উদ্ধার: এই সেই ময়াল। নিজস্ব চিত্র
‘সেই সাপ জ্যান্ত, গোটা দুই আনতো।’ কিন্তু কী ভাবে? বস্তাবন্দি করে মোটরবাইকে চাপিয়ে। বাবুরাম সাপুড়েও এমন কাণ্ড করার আগে হয়তো দু’বার ভেবে নিতেন। কারণ বস্তার ভিতরে থাকা ময়াল সুকুমার রায়ের কবিতায় বলা সাপের মতো নিরীহ নয় মোটেও। কিন্তু পুরুলিয়ার বনকর্মীরা ডরালেন না।
মাঝে মধ্যেই নড়ে উঠছিল বস্তাটা। সঙ্গে সঙ্গে হাত দিয়ে চেপে ধরছিলেন বন কর্মী। হাত আলগা করার উপায় নেই। মাঝে মধ্যেই দেখে নিচ্ছিলেন, বস্তার মুখে বাঁধা দড়ির ফাঁস আলগা হয়ে যায়নি তো। উপায়ই বা কী? বস্তায় রয়েছে আস্ত ময়াল! লোকালয় থেকে উদ্ধার করা সেই ময়াল বস্তায় ভরে মোটরবাইকে ২২ কিলোমিটার পথ উজিয়ে পাড়া থেকে পুরুলিয়ায় বন দফতরের অফিসে শুক্রবার এ ভাবেই পৌঁছে দিলেন দুই বনকর্মী।
এ দিন পাড়া থানার বাগালিয়া গ্রামে এক গৃহস্থের ঘর থেকে ময়ালটি উদ্ধার হয়। চাষের কাজ করতে যাওয়ার সময় গৃহস্থের নজরে পড়ে ময়ালটি। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে হইচই পড়ে যায়। তবে তাঁরা ময়ালটিকে মারধর করেননি। উল্টে ময়ালের উপরে বস্তা পেতে দিয়ে বন কর্মীদের তাঁরা খবর দেন। মোটরবাইক নিয়ে সেখানে ছুটে আসেন স্থানীয় দুই বনকর্মী। তাঁরাই বস্তার মধ্যে ময়ালটিকে ভরে ফেলেন। তারপরে মোটরবাইকে দু’জনের মাঝখানে বস্তাবন্দি ময়ালটি রেখে পুরুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন।
পুরুলিয়ার রাঘবপুরে পুরুলিয়া উত্তর বন বিভাগের অফিসে ময়ালটিকে নিয়ে আসেন বন কর্মীরা। সেখানে সাপটিকে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করা হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ণবয়স্ক ময়ালটি আট ফুট লম্বা ও ২০ কেজি ওজনের। সাপটিকে কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে সুরুলিয়ার মিনি জু-তে পাঠানো হবে।
বন দফতরের কিছু কর্মীর কাছে জানা গিয়েছে, এ দিন আকাশ মেঘলা ছিল। কিছু এলাকায় বৃষ্টিতে রাস্তা পিছল হয়ে থাকায় ময়াল নিয়ে খুব জোরে গাড়ি চালাতে পারেননি ওই দুই বনকর্মী। জানা গিয়েছে, ময়ালটি মাঝে মধ্যেই বস্তার মধ্যে নড়াচড়া করতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে বস্তাটি চেপে ধরেন বনকর্মীরা। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পরে ফের ময়ালটি নড়তে থাকে। ওজনও কম নয়। সামলে আনতে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা হয়। যদিও এ নিয়ে ওই দুই বন কর্মী কিছু বলতে চাননি।
তবে বনকর্মীরা অনেকেই জানিয়েছেন, অনেক সময় এমন প্রত্যন্ত এলাকায় ময়াল উদ্ধার হয়, যেখানে গাড়ি ঢোকে না। সে ক্ষেত্রে মোটরবাইকে এ ভাবেই তাঁরা উদ্ধার করে ময়াল নিয়ে আসেন। অনেকে এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ ভাবে নিয়ে আসার সময়ে ময়ালটির যেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনই ময়ালেরও তার বাহককে আক্রমণ করার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে পুরুলিয়ার পাড়ার রেঞ্জ অফিসার কাদল পান্ডের দাবি, ‘‘বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ক্ষেত্রে মোটরবাইকে ময়াল উদ্ধার করে আনতে হয়। তবে বেশির ভাগ সময়ে গাড়িতেই নিয়ে আসা হয়।’’ তিনি জানান, এ দিন ওই দুই বনকর্মীর বাড়ি বাগালিয়া গ্রামের কাছে থাকায় তাঁরাই মোটরবাইক নিয়ে সেখানে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy