মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের মধ্যেই পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের অফিসের বাইরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবস্থান আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। তাতেই শঙ্কিত পুলিশ-প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে কুড়মি সমাজকে আন্দোলন কিছু দিন পিছিয়ে নিতে অনুরোধ করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাঁদের মত স্পষ্ট করেনি কুড়মি সমাজ।
মুখ্যমন্ত্রী আজ, সোমবার পুরুলিয়ায় আসছেন। মঙ্গলবার তাঁর প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা। হেমতাবাদ-কাণ্ডের পরে এমনিতেই পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে কার্যট তটস্থ। তারই মধ্যে শহরে ওই আন্দোলনের জন্য হাজার-হাজার মানুষ এলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে। মুখ্যমন্ত্রীর সফর চলাকালীন এই কর্মসূচী নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেই টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
সাধারণত এই জেলায় এলে মুখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রভবন বা জেলা পরিষদ প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। যেহেতু এই দুই প্রেক্ষাগৃহই জেলাশাসকের দফতরের কাছাকাছি, তাই এ বারের বৈঠক থেকে রবীন্দ্রভবন বাদ পড়তে চলেছে বলে খবর। হেমতাবাদে বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় টপকে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এক তরুণী পৌঁছে যাওয়ায় তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইউনিট বা পুলিশ রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠকের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। কারণ রবীন্দ্রভবনের দু’দিকে রাস্তা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক জেলা পুলিশ লাইনের ভিতরেই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী কুড়মি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গড়েছেন। কুড়মালি ভাষাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। আর কুড়মি সমাজ তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করলেও, তা রাজ্যের এক্তিয়ারে নেই। সম্পূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। রাজ্য ইতিমধ্যে ওদের দাবিটি কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছে। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করার বা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অবস্থান কর্মসূচির উদ্যোক্তাদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু উদ্যোক্তাদের তরফে মুখপাত্র তা নাকচ করে দিয়েছেন।’’
আন্দোলন কর্মসূচির উদ্যোক্তাদের মুখপাত্র অজিত মাহাতো রবিবার দাবি করেন, ‘‘প্রশাসনিক কর্তারা আমাদের মৌখিক ভাবে এমন অনুরোধ জানিয়েছেন বটে। তবে কোনও চিঠি দেননি। তাছাড়া আমাদের ‘জিগিড় জিটা গবচন’ নামে এই কর্মসূচি অনেকদিন আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মসূচীকে ঘিরে জেলা জুড়ে কয়েকশো সভা হয়েছে। এখন সেখান থেকে কী ভাবে সরে আসতে পারি?’’ সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফের কেন্দ্রের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী জুয়েল ওরাংকে চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে তিনি ফের কুড়মি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাঁর মন্ত্রিসভা যে এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সে কথাও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অজিতবাবু বলেন, ‘‘আমরা চিঠির বিষয়টি জানি। কিন্তু কোনও সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত করার প্রাথমিক রিপোর্ট দেয় রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। কিন্তু তার আগে রাজ্যের তরফে সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট) এই মর্মে একটি রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্ট এমন ভাবে পেশ করতে হবে যে তার উপর ভিত্তি করে আরজিআই আমাদের এই স্বীকৃতি দেবে। আমরা চাই বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হোক। সেই কমিটির তত্ত্বাবধানে এই রিপোর্ট তৈরি হোক। তারপরেই তা পাঠানো হোক।’’ তাঁর দাবি, সরকার বা প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে, তাঁরা আন্দোলন তোলার কথা ভাববেন।
এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারকে কোনও স্মারকলিপি দিলে আমি তা গ্রহণ করব না। কারণ আমি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি নই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy