Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কী কী উপায়ে দত্তক, জানাবে জেলা প্রশাসন

কখনও অভাব, কখনও লোকলজ্জা— তার জেরে সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইছেন মা। নানা ঘটনায় বারেবারেই তা সামনে এসেছে। কিন্তু চাইলেই তো আর কোলের সন্তানকে কাছ-ছাড়া করা যায় না।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

চিত্র ১: সপ্তাহ দু’য়েক আগের কথা। বছর দেড়েকের শিশুকন্যাকে মুর্শিদাবাদের নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দিয়ে এসেছিলেন মহম্মদবাজারের স্বামী-বিচ্ছিন্না তরুণী। চাইল্ড লাইন ও পুলিশ খবর সে খবর জেনে যাওয়ায় ‘শিশু বিক্রির’ চেষ্টা সফল হয়নি। তবে তরুণীর দাবি ছিল, মেয়েকে বিক্রি করেননি। অভাবের মধ্যে দুই মেয়েকে মানুষ করা সম্ভব ছিল না। মেয়েকে ভাল করে মানুষ করতেই ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছে রেখে এসেছিলেন। এ ভাবে কাউকে শিশু মানুষ করতে দেওয়া যে আইনসিদ্ধ নয়, সে কথা জানতেন না। বেশ কিছু দিন নজরদারিতে রেখে শিশুটিকে ফের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

চিত্র ২: হাসপাতালে ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে তাকে আর নিয়ে যেতে চাইছিলেন না মা। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে সন্তান এসেছে যে! মওকা বুঝে ৭০০ টাকার বিনিময়ে ওই মহিলার কাছ থেকে শিশুকে নিয়ে দুবরাজপুরের এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক মারুতি ভ্যানচালক। পরে চাইল্ড লাইন পুলিশ সূত্রে তা জানতে পেরে শিশুটিকে উদ্ধার করে হোমে পাঠায়। মাস কয়েক আগের ঘটনা।

কখনও অভাব, কখনও লোকলজ্জা— তার জেরে সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইছেন মা। নানা ঘটনায় বারেবারেই তা সামনে এসেছে। কিন্তু চাইলেই তো আর কোলের সন্তানকে কাছ-ছাড়া করা যায় না। সন্তান দত্তক দেওয়ার এবং নেওয়ার আইনগত পদ্ধতি রয়েছে। তেমনটা জানা না থাকায় ভুগতে হয়েছে উপরের দু’টি ক্ষেত্রেও। ক’টা দিনেই অন্যের সন্তানকে আপন করে তুলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, ফিরিয়ে দিতে হয়েছে চোখের জলে। ‘‘এমনটা রুখতে জনসচেতনতা মূলক ব্যাপক প্রচার চাই’’— বলছেন কেন্দ্রীয় সরকারের দত্তক সংক্রান্ত পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য, অধ্যাপক জয়দেব মজুমদার। সায় দিচ্ছেন জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নিত্যানন্দ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘যখনই সুযোগ পাই বা কোনও ঘটনা সামনে আসে তখন সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আরও বেশি করে প্রচার সত্যিই জরুরি।’’ আগামী দিনে তেমনটা করা হবে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

সিডব্লুউসি, চাইল্ডলাইন এবং দত্তক বিষয়ক পরামর্শদাতা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত তিন ধরনের শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়। এক, অনাথ (যে শিশুর বাবা–মা নেই)। দুই, ঝোপ-ঝাড়, রেলের কামরা বা অন্য কোথাও পাওয়া যাওয়া শিশু। তিন, নিঃশর্ত প্রদান (অর্থাৎ, লোকলজ্জা বা অভাবের তাড়নায় কোনও মা শিশুকে নিজের কাছে রাখতে না চেয়ে জেলা সিডব্লুসির কাছে দিয়ে যায়)। নিয়ম হল, দু’বছরের পরিত্যক্ত কোনও শিশুকে পাওয়া গেলে সিডব্লুসি স্পেশ্যাল অ্যাডাপ্টেশন এজেন্সির হাতে তাকে তুলে দেয়। দু’বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য এজেন্সি সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে দু’মাস অপেক্ষা করে। এবং চার বছরের পর্যন্ত শিশুর জন্য চার মাস অপেক্ষা করে। কোনও দাবি আসছে কিনা দেখা হয়, না এলে তারপরই সেই শিশুটি দত্তক দেবার অবস্থায় আসে।

আইনি পদ্ধতি কী?

কোনও নিঃসন্তান দম্পতি বা কোনও একক মহিলা বা পুরুষ শিশু দত্তক নিতে চাইলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করবেন ‘কারা’-র (সেন্ট্রাল অ্যাডাপ্টেশন রিসোর্সেস অথরিটি) পোর্টালে। কেন তিনি বা তাঁরা শিশু দত্তক নিতে চান, বিস্তারিত তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। আবেদন খতিয়ে দেখতে বলা হয় স্থানীয় স্পেশ্যাল অ্যাডাপ্টেশন এজেন্সি, জেলা সমাজ কল্যাণ দফতর, সিডব্লুউসি, ডিসিপিওকে।
যাঁরা দত্তক নেবেন, তাঁদের বাড়ি গিয়ে সরেজমিন দেখে আসা হয়। মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক পরিস্থিতি বিচার করে আর্জি মঞ্জুর বা খারিজ হতে পারে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর জেলা জজের কাছে শিশু পছন্দ করার আবেদন জানানো হয়। সব প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। এরপরই শিশু আইনগত ভাবে হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু, এত কথা জানাবে কে? প্রচারই তো নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

adopt Baby District administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE