Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রশাসক নিয়োগ পাঁচকলেজে

এই ব্যাপারে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষা (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৭ অনুসারে এটি করা হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

জেলার পাঁচটি কলেজে প্রশাসক নিয়োগ করল শিক্ষা দফতর। কলেজগুলি হল, পুরুলিয়া জগন্নাথ কিশোর কলেজ, নিস্তারিণী কলেজ, স্পনসর্ড টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, বরাবাজার বিক্রম টুডু স্মৃতি কলেজ ও ঝালদা অচ্ছ্রুরাম স্মৃতি কলেজ। গত ১০ নভেম্বর প্রশাসক হিসাবে কলেজগুলির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকদের দেওয়া হয়েছে।

এই ব্যাপারে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষা (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৭ অনুসারে এটি করা হয়েছে। উপাচার্য দীপকরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই কলেজগুলির পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে এই সিদ্ধান্ত।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই আইনে যে সমস্ত ক্ষেত্রে কলেজে প্রশাসক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে পরিচালন সমিতির মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার কথা নেই। যদি পরিচালন সমিতি সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে কাজ না করে বা সমিতির কেউ দুর্নীতি করেন, তাহলেই ওই আইন অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ করা যায়।

জেলার ওই পাঁচটি কলেজের ক্ষেত্রে এমন কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি। সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলির পরিচালন সমিতিতে এখন সরকার মনোনীত ২ জন, উচ্চ শিক্ষা দফতর মনোনীত ১ জন, বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত ২ জন সদস্য থাকেন। আর থাকেন ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, ১ জন শিক্ষাকর্মী প্রতিনিধি এবং ১ জন ছাত্র প্রতিনিধি। কে পরিচালন সমিতির সভাপতি হবে, সেটা সরকারই ঠিক করে পাঠায়। নিস্তারিণী কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দাণী দেব জানান, পরিচালন সমিতির মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে আরও তিন মাস সেটা বাড়ানো হয়েছিল। ওই কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে রয়েছেন। অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। মনোনীত সদস্যদের নাম পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু নাম আসেনি। তারপরে চিঠি পেলাম, আমাদের কলেজে মহকুমাশাসককে (পুরুলিয়া) প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ জগন্নাথ কিশোর কলেজের অধ্যক্ষ শান্তনু চট্টোপাধ্যায়, স্পনসর্ড টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্যামলকুমার বিশ্বাস, বরাবাজার বিক্রম টুডু স্মৃতি কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক চন্দ্রকান্ত পান্ডারাও জানিয়েছেন, মনোনীত সদস্যদের নাম চেয়ে পাঠিয়েও সাড়া পাননি তাঁরা।

ওয়েবকুটা-র পুরুলিয়া জেলা কমিটির সদস্য বাবর আলি মিদ্যা বলেন, ‘‘কলেজগুলি নিজেদের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করেছিল। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনোনীত প্রতিনিধির নাম পাঠাতে না পারে, সেটার মাসুল কেন কলেজ দেবে?’’ তিনি জানান, পরিচালন সমিতি না থাকা মানে কলেজ পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্বে থাকা কমিটিগুলিও ভেঙে যায়। সে ক্ষেত্রে সমস্ত ছোটবড় কাজ প্রশাসকের হাত ঘুরে হয়। এই প্রক্রিয়ায় ঝঞ্ঝাট বিস্তর। সাধারণত ডিসেম্বরেই সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকা কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। ওই কলেজগুলিতে পরিচালন সমিতি না থাকায় ইলেকশন কমিটিও থাকছে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের কাজ কী ভাবে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা (পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সমিতি)-র জেলা সভানেত্রী সুস্মিতা চৌধুরীও বলছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। মহকুমাশাসকের অনেক কাজ থাকে। সেই সমস্ত সামলে তিনি কলেজ পরিচালনার খুঁটিনাটি দেখতে কতটা সময় দিতে পারবেন? কলেজ থেকেও বারবার মহকুমাশাসকের কাছে ছুটতে হবে।’’ বাম-প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র রাজ্য সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের বক্তব্য, সরকার এক তরফা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ওই কলেজগুলির নির্বাচিত পরিচালন সমিতি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করেছে। এই ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষাঙ্গণে সমস্ত গণতান্ত্রিক পরিসরকে ছোট করে আনা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের এই স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করছি।’’ এই ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রের গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি-প্রভাবিত অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘের পুরুলিয়া জেলার আহ্বায়ক গৌতম মুখোপাধ্যায়ও।

এই ব্যাপারে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপকরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘বিধি মোতাবেক এ বার সরকার পরিচালন সমিতির সভাপতির নাম পাঠাবে। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি সাময়িক।’’ ঝালদা ও বরাবাজার কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টিতে তেমন অস্বাভাবিক কিছু নেই। নাম জমা করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বলেই জানি। আর এটা তো সাময়িক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE