Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অপুষ্ট শিশুর স্বাস্থ্য-দত্তক দেওয়া হল

মানবাজার মহকুমা জুড়ে চিহ্নিত ৯১১ জন অপুষ্ট শিশুর স্বাস্থ্য উদ্ধারে মঙ্গলবার শিশু দিবসে স্বাস্থ্য-দত্তক দিয়ে অঙ্গীকার করাল প্রশাসন। শুধু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা আমজনতাই নয়, স্বাস্থ্য-দত্তক নিলেন খোদ মন্ত্রী থেকে প্রশাসনিক কর্তারাও।

ভরসা: শিশু পালনের পরামর্শ শোনাচ্ছেন এসডিও। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: শিশু পালনের পরামর্শ শোনাচ্ছেন এসডিও। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:২০
Share: Save:

পাশের বাড়ির শিশুটি কি ঠিক মতো খাচ্ছে? জ্বর-সর্দিতে ভুগছে না তো? শিশুর মা কেমন আছেন? নিয়মিত এমনই খোঁজখবর নিয়ে এলাকার অপুষ্ট শিশুদের সুস্থ করে তুলতে কিছু মানুষকে বাছল প্রশাসন। দেওয়া হল তাঁদের ওই শিশুর ‘স্বাস্থ্য-দত্তক’। মানবাজার মহকুমা জুড়ে চিহ্নিত ৯১১ জন অপুষ্ট শিশুর স্বাস্থ্য উদ্ধারে মঙ্গলবার শিশু দিবসে স্বাস্থ্য-দত্তক দিয়ে অঙ্গীকার করাল প্রশাসন। শুধু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা আমজনতাই নয়, স্বাস্থ্য-দত্তক নিলেন খোদ মন্ত্রী থেকে প্রশাসনিক কর্তারাও। মহকুমা প্রশাসনের নিজস্ব এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে— ‘শিশু সঙ্গী প্রয়াস’।

মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘শিশু বিকাশ প্রকল্প বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, মানবাজার মহকুমা এলাকায় ৯১১ জন শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এই সব শিশুদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফেরাতে প্রশাসনিক আধিকারিক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সাধারণ বাসিন্দাদের একজন করে অপুষ্ট শিশুর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন থেকে শিশুসাথী প্রকল্পে তাদের ওষুধ এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়েছে। ওই শিশুরা ও তাঁদের মায়েরা তা খাচ্ছেন কি না, নিয়মিত খোঁজ নেবেন স্বাস্থ্য-দত্তকেরা।’’ তিনি জানান, অপুষ্টি দূর করার জন্য তাঁরা আড়াই মাস সময় লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরেছেন। স্বাস্থ্য দত্তক নেওয়া ব্যক্তি এই সময়ের মধ্যে শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয় দেখভাল করবেন। মহকুমাশাসকের আশা, ‘‘২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে আমরা মহকুমা এলাকায় অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা শূন্যতে নামিয়ে আনব।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, শিশুসাথী প্রকল্পে সদ্যোজাত থেকে পাঁচ বছরের শিশু ও তাদের মায়েদের পুষ্টির জন্য কিছু খাবার ও ওষুধপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও অপুষ্টি কেন দূর হচ্ছে না, তা নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। তবে কি খাবার ও ওষুধ ঠিকমতো খাওয়ানো হচ্ছে না? এই সংশয় থেকেই খাওয়া নিশ্চিত করাতেই এক জনকে নজর রাখার দায়িত্ব দেওয়ার ভাবনা আসে মানবাজার মহকুমার প্রশাসনিক আধিকারিকদের। ঠিক হয়, শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য-দত্তক দেওয়া হবে। সে জন্য শিশু দিবেসের দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। এই মহকুমার প্রতিটি ব্লকে অনুষ্ঠান করে খাদ্য দেওয়া হয় এবং স্বাস্থ্য-দত্তকদের অঙ্গীকার করানো হয়। মানবাজারের জিতুজুড়িতে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল, মানবাজারের এসডিপিও আফজল আবরার, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো, বিডিও নীলাদ্রি সরকার, বিএমওএইচ রামকৃষ্ণ হেমব্রম প্রমুখ। তাঁদের অনেকেই এক একটি শিশুর স্বাস্থ্য-দত্তক নেন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, শিশুদের বয়স এবং ওজন অনুপাতে তাদের স্বাস্থ্য বিবেচনা করা হয়। নবজাত শিশুদের ওজন আড়াই কিলোগ্রাম হলে স্বাভাবিক ধরা হয়। শিশু বিকাশ প্রকল্পের কর্মীরা একটি গ্রাফ চিত্রে শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিসংখ্যান বিষয়টি তুলে ধরেন। তাঁদের ভাষায় ‘সবুজ’ রঙের শিশুরা স্বাভাবিক শিশু। ‘হলদে’ রঙের শিশুরা স্বাভাবিকের তুলনায় পিছিয়ে এবং ‘লাল’ রঙের শিশুরা অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে ধরা হয়।

মানবাজার ১ ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক অনুপ সাহা বলেন, ‘‘মানবাজার ১ ব্লকে এক দিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার। ইউনিসেফের হিসাব মতো, শতকরা দু’জন শিশু অপুষ্টির শিকার হলেও বিপদ সীমার ঊর্ধ্বে নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্লক এলাকায় শতকরা ১ জন শিশু অপুষ্টির শিকার। শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবারের অভাবে এই শিশুরা অপুষ্টির শিকার নয়। প্রতি দিন খাবারের পর নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া, রোগ ব্যাধি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার জন্যেও এমনটা হতে পারে। তবু এই ১৪৯ জন অপুষ্ট শিশু থাকা উচিত নয়।’’ তিনি জানান, ২৬ জানুয়ারির মধ্যে মূল্যায়ণ করা হবে।

বাড়ি ফেরার পথে শিশুকে কোলে আঁকড়ে মানবাজার থানার পারকিডি গ্রামের শীলা সিংহ, সর্দার রমণী সিংহ সর্দার, কাশীগোড়া গ্রামের অঞ্জু মাহাতোরা বলেন, ‘‘আমরা তো শিশুর যত্ন নিই। যদি আলাদা ভাবে কেউ আমাদের শিশুর স্বাস্থ্যের দেখভাল করতে চান, তাহলে মন্দ কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malnutrition Health-Adoption Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE