Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নাচের ফাঁদে হেলমেটহীন চালক আটক

হেলমেট ছাড়া মদ্যপ অবস্থায় মোটরবাইক চালানোই শুধু নয়, মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোও কী ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে, ছৌ নৃত্যের মাধ্যমে পথচলতি মানুষজনের কাছে তা তুলে ধরে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার চালাল ঝালদা পুলিশ।

প্রচারে: পথ নিরাপত্তা নিয়ে মোটরবাইক চালকদের সচেতন করতে নেমেছে ঝালদা থানার পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

প্রচারে: পথ নিরাপত্তা নিয়ে মোটরবাইক চালকদের সচেতন করতে নেমেছে ঝালদা থানার পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২০
Share: Save:

মদের ঠেকে বন্ধুর সঙ্গে গল্পে গল্পে সময় গড়িয়ে যাওয়ায় হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইকে স্টার্ট দিয়েছিলেন ছেলেটি। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে পাওয়া নতুন মোটরবাইক নিয়ে হু হু করে ছুটে যাচ্ছিলেন। অনেক অশান্তি করে মোটরবাইক মিলেছে। তাই হাসিমুখে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু কপাল খারাপ। হঠাৎ দুর্ঘটনায় পড়ে মারা গেলেন হেলমেটহীন সেই যুবক।

হেলমেট ছাড়া মদ্যপ অবস্থায় মোটরবাইক চালানোই শুধু নয়, মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোও কী ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে, ছৌ নৃত্যের মাধ্যমে পথচলতি মানুষজনের কাছে তা তুলে ধরে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার চালাল ঝালদা পুলিশ। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঝালদা-রাঁচী রোডের বীরসা মোড়ে ছোট্ট ম্যারাপ বেঁধে পুলিশের এই সচেতনতার কর্মসূচিতে ভিড় করেছিলেন অনেকেই। সেখানেই জরিমানার ফাঁদও পেতেছিল পুলিশ।

এক সঙ্গীকে নিয়ে মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন ঝালদার হুসেনডি এলাকার এক বাসিন্দা। দিনের বেলায় হঠাৎ ছৌনাচের আয়োজন কেন? কৌতুহলে উঁকি দিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঘিরে ধরেন পুলিশ কর্মীরা। ঝালদা থানার আইসি ত্রিগুণা রায়ের প্রশ্ন— ‘‘হেলমেট কোথায়?’’ তিনি জবাব দেন, ‘‘সঙ্গীর পায়ে আঘাত লেগেছে বলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাড়াহুড়োয় হেলমেট সঙ্গে নিতে পারিনি।’’ কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি পুলিশ কর্মীরা। শেষে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান তাঁরা। ওই যুবকের খেদোক্তি, ‘‘আমি বেশির ভাগ সময়েই হেলমেট পরি। এ দিন তাড়াহুড়োয় নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা শুনল কই!’’

তুলিন যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাগানডির এক বাসিন্দা। তাঁর মাথাতেও যথারীতি হেলমেট ছিল না। সকালের ঠান্ডা হাওয়ায় দিব্যি যাচ্ছিলেন। বীরসা মোড়ে ভিড় দেখে দূর থেকেই তিনি বুঝে যান হেলমেট না থাকায় ধরা পড়তে হবে। দ্রুত মোটরবাইক রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে টোটোয় চড়ে সোজা বাড়ি চলে যান। ওই যুবকের কথায়, ‘‘হেলমেট সঙ্গে ছিল না। দেখলাম জরিমানা দিতে হবে। তাই টোটো করে বাড়ি গিয়ে হেলমেট নিয়ে বেরোলাম। তারপরে আর কোনও অসুবিধা হয়নি।’’

মাকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ফিরছিলেন নুতনডি গ্রামের এক বাসিন্দা। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। আটকা পড়তে হল তাঁদেরও। আটকে থাকতে হল দীর্ঘক্ষণ। পরে অনুষ্ঠান শেষে ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘এ বার থেকে হেলমেট ছাড়া আর বেরোবোই না। কারণ মা বলেছেন হেলমেট নিয়েই যখন এত অশান্তি, তখন হেলমেট না পরলে বেরোতে দেবে না।’’

এ দিন জনপ্রতিনিধি থেকে পথচলতি সাধারণ মানুষ বা যাত্রীদের নিয়ে পথবিধি মেনে চলার শপথ গ্রহণও করায় পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ দিন দিনভর ঝালদায় পথ বিধি ভাঙায় মোট ৩০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। ছৌনাচের আসরের কাছ থেকে ১৫ জনের জরিমানা করা হয়েছে। কয়েক জনকে টানা দু’ঘণ্টা বসিয়েও রাখা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE