বৈঠক: সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
‘পাখিদের বিরক্ত করবেন না। মাংসের লোভে পাখি শিকার করবেন না বা বেচবেন না। এই পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার আছে ওদেরও। কেউ পাখিদের অনিষ্ট করতে চাইছে, এমনটা জানলে দ্রুত বন দফতরকে খবর দিন।’ সিউড়ির তিলপাড়া ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েক’টি গ্রামের মানুষের কাছে শনিবার এমনই বার্তা দিলেন জেলার বনকর্তারা। উদ্দেশ্য পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা। বিলি হয় সচেতনতা বিষয়ক লিফলেটও।
এমন প্রচারের অবশ্য কারণ রয়েছে। শীতের শুরুতেই সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত থেকে উড়ে এ রাজ্যের বিভিন্ন জলাশয়ে ভিড় করে পরিযায়ী পাখির দল। জেলার সিউড়ির তিলপাড়া, বক্রশ্বরের নীলনির্জন এবং বোলপুরের বল্লভপুর জলাশয়ও সেই তালিকায় ছিল। এই সময় নানা চেনা, অচেনা পাখির কলতানে মুখরিত হত চারধার। পাখিপ্রেমীরা অতিথিদের দেখতে ভিড় জমাতেন জলাশয়গুলিতে। অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে গোটা জলাশয় জুড়ে পাতা থাকছে মাছ ধরার ফাঁস জাল। মোটা টাকার জন্য ওঁত পেতে থাকা পাখি শিকারীদের দাপটে পাখি আসা কমেছে প্রতিটি জলাশয়ে।
মহম্মদবাজারের রাসপুর রেঞ্জের পাহাড়ি গ্রামে এ দিন এই সচেতনতা প্রচারে উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার হরিকৃষ্ণণ, এডিএফও বিজনকুমার নাথ এবং অন্য বনকর্তারা। ছিলেন তিলপাড়া জলাধার লাগোয়া তিলপাড়া, মাধবডিহি, খয়রাডিহি ,আমজোলা, বড়শাল সহ বেশ কয়েক’টি গ্রামের বাসিন্দা, বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য, জনপ্রতিনিধি, পঞ্চায়েত সদস্য, সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশ।
কয়েক বছর আগেও জেলার শান্ত-বিস্তৃীর্ণ ওই জলাধারগুলি ছিল পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। দেখা মিলত বড়ি হাঁস (বারহেডেজ গুজ), ব্রাহ্মণী হাঁস (রুডি শেলডাক), খুন্তে হাঁস (সোভেলার) বা রাঙা মুড়ি হাঁস, কমন কুট, গ্রিব-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের। শুধুই কী পরিযায়ী— সরাল, বালিহাঁস, নানা জাতের পানকৌরি, জলপিপি, জলময়ূরের মতো প্রচুর বাংলার পাখিরও দেখা মিলত। সেই শান্ত-নির্জন জলাধারগুলিতে গত কয়েক বছর ধরে অত্যাচার শুরু হয়েছে। তাতে সেগুলি আর পাখিদের জন্য নিরাপদ নয়। অতিথিদের সংখ্যা উত্তরোত্তর কমেছে। কোথাও কোথাও দু’একটির বেশি প্রজাতি আসছে না। এ ভাবে পক্ষীনিধন চললে আর কত দিন! সেই পরিস্থিতি পাল্টাতে সচেতনতা শিবির জরুরি ছিল, মনে করেন ডিএফও কিংবা এডিএফওরা। জেলার সব ক’টি জলাশয় যেখানে পরিযায়ীদের আনাগোনা রয়েছে, তার প্রতিটির আশপাশে থাকা লোকালয়, মৎস্যজীবী সকলকেই এই বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে বা হবে।
কেউ পাখিদের অনিষ্ট করছে কিনা জানতে, বাল্ক এসএমএসের (একটি বার্তায় অনেকের কাছে তথ্য পৌঁছে যাওয়া) সাহায্যও নিচ্ছে বন দফতর। ডিএফও, এডিএফরা বলছেন, ‘‘আগে হাতি আসার খবর চাউর করতে এই পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হত। এখন পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণের বিষয়ে একই ভাবে প্রচারের ভাবনা নেওয়া হয়েছে।’’ বনকর্তারা জানাচ্ছেন, শনিবার যেখানে সচেতনতা শিবির হয়েছে, সেখান থেকে ১২০টি ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছে বন দফতর। অন্য দিকে, বনাধিকারিকদের নম্বরও দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বোলপুরের প্রকৃতিপ্রেমী ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এমনিতেই বাংলার বিভিন্ন জলাশয়ে পাখিদের আসা কমেছে। তিলপাড়া, নীলনির্জন জলাধারে মৎস্যজীবীদের ফাঁসজালের দাপটে পাখিরা আসছে না। এরপরে চোরাশিকার হলে হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা নিরীহ পাখিগুলো যায় কোথায়?’’
যাঁদের নিয়ে সচেতনতা প্রচার, মাধবডিহি গ্রামের মন্টু দলুই, লক্ষণ রায়, পাহাড়ি গ্রামের হরেরাম বাগদি, আদিত্য গরাই কিংবা বড়শালের সমীর দলুইরা বলছেন, ‘‘পাখিদের নিয়ে এত কথা জানা ছিল না। বনকর্তাদের থেকে জানলাম। এ বার পাখিগুলোর কষ্ট কমাতে নামতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy