Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

উৎসবে জমজমাট পুরুলিয়া

প্রবীণদের স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল টুসু গানের বই। পৌষ জুড়ে পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে মাদল বাজিয়ে পাতলা কাগজের ওই সমস্ত বই বিক্রি হত।

রোদে-জলে: বিষ্ণুপুরের যমুনাবাঁধে চৌডল ভাসালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।ছবি: শুভ্র মিত্র

রোদে-জলে: বিষ্ণুপুরের যমুনাবাঁধে চৌডল ভাসালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।ছবি: শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

এখনও পুরুলিয়া আছে পুরুলিয়াতেই— দেখে টুসু গেল ভাসানে।

বেশির ভাগ দোকান পাট বন্ধ। রাস্তায় বাসের দেখা মিলেছে হাতে গোনা। রবিবার জেলা জুড়ে বিভিন্ন নদীর তীরে জমে উঠেছিল মেলা। পুরোদস্তুর উৎসবের মেজাজ।

প্রবীণদের স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল টুসু গানের বই। পৌষ জুড়ে পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে মাদল বাজিয়ে পাতলা কাগজের ওই সমস্ত বই বিক্রি হত। এখন আর দেখা যায় না। হোয়াসটসঅ্যাপ, ফেসবুকে চলে উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময়।

মানবাজার হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক প্রদীপ চন্দ বলেন, ‘‘টুসু, ভাদু, করম, জাওয়া পুরুলিয়ার নিজস্ব সাংস্কৃতিক সম্পদ। উন্মাদনাটা কেমন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল।’’ মানভূম কলেজের শিক্ষক, লোকগবেষক তপন পাত্র বলেন, ‘‘পুরুলিয়া তথা সাবেক মানভূমে কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন সংস্কৃতির ধারা বয়ে চলেছে। টুসু কৃষি সভ্যতা কেন্দ্রিক লৌকিক উৎসব। সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেণির মানুষের প্রাণের উৎসব। আধুনিক সভ্যতার চাপে পড়ে এর বহিরঙ্গের পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু মানুষের মনে সংস্কৃতির শিকড় রয়ে গিয়েছে।’’

কেমন?

মানবাজারের বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন প্রায় ৯০টি গাড়ি যাওয়া-আসা করে। রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, সার দিয়ে বাস দাঁড়িয়ে। বেশির ভাগই স্ট্যান্ড থেকে বের হয়নি এ দিন। হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী ইতিউতি ঘোরাফেরা করছিলেন। জেলা বাস মালিক সমিতির সদস্য মানবাজারের বাসিন্দা মনোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসের চালক ও কর্মীরা ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। লাইনের অধিকাংশ বাস বন্ধ রয়েছে। কলকাতা যাওয়ার বাস কী ভাবে চালাব ভেবে কূল পাচ্ছি না।’’

মানবাজার বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে মিষ্টির দোকান রয়েছে নিখিল মণ্ডলের। জানালেন, দোকানে ২৬ জন কর্মী কাজ করেন। রবিবার রয়েছেন মোটে তিন জন। স্থানীয় ডেকরেটর মধুপুর গ্রামের কৌশিক ঘোষেরও একই অবস্থা। বলেন, ‘‘৩২ জন কর্মীর একজনও আজ কাজে আসেননি। কবে আসবেন তা-ও বুঝতে পারছি না।’’

এ দিন জেলার কাঁসাই, কুমারী, টটকো, নেংসাই, শিলাবতী নদীর তীরে এবং স্থানীয় খালের ধারে মেলা বসেছে। পুঞ্চা থানা এলাকায় বড়গ্রামের কাছে শিলাবতী নদীর উৎস। সেখানে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে মেলা। চলবে সাত দিন।

এ বছর কংসাবতীর তীরে টুসু গান আর চৌডল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। মানভূম সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির মুখপাত্র অজিত মাহাতো জানান, মানভূমের মূল ঐতিহ্য যাতে যুগের বদলের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে তাঁরা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকেও কংসাবতী তীরে লোকপ্রসার প্রকল্প দিবস উদ্‌যাপন হয়েছে। দফতরের আধিকারিক উৎপল পাল জানান, সেখানেও হয়েছে টুসু গান আর চৌডল প্রতিযোগিতা। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় প্রমুখ। মন্ত্রী বলেন, ‘‘লোকপ্রসার প্রকল্প দিবস শিল্পীদের সম্মান দেবে, সংস্কৃতিকেও রক্ষা করবে।’’

পুরুলিয়া ১ ও আড়শায় নদীর দুই তীরের আটটি গ্রাম মিলে অষ্টগ্রাম মেলা কমিটি গড়ে একই ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। মেলা কমিটির পক্ষে মধুসূদন মাহাতোর দাবি, প্রতিযোগিতায় ভালই সাড়া মিলেছে।

অন্য দিকে, দক্ষিণ বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরের জলাধারে মকর সংক্রান্তিতে দল বেঁধে চৌডল ভাসাতে আসার রেওয়াজ রয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই মুকুটমণিপুর জলাধার সংলগ্ন পরেশনাথ মন্দিরেও পূন্যার্থীদের ভিড় দেখে গিয়েছে। খাতড়ার পড়কুলা এলাকায় কংসাবতী নদীতে সকাল থেকে চৌডল ভাসানোর ভিড় ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Festive mood Tusu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE