Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মৃত চালক ও শিক্ষক

পড়ুয়াদের বাসের সঙ্গে ধাক্কা ট্রাকের

দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসে ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি থানার মানসিংহবেড় গ্রামের বাণীশ্রী বিদ্যানিকেতনের পড়ুয়ারা। যাওয়ার কথা ছিল মুকুটমণিপুর হয়ে শুশুনিয়া পাহাড়ে।

ধুম: কয়েক জন উদ্ধারে হাত লাগিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু, বেশির ভাগই ব্যস্ত মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলতে। মড়ারে রবিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

ধুম: কয়েক জন উদ্ধারে হাত লাগিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু, বেশির ভাগই ব্যস্ত মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলতে। মড়ারে রবিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫২
Share: Save:

পরীক্ষা শেষ হতেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। পাথরকুচি বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে সেই বাসের মুখোমুখি ধাক্কায় মৃত্যু হল এক শিক্ষক-সহ দু’জনের। আহত প্রায় ১৮ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, বিষ্ণুপুর থানার মড়ার গ্রামের কাছে।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসে ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি থানার মানসিংহবেড় গ্রামের বাণীশ্রী বিদ্যানিকেতনের পড়ুয়ারা। যাওয়ার কথা ছিল মুকুটমণিপুর হয়ে শুশুনিয়া পাহাড়ে। পথে বাঁকুড়ার দিক থেকে আসা একটি পাথরকুচি বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে বাসের মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাসের চালক চন্দন জানার (৩৫)। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার শীতলপুর গ্রামে। চালকের ঠিক পিছনের আসনে বসেছিলেন ওই স্কুলের আংশিক সময়ের শিক্ষক কুন্তলকান্তি মণ্ডল (৩৮)। বেলায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হয়।

রবিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পড়ুয়াদের নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ অশোক মণ্ডল। তিনি জানান, শনিবার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তার পরে রাত ১০টা নাগাদ তাঁরা রওনা হন। বাসে ছিল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৬৮ জন পড়ুয়া। আর শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে ছিলেন ১৫ জন। ভোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। ঘন কুয়াশায় কাছের জিনিসই দেখা যাচ্ছিল না। তাঁরা সবাই ঘুমিয়েছিলেন। এমন সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, ‘‘পিছনের দিকে বসেছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি আর বিকট আওয়াজ। বাসটা আড়াআড়ি ঘুরে গেল।’’

রবিবার ভোরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাথরবোঝাই ট্রাকটি জাতীয় সড়কের কাছে আড়াআড়ি কাত হয়ে পড়ে রয়েছে। ট্যুরিস্ট বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে গিয়েছে। ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে কাচ। কেবিনের ভিতরে শিক্ষক রাধানাথ দত্ত আটকে ছিলেন। তাঁকে বের করে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মড়ার গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলি খান, খেলাফত মল্লিক, নুর ইসলাম মণ্ডলরা বলেন, ‘‘সবে ভোর হচ্ছে। বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশায় দু’হাত দূরের কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছিল না। এর মধ্যে প্রচণ্ড শব্দে সবাই চমকে ছুটে আসি।’’

কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস। গ্যাস কাটার দিয়ে বাসের লোহা কেটে কেবিনে আটকে থাকা শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। আহত ১১ জন পড়ুয়া ও ৭ জন শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে। সেখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আহতদের দেখতে যান। বেলায় বিষ্ণুপুর থেকে এক ছাত্র এবং পাঁচ জন শিক্ষককে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁরা সবাই সামনের কেবিনে বসেছিলেন। স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ অশোক মণ্ডল জানান, অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে এক শিক্ষককে কলকাতায় নিয়ে যেতে হয়েছে।

এ দিন চোট না পাওয়া পড়ুয়াদের জন্য দুপুরে খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল পুলিশ। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে খেজুরি থেকে বিষ্ণুপুরে চলে এসেছিলেন বেশ কিছু অভিভাবক। তাঁদের মধ্যে মানিক খান, শ্রীকান্ত মাইতি, প্রদীপ দাসেরা বলেন, ‘‘গোটা গ্রাম উৎকণ্ঠায় রয়েছে। কী যে হয়ে গেল!’’ পরে পুলিশ অন্য একটি বাসের ব্যবস্থা করে ওই অভিভাবকদের সঙ্গে চোট না পাওয়া পড়ুয়াদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। চালক এবং খালাসি পলাতক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Collision Truck Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE