Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুবিচার চেয়ে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকেরা

তাঁদের ডাকে রাজ্যের বহু জেলার সরকারি চিকিৎসকেরাও এ দিন কালো ব্যাজ পরে কাজ করলেন। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানাল চিকিৎসকদের দু’টি সংগঠন।

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসক। সোমবার সহকর্মীরা প্রতিবাদে সামিল হলেন। নিজস্ব চিত্র

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসক। সোমবার সহকর্মীরা প্রতিবাদে সামিল হলেন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বরাবাজার ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ১১:৫২
Share: Save:

চিকিৎসককে নিগ্রহের পরে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পুলিশ মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলে সারা জেলায় সোমবার এক ঘণ্টার জন্য বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখালেন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের ডাকে রাজ্যের বহু জেলার সরকারি চিকিৎসকেরাও এ দিন কালো ব্যাজ পরে কাজ করলেন। জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানাল চিকিৎসকদের দু’টি সংগঠন।

পুরুলিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘জেলার সব ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেছেন। কোথাও অশান্তি হয়নি। স্বাস্থ্যভবনকে জেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছি।’’ জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় রবিবার জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকেরা সরকারী কর্মী। তাঁরা ধর্মঘট বা প্রতীকী কর্মবিরতিতে যেতে পারেন না। তা সত্ত্বেও যাঁরা ধর্মঘটে যাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সার্ভিস রুল অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবার জেলা জুড়ে চিকিৎসকদের প্রতীকী কর্মবিরতির পরে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? তাঁর জবাব, ‘‘ব্যবস্থা নিলে স্বাস্থ্যভবন নেবে।’’ আলাদা ভাবে কি রিপোর্ট পাঠাবেন? তিনি বলেন, ‘‘আলাদা ভাবে কোনও রিপোর্ট পাঠানোর প্রশ্নই নেই। এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। চিকিৎসকদের বিষয়ে স্বাস্থ্যভবন দেখবেন।’’

১৬ এপ্রিল রাতে বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেন অ্যাম্বুল্যান্স নেই, এই অভিযোগে চিকিৎসক বিপ্লব মণ্ডলকে মেঝেতে ফেলে বেদম মারধরের অভিযোগ ওঠে পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি প্রতুল মাহাতো ও অন্যদের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছিল, খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

যদিও গোড়া থেকেই তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। কয়েকদিন পরে দু’জনকে গ্রেফতারের দাবি পুলিশ করলেও কী ভাবে আদালত থেকে তারা জামিন পেলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধেই ঢিলেমির অভিযোগ ওঠে।

এ নিয়ে জেলার চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হন সারা রাজ্যের চিকিৎসকেরা। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দফায় দফায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন স্মারকলিপি দিলেও মূল অভিযুক্ত অধরাই রয়ে গিয়েছে। পুরুলিয়ার ২০টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা শনিবার থেকে কর্মবিরতি করতে গিয়েছিলেন। পরে নানা মহল থেকে অনুরোধ আসায়, তাঁরা এ দিন প্রতীকী কর্মবিরতির কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু তার পরেও ওই নেতাকে গ্রেফতারের কোনও ইঙ্গিত প্রশাসনের তরফে মেলেনি বলে অসন্তুোষ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা।

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘আমার কাছে চিকিৎসকদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। তাঁদের জানিয়েছি, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তের জন্য পুলিশের হাতে ৯০ দিন সময় রয়েছে। অভিযোগ পেলেই যে গ্রেফতার করতে হবে, তার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।’’

বরাবাজারের বিএমওএইচ স্বপন সিং সর্দার বলেন, ‘‘চিকিৎসককে বিনা কারণে মারধর হবে, আর তার শাস্তি হবে না? এ দিনের কর্মবিরতিতেও যদি প্রশাসনের টনক না নড়ে, তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’’ হুড়ার বিএমওএইচ কালীপদ সোরেন জানান, তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে বাঁকুড়া মেডিক্যালের কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক এ দিন সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন। বিএমওএইচ (মানবাজার ২) কৌশিক ঢালির দাবি, তাঁদের আন্দোলন পুরুলিয়ার সীমা ছাড়িয়ে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে অবস্থান বিক্ষোভ করে চিকিতসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। সেই মঞ্চে উপস্থিত হন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার এবং সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের রাজ্য কমিটির কর্তারাও। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক অংশুমান মিত্র ও সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সহ-সভাপতি সুদীপ দাস জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেন। তাঁরা বলেন, ‘‘একটা ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।’’

এ দিন এক ঘণ্টার জন্য চিকিৎসা বন্ধ হওয়ায় কিছু রোগী অসন্তুষ্ট হলেও, অনেকে আবার আন্দোলনকারীদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। মানবাজার গ্রামীন হাসপাতালে কেশরগড় গ্রামের সইফুদ্দিন আনসারি বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের মারধর করা ঠিক কাজ নয়। অভিযুক্তের শাস্তি হওয়া দরকার।’’ একই সুর মানবাজার ২ ব্লকের আগরডি গ্রামের বৃদ্ধা সুশীলা সিং-এর গলায়। তিনি বলেন, ‘‘না বাপু ডাক্তারকে মারধর করা ভাল কাজ নয়। ওঁরা নিজের শহর ছেড়ে আমাদের চিকিৎসা করতে এসেছেন। ডাক্তাররা যদি রোগী দেখা বন্ধ করে দেন, তখন আমরা কোথায় যাব?’’

যদিও অভিযুক্ত প্রতুলবাবুর এক দাবি— ‘‘ওই মারধরে আমি যুক্ত ছিলাম না। রোগীর সঙ্গে আসা কিছু লোকজন চিকিৎসকের উপর চড়াও হয়েছিলেন। আমি তাঁকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE