Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন, বিভ্রান্তি জেলা জুড়ে

পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে শেষ বারের মতো বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল হাসিনারা। অভিভাবকেরাও পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে গাছতলা বা কারও বারান্দায় বসে গল্পে মেতে উঠেছিলেন।

উচ্ছ্বাস: জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষার পরে। সিউড়িতে মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

উচ্ছ্বাস: জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষার পরে। সিউড়িতে মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৪
Share: Save:

ঘড়ির কাঁটা তখন পেরিয়েছে বেলা ১১টা। অন্য দিনের মতোই সন্তানদের নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পৌঁছেছেন ময়ূরেশ্বরের কুলিয়াড়া গ্রামের রবীন্দ্রনাথ দাস, নানুরের পাটনীলের কাজী আব্দুল হামিদ। রবীন্দ্রনাথবাবুর মেয়ে কোয়েল ময়ূরেশ্বর বালিকা বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। আব্দুল হামিদের মেয়ে হাসিনা খাতুন পরীক্ষা দিচ্ছে জুবুটিয়া জপেশ্বর বিদ্যামন্দির থেকে।

পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে শেষ বারের মতো বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল হাসিনারা। অভিভাবকেরাও পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে গাছতলা বা কারও বারান্দায় বসে গল্পে মেতে উঠেছিলেন। আচমকা দাবানলের মতো ছড়াল প্রশ্ন-ফাঁসের গুজব। মুহুর্তের উদ্বেগ ছড়াল চারপাশে। ততক্ষণে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে ‘ফাঁস’ হওয়া প্রশ্নপত্র। সেটা দেখেই আশঙ্কায় পড়ে কোয়েলরা। পরীক্ষা হবে কি না, তা নিয়ে একরাশ উদ্বেগ নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকল তারা। দুশ্চিন্তায় পড়লেন স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় থাকা অভিভাবকেরাও।

জুবুটিয়া বা ময়ূরেশ্বর নয়, মঙ্গলবার এমনই ধন্দে পড়তে হল সিউড়ি থেকে ইলামবাজার, রামপুরহাট থেকে দুবরাজপুর, নানুর থেকে কীর্ণাহারের অনেক পরীক্ষার্থীকে।

এ দিন সকালে জেলার কয়েক জনের হোয়াটসঅ্যাপে মাধ্যমিকের জীবনবিজ্ঞানের ‘প্রশ্নপত্র’ ছড়াতে থাকে। ৭ পাতার সেই প্রশ্নপত্র চোখে পড়ে অনেক পরীক্ষার্থী, অভিভাবকদেরও। উদ্বেগ ছড়ায় তখনই। চিন্তায় পড়েন বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে ইন-চার্জরাও। কারণ তখনও প্রশ্নপত্র প্যাকেট-বন্দি। তাই সত্যি-মিথ্যা যাচাই করে পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকদের আশ্বস্ত করতে পারছিলেন না তাঁরা। ধন্দ নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকে পরীক্ষার্থীরা।

ইলামবাজারের নবগ্রামের আল হিলাল মিশনের ৩৩ জন পরীক্ষার্থীর সিট পড়েছে দুবরাজপুরের সারদেশ্বরী বিদ্যামন্দির ফর গালর্স-এ। পরীক্ষার্থীরা সবাই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে যাওয়ার পর দুবরাজপুরের ওই স্কুলের শিক্ষক মহম্মদ তুষার হোসেনের মোবাইল ফোনে আসে জীবনবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র। তাঁর পাশে তখন দাঁড়িয়ে স্কুলের আরেক শিক্ষক শহিদুর রহমান। বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন দু’জনেই। সহকর্মীদের অনেককে সে কথা জানান তাঁরা। মোবাইলে একই ‘মেসেজ’ ততক্ষণে আশঙ্কা ছড়িয়েছে স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় তাকা অভিভাবক মহলেও। এ বারের প্রশ্নপত্র হাতে নেওয়ার পর অবশ্য ধন্দ কাটে শিক্ষকদের। কিন্তু স্কুলের গেট বন্ধ থাকায় সেই খবর তখনই অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। ঘণ্টাখানেক পরে অবশ্য খবর পৌঁছয় অভিভাবকদের কাছেও। পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরনোর পর পায়েল খাতুন, রশিদা খাতুনরা জানায়— পরীক্ষার আগে ওই খবর তারা পায়নি। তা-ই নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিয়েছে সবাই। তাদের এক জনের কথায়, ‘‘যদি সত্যিই প্রশ্ন ফাঁস হত, তা হলে পরীক্ষা বাতিল হলে খব অসুবিধায় পড়তাম। ভাগ্যিস তেমন কিছু হয়নি।’’

রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। পরীক্ষা শেষ হতে তখনও এক ঘণ্টা বাকি। বাইরে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের জটলা। অনেকেই বললেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে। শুনছি পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। নতুন করে ফের পরীক্ষা হবে না তো?’’ মাড়গ্রাম থানার তেঁতুলিয়া গ্রামের প্রভাত সিমলান্দি, রামপুরহাট থানার বালিয়া গ্রামের আকবর আলি, মাড়গ্রাম বশোয়া গ্রামের বাসুদেব দাসের কথায়, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে অনেক পরীক্ষার্থীই মোবাইল ফোন দেখে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছিল। যখন জানলাম, ওই মেসেজ ঠিক নয়, তখন কিছুটা হলেও চিন্তা কাটল।’’

পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নফাঁসের কথা জেনে পর্ষদ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা আহ্বায়ক প্রবাল সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘ওই খবরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। কিন্তু বোর্ডের কাছ থেকে সঠিক খবর পেয়ে পরীক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যুক্ত সকলকে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি যে ভুয়ো তা জানিয়ে দেওয়া হয়।’’

নানুরের দাসকলগ্রামের গদাধর দাসবৈরাগ্য, কীর্ণাহারের প্রশান্ত পাত্র, ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিভাবকেরা বলেন, ‘‘প্রশ্ন ফাঁসের খবর শুনে উদ্বেগে ছিলাম। সত্যি তেমন হলে পরীক্ষা বাতিলও হতে পারত। তাতে ছেলেমেয়েগুলোর উপর অযথা মানসিক চাপ পড়ত।’’

লোকপাড়া হাইস্কুলের ছাত্র আদিত্য মুখোপাধ্যায়, কীর্ণাহার বালিকা বিদ্যালয়ের প্রমিতা পাত্র পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বলে, ‘‘খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রশ্ন ফাঁসের খবর যে একেবারেই মিথ্যা সেটা শুনে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Question set Whatsapp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE