Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
নোটবন্দির বছর পার

পিওএস উঠেছে তাকে, জমছে ধুলো

গত নভেম্বরে নোটবন্দির পরে কেন্দ্রের স্লোগান ছিল ‘গো ডিজিটাল।’ কেন্দ্রের উৎসাহ এবং নগদের জোগানের অভাবে ডিজিটাল লেনদেনে জোর পড়ে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তো বটেই, ছোট-বড় দোকানদাররাও ডিজিটাল ওয়ালেট-এ লেনদেন করতে বাধ্য হচ্ছিলেন।

দয়াল সেনগুপ্ত
বীরভূম শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

কেউ সযন্তে তুলে রেখেছেন, কারও পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিনের গায়ে জমছে ধুলো!

গত নভেম্বরে নোটবন্দির পরে কেন্দ্রের স্লোগান ছিল ‘গো ডিজিটাল।’ কেন্দ্রের উৎসাহ এবং নগদের জোগানের অভাবে ডিজিটাল লেনদেনে জোর পড়ে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তো বটেই, ছোট-বড় দোকানদাররাও ডিজিটাল ওয়ালেট-এ লেনদেন করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে পিওএস মেশিন বসিয়ে লেনদেন করার দিকে ঝুঁকেছিল। ব্যতিক্রম ছিল না বীরভূমও। কিন্তু, নোটবন্দির এক বছর ঘুরলেও সত্যিই কী বেড়েছে ডিজিটাল লেনদেন?

জেলার অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নগদ টাকার জোগান বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনা চলছে নগদেই। কেউ মেশিন নিয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন। কেউ লিঙ্কের সমস্যা বা মেশিনের মান খারাপ থাকায় মেশিন খুলে রেখে দিয়েছেন। আবার অনেকের অভিযোগ, চেয়েও পাওয়া যায়নি পিওএস। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে এখন আগ্রহ হারিয়েছেন তাঁদের অনেকেই। ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এবং সংগঠনের নেতারা বলছেন, ‘‘এর জন্য প্রথম দায়ী যদি মফস্সলের মানুষের পুরানো অভ্যাসে ফেরত যাওয়া হয়। তবে দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই ব্যাঙ্কগুলির বিভিন্ন শর্ত এবং সহযোগিতার অভাব।’’

জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর বলছেন, ‘‘জেলায় কত পিওএস মেশিন বসেছে এই মুহূর্তে সংখ্যাটা বলতে না পারলেও পিওএস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে শুনিনি।’’

নোটবন্দির সময় বাজারে নগদের আকালে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতার নাভিঃশ্বাস উঠেছিল। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পিওএস মেশিন জরুরি মনে করে জেলার অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আবেদন করেছিলেন। জেলার তারাপীঠ এবং বোলপুরের মতো জায়গা, যেখানে বহু বাইরের মানুষ আসেন সেই সব জায়গা বাদ দিয়েও জেলা সদর সহ প্রতিটি পুর শহরেই বেশ কিছু ব্যবসায়ী পিওএস মেশিন লাগিয়েছিলেন। বছর ঘুরতেই তাঁদের অনেকে ভিন্ন মত পোষণ করছেন কেন?

বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ মনে করছেন, “বোলপুরে প্রচুর মানুষের আনাগোনা থাকায় লজ এবং বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পিওএস আগে থেকেই ছিল। নগদের জোগান কম হওয়ায় ডিজিটাল বেচাকেনায় উৎসাহী হয়ে আরও বেশ কিছু পিওএস মেশিন নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, লেনদেনের উপরে এক্সট্রা চার্জ ভাড়া গুনে লাভের অংশ কমে যাওয়ায় তাঁদের অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।’’ তাঁর মতে, শর্ত সহজ হলে ফের চাহিদা বাড়বে।

আবার যাঁরা পিওএস মেশিন পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই লিঙ্ক সমস্যায় তা তুলে রেখে দিয়েছেন। সিউড়ি সুপার মার্কেটের বস্ত্র ব্যবসায়ী সুনীল বসু এবং নগেন্দ্র ট্রিবলিওয়াল বলছেন, ‘‘লেনদেনের উপর চার্জ কাটে ব্যাঙ্ক। তা সত্বেও রেখেছিলাম। কিন্তু, প্রায়ই লিঙ্ক থাকছে না। ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেশ কয়েক মাস হল মেশিন খুলে রেখে দিয়েছি।” সিউড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কিসান পাল বলছেন, ‘‘এমনিতেই সিউড়ি জেলা সদর হলেও নোটবন্দির সময় প্রচুর পিওএস মেশিন বসেছে এমন নয়। কারণ কার্ডে লেনদেন করার লোকজন খুব বেশি নেই। তারপর ব্যাঙ্ক অসহযোগিতা করলে কী ভাবেই বা উৎসাহ পাবেন ব্যবসায়ীরা?’’

সিউড়ির সুনীলবাবুররা মেশিন নিয়েও ব্যবহার করছেন না। রামপুরহাটের এক পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তিনি বলছেন, ‘‘নোটবন্দির সময়ে পিওএস মেশিন চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু, ব্যাঙ্ক যোগাযোগই করেনি। তাই পেটিএম-এ লেনদেন করছি।’’

যদিও ক্রেতাদের মধ্যে কার্ডে বিল মেটানোর প্রবণতা গত এক বছরে অনেকটা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন পিওএস মেশিন ব্যবহারকারী বহু ব্যবসায়ী। দুবরাজপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী শামিম নওয়াজ বলছেন, ‘‘যুগের প্রয়োজনে পিওএস নিয়েছি। তবে কম হলেও কার্ডে লেনদেন চলছে।’’ নোটবন্দির আগে থেকেই পিওএস মেশিন ব্যবহার করেন তারাপীঠের এক হোটেল ব্যবসায়ী। বর্তমানে তাঁর মেশিন তিনটি। ওই ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘গত নভেম্বরের পর থেকে আধিকাংশ লেনদেন হয় কার্ড সোয়াইপ করে। অথবা অনলাইন। নগদে লেনদেন এখন হচ্ছে না বললেই চলে।’’

কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তারা মনে করছেন, কিছু অভাব-অভিযোগ থাকলেও কার্ড সোয়াইপ করে বিল মেটানোর প্রবণতা সাধারণ মানুষের যত বাড়বে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাঙ্কের শর্ত এবং পরিষেবা দু’টোই উন্নত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation POS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE