Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে বিধায়ক

কালীপুজোর পর দিন থেকে একই উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হন নীলাবতীদেবী। স্থানীয় দুই চিকিৎসককে দেখানোর পরে দেবাশিসবাবুর জ্বর কিছুটা কমে।

ঘেরাটোপ: তখন সিউড়ি হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা। —নিজস্ব চিত্র।

ঘেরাটোপ: তখন সিউড়ি হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

ধূম জ্বর, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা এবং বমিভাব। এমনই উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সাঁইথিয়ার বিধায়ক নীলাবতী সাহা ও তাঁর স্বামী দেবাশিস সাহা। উপসর্গ অনেকটা ডেঙ্গি-আক্রান্তের মতো হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গি নির্ণায়ক রক্ত পরীক্ষা, ‘ম্যাক অ্যালাইজা টেস্ট’-এর জন্য উভয়ের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতাল। বিকেলেই আশঙ্কা সত্যি করে দু’জনের রক্তে অ্যালাইজা পজিটিভ ধরা পড়ে। পরে সন্ধ্যার দিকে দ্রুত প্লেটলেট কমতে থাকায় সাহা দম্পতিকে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘দু’জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক অসুস্থ থাকার পরে সাঁইথিয়া পুর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি পল্লির বাড়ি থেকে এ দিন দুপুরে সরাসরি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন তাঁরা। বিধায়কের স্বামী দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘কালীপুজোর ঠিক আগের দিন থেকে জ্বরে পড়ি আমি। ১০০-১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠে যায়। সঙ্গে বমিভাব ও মাথায় যন্ত্রণা।’’ কালীপুজোর পর দিন থেকে একই উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হন নীলাবতীদেবী। স্থানীয় দুই চিকিৎসককে দেখানোর পরে দেবাশিসবাবুর জ্বর কিছুটা কমে। কিন্তু, বিধায়কের জ্বর মঙ্গলবারেও ছিল ১০২ ডিগ্রি। অন্য উপসর্গগুলোও ছিল। এরপরই সাহা দম্পতি সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তাঁদের কলকাতার হাসপাতালে রেফার করার সিদ্ধান্ত নেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘সিউড়ি হাসপাতালে রক্ত থেকে আলাদা করে প্লেটলেট দেওয়ার উপায় নেই। অথচ ওদের দ্রুত প্লেটলেট কমছিল। তাই রেফার করা হয়েছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়েছিল জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে। অগস্ট মাস জুড়ে মশাবাহিত ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। অগস্টের ২৫ তারিখ জেলা জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শ’দুয়েক। মূল উদ্বেগ ছিল দুবরাজপুর পুরসভাকে ঘিরে। আক্রান্তের মধ্যে দুবরাজপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৪ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। ক্রমাগত প্রচার সত্বেও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৩৯২ জন। সেই তালিকায় রয়েছে সাঁইথিয়াও।

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বীরভূমে এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩৯২ জন। তার মধ্যে ম্যাক অ্যালাইজা টেস্টে পজিটিভ ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ৩৩ জন।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বর হলে সম্ভাব্য সব রকম সতর্কতা নেওয়া উচিত প্রত্যেকের। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। জরুরি মশার বংশ বৃদ্ধি রোধ করাও। বাড়ির চারপাশে কোথাও জল জমতে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রতিটি পুরসভার তরফে বাড়ি বাড়ি অভিযানও চলেছে। তবুও মশার বংশ ও রোগীর সংখ্যায় বৃদ্ধি হচ্ছেই।

তবে দেবাশিসবাবুদের কোথায় ডেঙ্গির মশা কামড়ালো তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, অক্টোবরের ১০ তারিখ তাঁরা বেনারসে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরেন ১৮ অক্টোবর। কালীপুজোর ঠিক আগেই কলকাতা হয়ে সাঁইথিয়া ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা শুনে বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘ওঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। তবে ডেঙ্গির মশা শুধু কলকাতা নয়, বীরভূমেও পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। রাজ্য সরকারের চাপে ডেঙ্গি উচ্চারণ না করতে পারলেও বাস্তব পরিস্থিতিকে যে অস্বীকার করা যায় না তার প্রমাণ তো ওঁরাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Suri সিউড়ি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE