Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অজয়ে নয়া সেতু পেয়ে খুশি কেঁদুলি

জয়দেব হাটে মাছের আড়ৎ চালান  তপন হাজরা। আনাজ বিক্রি করেন দশরথ দাস। তাঁদের অজয় নদ পার হতে হয় না ঠিকই— কিন্তু সেই হাটে বেশি ভিড় জমে না, সব সময় আসে না আনাজও। বাধা অজয় নদ।

নিজস্ব  সংবাদদাতা
জয়দেব শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০১
Share: Save:

অজয় পেরিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের মেজে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ইলামবাজারের জয়দেবের কেঁদুলির অসীম দে।

দুর্গাপুর লাগোয়া মালানদিঘিতে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এ বার ভর্তি হয়েছেন জয়দেব ঘেঁষা গ্রাম জনুবাজারের তরুণী পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। তাঁকেও পেরতে হয় অজয় নদ।

জয়দেব হাটে মাছের আড়ৎ চালান তপন হাজরা। আনাজ বিক্রি করেন দশরথ দাস। তাঁদের অজয় নদ পার হতে হয় না ঠিকই— কিন্তু সেই হাটে বেশি ভিড় জমে না, সব সময় আসে না আনাজও। বাধা অজয় নদ।

কিন্তু, সোমবার কাঁকসার রঘুনাথপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ঘোষণা হাসি ফুটিয়েছে তাঁদের প্রত্যেকের মুখে। তাঁরা সকলেই বলছেন— ‘‘কী যে উপকার হলো, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রীকে।’’

বীরভূমের এক দিকে জয়দেব-কেঁদুলি। অন্য দিকে পশ্চিম বর্ধমানের শিবপুর। দুই শহরের মধ্যে দিয়ে বইছে অজয় নদ। পারাপারের উপায় নৌকা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা— ১৬৫ কোটি টাকা খরচে সেখানে তৈরি হবে সেতু।

সোমবার কাঁকসায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস ও পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই এলাকায় তৈরি হবে নতুন সেতু। কাঁকসা ও জয়দেবের মধ্যে সেতু তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। কারণ বীরভূম ও পশ্চিম বর্ধমানের অনেককে নানা প্রয়োজনে অজয় নদ পেরতে হয়। এলাকাবাসীর বক্তব্য, বর্ষাকালে চার মাস বাদে অজয় নদে জলস্তর কমলে হিউম-পাইপ, মোরাম-বোল্ডার দিয়ে তার উপর অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয়। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই ওই রাস্তা ভেসে যায়। তখন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। কিন্তু বর্ষায় অজয়ের ভয়াল রূপ উপেক্ষা করে কখনও কখনও নৌকা চালানোও সম্ভব হয় না। এ বার যেমন খানকয়েক নিম্নচাপের জেরে টইটম্বুর অজয়ে নৌকা চালানো সম্ভব যায়নি। আবার জল অনেকটা কমে গেলেও নৌকা চালানো যায় না। দুর্ভোগ হয় তখনও।

জয়দেব কেঁদুলি অঞ্চলের বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রতিমুহূর্তে বীরভূমের এই প্রান্তের মানুষ দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার জন্য অজয় পার হয়ে সহজ রাস্তাই ধরতে চান। ইলামবাজার হয়ে ঘুরে দুর্গাপুর মুচিপাড়া যেতে হলেও কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা বেশি যেতে হয়। একই বক্তব্য জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরও। তাঁরা জানান, অজয়ের ওই অংশে সেতু তৈরি হলে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মুচিপাড়া-শিবপুর রাস্তা ধরে শান্তিনিকেতন যাওয়ার দূরত্ব প্রায় ২২-২৫ কিলোমিটার কমে যাবে। এমনকী জেলা সদর সিউড়ি এবং দুবরাজপুর থেকে দুর্গাপুরের দূরত্ব কমবে একই রকম।

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অসীমবাবু বলেন, ‘‘নদীর জল বাড়লে চিন্তা হয়, স্কুলে কী ভাবে পৌঁছব।’’ পল্লবীও বলছেন, ‘‘বর্ষায় কী যে কষ্ট হয় বলে বোঝাতে পারবো না। সেতু হলে এতটা পথ ঘুরে যেতে হবে না।’’

এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, দুর্গাপুর লাগোয়া বেসরকারি হাসপতাল বা বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা মিললেও শর্ত একটাই, পেরতে হবে অজয়। বর্ষাকালে তা সম্ভব হতো না। সেতু তৈরি হলে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে অনেক সুবিধা হবে। জয়দেব কেঁদুলি মেলার সময় হাজার হাজার লোক বর্ধমানের নানা এলাকা থেকে বীরভূমে আসেন। বাসিন্দাদের দাবি, এর ফলে বর্ধমান ও বীরভূম তো বটেই— পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার একাংশের মানুষও উপকৃত হবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ত সড়ক (হাইওয়ে ২ ডিভিশন) সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাবে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের পরই কবে থেকে কাজ শুরু হবে তা ঠিক করা হবে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতেই ইলামবাজারে অজয় নদে একটি নতুন সেতু তৈরিতে সায় দিয়েছে নবান্ন। ১০২ কোটি টাকা খরচে ইলামবাজারে অজয়ের উপর পুরনো সেতুটির পূর্ব দিকে (নদের ‘ডাউন স্ট্রিমে’) ৪৫ মিটার দূরত্বে তৈরি হবে নতুন সেতু।

জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের সূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে জয়দেব মেলার সময় জেলা সফরে এসে কখন তিনি ওই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন, তার অপেক্ষায় রয়েছেন অজয় লাগোয়া এলাকার অসংখ্য মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ajay River Bridge Keduli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE