Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মেদ ঝরিয়ে ফিট থাকতে থানায় জিম

শুক্রবার ওই জিমের উদ্বোধন করেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তিনি বলেন, “বেলিয়াতোড় থানার এই উদ্যোগ খুবই ভাল।

শরীরচর্চা: বেলিয়াতোড় থানায়। নিজস্ব চিত্র

শরীরচর্চা: বেলিয়াতোড় থানায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলিয়াতোড় শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১০
Share: Save:

ভুঁড়ির ভারে কেউ জোরে হাঁটতে গিয়ে একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কেউ আবার অল্প দৌড়েই হাঁফাতে হাঁফাতে কোমরে হাত দিয়ে থেমে যাচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে গিয়ে নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল সে ভাবে নিয়েই উঠতে পারেন না অনেক পুলিশ কর্মী। ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ায় হাঁটুর ব্যথা থেকে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো নানা রোগের শিকার হচ্ছেন তাঁরা।

তাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে থানাতেই আস্ত জিমন্যাসিয়াম খুলে ফেলল বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থানা। থানা চত্বরের একটি ঘরে চালু হওয়া জিমে সময় পেলেই পুলিশ কর্মীরা গিয়ে সাইক্লিং করে নিচ্ছেন। কেউ বা ডাম্বেল ভাঁজছেন। কেউ কেউ আবার সিক্স প্যাক, এইট প্যাক কী করে তৈরি করা যায়, যন্ত্রপাতি ঘেঁটে সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন।

শুক্রবার ওই জিমের উদ্বোধন করেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তিনি বলেন, “বেলিয়াতোড় থানার এই উদ্যোগ খুবই ভাল। জেলার সব ক’টি থানাতেই যাতে এই ধরনের জিম গড়ে তোলা হয়, সেই চেষ্টা চলছে।”

ঠিক এক বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টে এক ব্যক্তি জনস্বার্থে মামলা করে প্রশ্ন তুলেছিলেন— পুলিশের মতো শৃঙ্খলাপরায়ণ কর্মীদের শারীরিক সক্ষমতা কমে গেলে তাঁদের পক্ষে অপরাধীদের ধরা বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা অথবা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কী করে সম্ভব হবে? হাইকোর্টও প্রশ্ন তুলেছিল, ভুঁড়িধারী পুলিশ কী করে অপরাধীদের ধাওয়া করে ধরবে? কাজের অতিরিক্ত চাপেও পুলিশকে শারীরিক ভাবে সক্ষম থাকতে হবে বলে জানিয়েছিল আদালত। পুলিশের শারীরিক সক্ষমতা (ফিটনেস) ও সতর্কতা বজায় রাখতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে অথবা এ নিয়ে রাজ্য সরকারের কী নীতি রয়েছে— হলফনামা আকারে তা আদালতে পেশ করতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে।

সে বিতর্কে না গিয়ে বেলিয়াতোড় থানার পুলিশকর্মীরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে ও কিছুটা অনুদান সংগ্রহ করে জিমের সরঞ্জাম কিনে ফেলেছেন। বেলিয়াতোড় থানার মাঝ বয়সী এক পুলিশ কর্মী বলেন, “আমাদের চাকরিতে ঘুম বা খাওয়া দাওয়ার কোনও ঠিক থাকে না। এ সবের কারণে শরীর ঠিক রাখাই মুশকিল। শরীরে মেদ বাড়া নিয়ে বাইরের লোকজনের টিপ্পনি তো শুনতেই হয়। কমবয়েসি সহকর্মীরাও সুযোগ পেলে বলতে ছাড়েন না।’’

বেলিয়াতোড় থানার পুলিশ কর্মীদের গড় বয়স ৪৫ বছর। কমবয়সি পুলিশ কর্মী, গ্রামীণ পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা জিম নিয়ে উৎসাহী হলেও থানার পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এক পুলিশ কর্মী বলেন, “এ সব যদি আগে হতো, তাহলে কথাই ছিল না। এখন ব্লাডপ্রেশার, সুগারের রোগী হয়ে পড়েছি। জিমে গিয়ে কতটা কসরত করা যাবে, তা নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই এগবো।”

বেলিয়াতোড় থানার এই উদ্যোগ নজর কেড়েছে জেলার অন্যান্য থানাগুলিরও। বাঁকুড়া সদর মহকুমার এক থানার ওসি বলেন, “আমাদের থানার বহু পুলিশ কর্মীও বলছেন একটা জিম না হলেই নয়।’’

ঘটনা হল, গত কয়েক বছরে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ অনেকটাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত প্রাণায়াম, যোগব্যায়াম অভ্যাস করানো হয় পুলিশ লাইনে। কমান্ডো প্রশিক্ষণ জানা পুলিশ কর্মীরা যাতে নিজেদের অভ্যাস জারি রাখতে পারেন, সে জন্য পুলিশ লাইনে একটি বিশেষ পরিকাঠামো যুক্ত মাঠও তৈরি করা হয়েছে।

বস্তুত, ভুঁড়িধারী পুলিশ দেখলে ভুঁড়ি কমানোর পরামর্শ দিতেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন এক পুলিশ কমিশনার জানান— সিদ্ধার্থবাবু মনে করতেন, পুলিশের চেহারা হবে ঋজু, চাবুকের মতো। সিদ্ধার্থবাবুকে অনেক বারই দেখা গিয়েছে, পরিচিত কোনও পুলিশ অফিসারের ভুঁড়িতে হাত বুলিয়ে হেসে তা কমাতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই পথেই কি এ বার এগোবে বাঁকুড়ার পুলিশ?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beliatore Police Station Police Gym
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE