগে চলে যেতেন। যন্ত্র তাঁদের সতর্ক করতে পেরেছে। অন্য দিকে, সিউড়ির বীরভূম মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যও) বলছেন, ‘‘সরকার খেদের সঙ্গে বায়োমেট্রিক হাজিরা সুনিশ্চিত করতে চাইছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও তাই চাইছে। তার কারণ শিক্ষাঙ্গনেও মূল্যবোধের অবক্ষয়। আমাদের কলেজে বায়োমেট্রিক লাগানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত। ১৬ তারিখ পরিচালন সমিতির বৈঠকে সেটা পাশ হবে বলে আশা করি।’’

‘‘নৈতিকতা না থাকলে বায়োমেট্রিক হাজিরা করেও কাজের কাজ হবে না’’— মনে করেন রামপুরহাট কলেজের অধ্যক্ষ তপন ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে তাঁর কলেজেই সবার আগেই এই পদ্ধতি চালু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biometric attendance School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE