চেনা ছবি। —নিজস্ব চিত্র
পিন্টু শেখ। বাড়ি দখলবাটি। রোজ ভোররাতে গ্রাম থেকে রামপুরহাটের পাইকারি বাজারে আসেন। সেখান থেকে সব্জি কিনে সকালে হাটতলায় বড়বাজারে রাস্তার ধারে চট পেতে বিক্রি করতে বসেন। ১১টার মধ্যেই সব সব্জি শেষ হয়ে যায়। দুপুর ১২টার মধ্যে বাড়ি ফিরে যান। সেই পিন্টুর-ই এখন বাড়ি ফিরতে তিনটে-চারটে হয়ে যাচ্ছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টা। রামপুরহাট বাজারে গিয়ে দেখা মিলল পিন্টুর। তখনও গোটা দশেক ফুলকপি, কেজি দুয়েক বিট, এক কেজি বিনস, এক কেজি ক্যাপসিকাম নিয়ে খরিদ্দারের অপেক্ষায় বসে আছেন। মনমরা মুখে পিন্টু জানালেন, ঢিলা বাজারে খদ্দেরের দেখা মিলছে না। সবই ৫০০ টাকা দিতে চাইছেন। এত খুচরো কোথায় পাবেন। ‘‘আর কয়েকদিন পরেই গ্রামে গ্রামে নবান্ন হবে। সেই আশায় একটু বেশি লাভের আশায় মাল কিনেছিলাম। কিন্ত, বৃহস্পতিবার থেকে খুচরো নোটের অভাবে বাজারে খুবই মন্দা যাচ্ছে। তাই সব মাল বিক্রি করতে সময় লাগছে।’’
একই অবস্থা মাড়গ্রাম থানার কনকপুর গ্রামের বাসিন্দা রুহু লেটের। রামপুরহাট বাজারেই সব্জি বিক্রি করে তাঁর সংসার চলে। পাঁচশো, হাজার টাকা নোট বাতিলের ধাক্কায় সব্জি কম বিক্রি হচ্ছে বলে আক্ষেপ করছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের রুহু লেট। রামপুরহাটের হাটতলা থেকে ডাকবাংলা পাড়া হাট, ভাঁড়শালাপাড়া হাটেও ছবিটা আলাদা নয়। সব বাজারেই দেখা গেল অধিকাংশ খুচরো ব্যবসায়ী তাদের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অন্য সময়ের তুলনায় বিক্রিবাটা খুবই কম। বিক্রেতারা জানালেন, তাঁদের কাছে থাকা পাঁচশো, হাজার টাকা দিয়ে এত দিন মহাজনের টাকা মিটিয়েছেন। এখনও মহাজনও ওই নোট নিতে বেঁকে বসেছেন। এর ফলে তাঁরাও খরিদ্দারের কাছ থেকে ওই নোট নিতে পারছেন না। তার জেরে খদ্দেরও কমছে।
তামাল দাস নামে এক খুচরো সব্জি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘বাজারে এমন অবস্থা, যাঁরা পরিচিত খদ্দের, তাঁরাও এখন একশো টাকার অভাবে অল্প মাল কিনছেন।’’ এই পরিস্থিতি তে অনেকেই মোটা টাকার মাল কিনতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানালেন রামপুরহাট বাজারের এক পাইকারি মুদিখানা ব্যবসায়ী।
সব মিলিয়ে বাজারের ছবি অন্য দিনের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। এ দিকে সোমবার ছিল ব্যাঙ্ক বন্ধ, বন্ধ বহু এটিএম। ফলে ১০০ টাকার টান পড়ায় মঙ্গলবারও বিক্রিতে মন্দা থাকার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy