বিচারপ্রার্থী: বোলপুরের টাউন লাইব্রেরিতে চলছে ভ্রাম্যমান আদালত। নিজস্ব চিত্র
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নানা অভিযোগের সুরাহার জন্য বোলপুর টাউন লাইব্রেরিতে ভ্রাম্যমান আদালত আয়োজিত হল। বীরভূম জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগ ও রাজ্য সরকারের প্রতিবন্ধকতা কমিশনারের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য কমিশনার (প্রতিবন্ধকতা) দেবব্রত চট্টরাজ, মহকুমাশাসক (বোলপুর) শম্পা হাজরা, জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায়, ডিডিআরসি এর সভাপতি সুশীলকুমার চৌধুরী, ডিসিপিও নিরুপম সিংহ, ওএসডি উমা সেন এবং অর্থোসিস্ট দেবাশিস ঘোষ। এ ছাড়াও ছিলেন লোহাপুর, নলহাটি, রামপুরহাট, ইলামবাজার, সিউড়ি থেকে আসা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি অথবা তাঁদের অভিভাবকেরা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্যা, অভিযোগের বিষয়গুলি তুলে ধরেন।
নলহাটির সুরেন মণ্ডল ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন। চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। একই সমস্যা ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ইলামবাজারের ঘুরিষা গ্রামের কান্ত সোরেনের। স্পেশ্যাল এডুকেশনের উপরে কোর্স করেও তিনি এখনও কোনও চাকরি পাননি। এমনকি কোনও ভাতা পর্যন্ত পান না। সিয়ানের চুমকি হাঁসদার প্রশ্ন, ‘‘চাকরির পরীক্ষায় অন্য শ্রেণিদের অনেকটা সংরক্ষণ রয়েছে। কিন্তু, প্রতিবন্ধীদের সংরক্ষণ এত কম কেন?’’ লোহাপুরের সাকিলা বিবি, রামপুরহাটের জাকিয়া বিবিদের সমস্যা অন্য রকম। তাঁদের ছেলেরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। প্রতি মাসে দু’হাজার টাকার ওষুধ লাগে। কেউ ঘুরছেন ছ’বছর ধরে, কেউ দু’বছর। এখনও পর্যন্ত ছেলেদের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাননি।
মুলুকের ঝুমা রায়, মৌমিতা দে সূত্রধর, স্নিগ্ধা ঘোষ অভিযোগ তুলেছেন অন্য জায়গায়। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকারি বা বেসরকারি যে বাস হোক না কেন, প্রতিবন্ধী সিটগুলিতে সাধারণ মানুষরা বসে থাকেন। বললেও ওঠেন না। অথচ প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসে দাঁড়িয়ে আসতে হয়।’’ স্নিগ্ধাদেবীর ছেলেকে স্কুলেও হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানান তিনি। মানসী রায়, শেখ রেজাউলদের মতো বিশেষ চাহিদা সম্পন্নের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নেই বলে ভাতা পাওয়া যায় না। ডাক্তারদের বহুবার বলেও তাঁরা ৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধী করে রেখে দিয়েছেন। তাই কোনও ভাতা পান না। ‘‘কোনও সুবিধাই যদি না পাব তা হলে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা ছাড়া সার্টিফিকেট দেওয়ার কি মানে হয়?’’ প্রশ্ন করলেন রেজাউল। ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে অনেকেরই। অনেক অভিভাবক চান ট্রেনিং দেওয়া হোক তাঁদের কিংবা স্কুলে। কেউ স্পেশ্যাল এডুকেটর নিয়োগের দাবি জানান।
সমস্ত অভিযোগ শুনেছেন রাজ্য কমিশনার (প্রতিবন্ধকতা) দেবব্রত চট্টরাজ। সমস্যার সমাধানের চেষ্টাও করেছেন। তিনি জানান, চাকরির ক্ষেত্রে খুব সম্প্রতি একটি নিয়ম আসতে চলেছে, যাতে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়ানো হবে। যাঁরা এখনও পর্যন্ত প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পাননি, তাঁরা যাতে তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট পান তার ব্যবস্থা করতে বলেন রামপুরহাট হাসপাতালের রেকর্ড-ইন-চার্জ নিরোদ সাহাকে। বাসের সিট পাওয়ার অভিযোগের ক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট বাসের নম্বর নিয়ে যদি আরটিও দফতরে জানানো হয়, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় ভাতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সব ব্লকে ভাতার পরিমাণ সমান থাকে না। তাই ভাতা দেওয়া সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে যাঁরা একটু হলেও সক্ষম, তাঁরা যদি ব্যবসা করার জন্য দরখাস্ত করেন এককালীন দশ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’’ এ ছাড়াও প্রতিটা ব্লকে স্পেশ্যাল এডুকেটর রয়েছেন। তাঁরা যাতে নিয়মিত হন, তার জন্য ওই এডুকেটরদের নিয়ে আলোচনায় বসা হবে বলে জানান মহকুমাশাসক শম্পা হাজরা। এ ছাড়াও চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতাল থেকে সুবিধা পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতাল যদি জবাব দিয়ে দেয় এবং বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করতে বলে তখন মুখ্যমন্ত্রী তহবিলে দরখাস্ত করলে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।
সামান্য প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট জোগাড় করতে যাঁদের ঘুরতে হত হাসপাতাল ও বিভিন্ন দফতরে, তাঁদের জন্য নতুন পদ্ধতি চালু করেছিল বীরভূম জেলা। ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর, বোলপুরের শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন ব্লক উন্নয়ন অফিসে বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ে হয়ে যাওয়া একটি অনুষ্ঠানে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর এই উদ্যোগ ‘অগ্রণী’র কথা জানা যায়। গত বছর ৩ ডিসেম্বর, প্রতিবন্ধী দিবসের দিনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশুবিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দফতর থেকে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের স্বশক্তিকরণের উদ্দেশে কর্মরত শ্রেষ্ঠ জেলার স্বীকৃতি স্বরূপ বীরভূম জেলাকে রাজ্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
রাজ্য কমিশনার (প্রতিবন্ধকতা) দেবব্রত চট্টরাজ বলেন, ‘‘অন্য ২২টি জেলার থেকে এ বিষয়ে বীরভূম একটু হলেও এগিয়ে। এরপরও যে সমস্যাগুলি ছিল, তার সমাধানের লক্ষ্যেই এই ভ্রাম্যমান আদালতের আয়োজন করা হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy